‘পড়ার টাকা নেই, বাধ্য হয়ে ফুচকা বিক্রি করছি’, স্বপ্নভঙ্গের কান্না টেস্টে ৯০ শতাংশ নম্বর পাওয়া কৃতীর
উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়েই বাবার ফুচকা বিক্রিতে হাত লাগাল ছেলেও।
উত্তর ২৪ পরগনা: ক্লাস ওয়ান থেকে ফাইভ, প্রথম হওয়াই ছিল সন্দীপন দাসের অভ্যেস। মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষাতেও সে ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। বড় হয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া স্বপ্ন বুনছে শ্যামনগরের এই কৃতী। মাধ্যমিক শেষ হতে না হতেই বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনাও শুরু করে দিয়েছিল সন্দীপন। অভাব অনটন সত্ত্বেও ছেলের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বাবা। তবে স্বপ্নের পথ চলায় ব্যাঘাত ঘটাল করোনা মহামারী। ২২ মার্চ থেকে টানা আড়াই মাস লকডাউন। বাড়ি থেকে এক চাকাও গড়ায়নি অটো। আর যখন লকডাউন খুলল, তখন একদিন অন্তর একদিন অটো চালিয়ে তেমন ভাবে রোজগার হচ্ছে না। এই অবস্থায় সাইকেলে করে ফুচকা বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন সন্দীপনের বাবা। রোদ, ঝড়ঝঞ্জার মধ্যেই পেটের দায়ে ফুচকা বিক্রি শুরু করেন তিনি। বাবার এই অসহনীয় কষ্টে চোখ ভিজে যায় সন্দীপনের। শেষে কোনও উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়েই বাবার ফুচকা বিক্রিতে হাত লাগাল ছেলেও।
পড়ুন: স্ত্রী সন্তানসম্ভবা, ভালবাসার টানে কেরল থেকে কালনা ২৫০০ কিমি বাইক চালিয়ে ফিরলেন স্বামী
শ্যামনগর কান্তিচন্দ্র হাইস্কুলের ছাত্র সন্দীপনও বেরিয়ে পড়ছে ফুচকে নিয়ে। টুকরি বোঝাই ফুচকা। পাড়ায় পাড়ায় হাঁক দিচ্ছে সন্দীপন। বিক্রি হচ্ছে ঠিকই, তবে সেভাবে লাভ নেই। এতে যা রোজগার হচ্ছে, তাতে কোনও মতে সংসার চলে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে যে নিজের স্বপ্নপূরণ কোনওদিনই হবে না, তা ভেবেই চোখে জল আসে কৃতী ছাত্রের।
এবিপি আনন্দকে এই কৃতী ছাত্র জানিয়েছে, “আইআইটি-তে পড়ার স্বপ্ন। তবে বুঝতে পারছি আমার স্বপ্ন রোজ একটু একটু করে ভাঙছে। আমার পড়ার খুব ইচ্ছা। এখন মাস্টারদের বেতন দিতে পারছি না। তাই বাধ্য হয়েই ফুচকা বিক্রি করছি।” একথা বলতে বলতেই কেঁদে ফেলে সে।
(সাইকেল চালিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ফুচকা বিক্রি করছে সন্দীপন দাস)অসহায় অবস্থা সন্দীপনের বাবারও। নিরুপায় পিতা জানান, “আমার সামর্থ নেই। যমজ সন্তান, পরিবার চালাতেই কষ্ট হচ্ছে। ছেলেকে বলেছি, আমি কীভাবে আইআইটি-তে পড়াব?” সন্দীপনের মা-ও চান ছেলে বড় হয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হোক। তবে করোনার যে কালো মেঘ তাঁদের পরিবারের ওপর ঘনিয়ে রয়েছে, তারপর ছেলের স্বপ্নপূরণ কীভাবে সম্ভব? সংশয়! শুধুই সংশয়!