করোনাভাইরাস: বাতিল চিনা নাগরিক ও সেদেশ থেকে আসা বিদেশিদের ভিসা, হংকং-য়ে বিমান পরিষেবা স্থগিত এয়ার ইন্ডিয়ার
আগামী ৮ তারিখ থেকে হংকংগামী এয়ার ইন্ডিয়ার সব উড়ান বাতিল করা হচ্ছে বলে খবর কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রক সূত্রে।
নয়াদিল্লি: ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের হওয়ার খবর আসার পর এবার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে নড়েচড়ে বসল কেন্দ্র। বর্তমান পরিস্থিতিকে মাথায় রেখে মঙ্গলবার চিন থেকে ভারতে আসার সবকটি ভিসা বাতিল করে ভারত। এদিন ট্যুইটারে বেজিংস্থিত ভারতীয় দূতাবাসের তরফে এই কথা জানানো হয়। সেখানে বলা হয়েছে, যে সকল ব্যক্তি ভারতে যেতে আগ্রহী, তাঁদের অনুরোধ বেজিংয়ে ভারতীয় দূতাবাস বা সাংহাই ও গুয়াংঝৌয়ের ভারতীয় কনস্যুলেটে গিয়ে নতুন করে ভিসার আবেদন করতে। যাঁরা ইতিমধ্যেই ভারতে রয়েছেন এবং ১৫ জানুয়ারির পর চিনে গিয়েছিলেন, তাঁদের অনুরোধ ভারত সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। এর আগে, চিনের ই-ভিসা সাময়িক বাতিল করেছে কেন্দ্র। এদিকে, আগামী ৮ তারিখ থেকে হংকংগামী এয়ার ইন্ডিয়ার সব উড়ান বাতিল করা হচ্ছে বলে খবর কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রক সূত্রে। সম্প্রতি, হংকং-য়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের মৃত্যুর খবর মিলেছে। তারপরই, সব উড়ান বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর আগে, ভারত ও চিনের মধ্যে তিনটি উড়ান বাতিল করেছে ইন্ডিগো। দিল্লি-সাংহাই উড়ান বাতিল করেছিল এয়ার ইন্ডিয়া। গতকালই, করোনাভাইরাস নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সেখানে পৌরহিত্য করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পি কে মিশ্র। বৈঠকের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বিশেষ সচিব সঞ্জীব কুমার বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা পিকে সিনহা, ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবা, চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াত এবং বিভিন্ন মন্ত্রকের সচিব অংশ নিয়েছিলেন আলোচনায়। জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশেই করোনাভাইরাস মোকাবিলা করতে মন্ত্রীগোষ্ঠী গঠিত হয়েছে। এই গোষ্ঠীর কাজ হবে করোনাভাইরাস মোকাবিলা ও রোধ সম্পর্কিত প্রস্তুতি, পর্যালোচনা এবং পর্যবেক্ষণ। ওই মন্ত্রীগোষ্ঠীর সদস্য হলেন-- স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন, অসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী, বিদেশমন্ত্রী এসএস জয়শঙ্কর, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিষাণ রেড্ডি, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী অশ্বিনী কুমার চৌবে এবং জাহাজ প্রতিমন্ত্রী লাল মাণ্ডব্য। বৈঠকে ভারতে করোনাভাইরাসের বর্তমান পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হয়। কেরলে তিন আক্রান্তের সম্পর্কে বিশদ তথ্য পর্যালোচনা হয়। দেশে এই ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া রোধে কী কী বদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং কী কী হচ্ছে, তা নিয়ে আলোচনা হয়। মন্ত্রীগোষ্ঠীকে বলা হয়, দিল্লিতে ইন্দা-তিব্বতীয় সীমান্ত পুলিশ পরিচালিত দুটি শিবির চলছে। এছাড়া, গুরুগ্রামের মানেসরে ভারতীয় সেনা পরিচালিত একটি শিবিরও চলছে। সেখানে চিনের উহান থেকে ফেরত আসা ভারতীয়দের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এই দুই শিবিরে ৬৪৫ জনকে রাখা হয়েছে। সচিব সঞ্জীব কুমার বলেন, বিদেশ থেকে আসা মোট ৫৯৩ জন যাত্রীকে পরীক্ষা করা হয়েছে। পাশাপাশি, দেশের ২১টি বিমানবন্দরে ৭২ হাজার ৩৫৩ জনকে থার্মাল স্ক্রিনিং করা হয়েছে। মোট ২,৮১৫টি যাত্রীবাহী বিমানের ওপর নজর রাখা হচ্ছে। ৩৩৮ জনকে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে ৩৩৫ জনকে সম্পূর্ণ নিরাপদ। এখনও পর্যন্ত কেরলে তিনজন ব্যক্তির দেহে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রমাণ মিলেছে। ইতিমধ্যেই কেরল সরকার করোনাকে বিপর্যয় আখ্যা দিয়েছে। পিনারাই সরকার জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ২,২৩৯ মানুষ, যাঁরা সম্প্রতি চিন থেকে ফেরত এসেছেন, তাঁদের পরীক্ষা করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে ২,১৫৫ জনকে হোম কোয়ারিন্টিন এবং ৮৪ জনকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। কেরল ছাড়াও পুণে, মুম্বই, হায়দরাবাদ, দিল্লি সহ একাধিক শহরে আইসোলেশন ইউনিট খোলা হয়েছে। প্রসঙ্গত, এখনও পর্যন্ত চিনে ৪২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে।