এক্সপ্লোর

Rabindra Jayanti 2021 : '...মা মনে করতেন, ছেলে মাঝে মাঝে পড়া কামাই করলে এতই কি লোকসান'

বিশ্বকবির একশো ষাটতম জন্মদিনে তাঁরই নানা স্মৃতিকথা স্মরণ, কখনও তাঁর লেখা ধার করে। কখনও তাঁর পুত্র রথীন্দ্রনাথের কলম থেকে।

কলকাতা : কবি লিখেছেন, 'আমি জন্ম নিয়েছিলুম সেকেলে কলকাতায়। শহরে শ্যাকরাগাড়ি ছুটছে তখন ছড়ছড় করে ধুলো উড়িয়ে, দড়ির চাবুক পড়ছে হাড়-বের করা ঘোড়ার পিঠে। না ছিল ট্রাম, না ছিল বাস, না ছিল মোটরগাড়ি...' । কবির সে কলকাতার সঙ্গে আজকের অতি-ব্যস্ত শহরের ফারাক অনেক। পালটে যাচ্ছে কি ছেলেবেলাও ? গান শুনিয়ে নতুন গাঁয়ে চলে যাওয়ার ইচ্ছে কি আজকালকার ছেলেবেলার মনে এসে বাসা বাঁধে ? স্কুলের ছুটি শেষে ছাদের গা ঘেঁষে নেমে আসা মেঘ কজনই বা দেখতে চায় ? প্রতিযোগিতার ইঁদুরদৌড়ে ক্লান্ত, এই অশান্ত সময়ে কার্যত গৃহবন্দী ছেলেবেলা দেখলে কবিগুরু কী বলতেন, কী লিখতেন, জানতে বড় ইচ্ছে। এ প্রসঙ্গ দূরে সরিয়ে রেখে বরং ডুব দেওয়া যাক কবির ছোটবেলায়, মাতৃস্মৃতিতে, কবিজীবনের অন্যান্য টুকরো কথায়। যা অনেকেরই জানা। 

ছেলেবেলা
কবিরই কলমে স্নিগ্ধ তাঁর ছেলেবেলার স্মৃতি। কত স্মৃতিই না ভিড় করে এসেছে তাঁর কলম বেয়ে। প্যারীদাসীর তরিতরকারি আনা থেকে দুখন বেহারার গঙ্গার জল বয়ে দিয়ে যাওয়া। কৈলাস মুখুজ্জে, কানা পালোয়ান, মুকুন্দলাল দারোয়ান, ব্রজেশ্বরের মতো কতশত চরিত্র আজও যেন জীবন্ত হয়ে ভেসে ওঠে চোখের সামনে। কবির লেখায় উঠে এসেছে তাঁর ছোটবেলার পড়াশোনা, খাওয়াদাওয়ার কথা। আর ছোটবেলা যখন, মা তো তাতে জড়িুয়ে থাকবেন ওতপ্রোত। তাই লেখায় উঠে এসেছে তাঁর মায়ের কথাও। সারদা দেবীকে নিয়ে খুব বিস্তারিত কিছু না লিখলেও যেটুকু স্মৃতিচারণ কবি করেছেন তাতেই গাঢ় মাতৃস্নেহ প্রকট হয়ে ওঠে। কবি লিখেছেন, ' ইস্কুল পালাবার ঝোঁক যখন হয়রান করে দিত, তখনও শরীরে কোনও রকম জুলুমের জোরেও ব্যামো ঘটাতে পারতুম না। জুতো জলে ভিজিয়ে বেড়ালুম সারাদিন, সর্দি হল না। কার্তিক মাসে খোলা ছাদে শুয়েছি, চুল জামা গেছে ভিজে, গলার মধ্যে একটু খুসখুসানি কাশিরও সাড়া পাওয়া যায়নি। আর পেট কামড়ানি বলে ভিতরে ভিতরে বদহজমের যে একটা তাগিদ পাওয়া যায় সেটা বুঝতে পাইনি পেটে, কেবল দরকার মতো মুখে জানিয়েছি মায়ের কাছে। শুনে মা মনে মনে হাসতেন, একটুও ভাবনা করতেন বলে মনে হয়নি। তবু চাকরকে ডেকে বলে দিতেন, 'আচ্ছা যা, মাস্টারকে জানিয়ে দে, আজ আর পড়াতে হবে না।' আমাদের সেকেলে মা মনে করতেন, ছেলে মাঝে মাঝে পড়া কামাই করলে এতই কি লোকসান।' 

রাতে ভূতের ভয় থেকে স্বস্তি পেতে ভরসা ছিল মায়ের ঘর। খুড়িকে নিয়ে মায়ের তাস খেলা ভেঙে যেত ভয়ার্ত কবির আচমকা উপস্থিতিতে। মায়ের কাছ থেকে অনুরোধ যেত খুড়ির কাছে। মায়ের খুড়ি, সম্পর্কে দিদিমা তখন গল্প বলার আসরে। দৈত্যপুরী থেকে রাজকন্যা। রাত বাড়ত। বিছানায় গভীর হয়ে নেমে আসত ঘুম। 

জীবনস্মৃতি-মৃত্যুশোক
ছেলেবেলা থেকে একদম জীবনস্মৃতিতে। মা চলে যাওয়ার স্মৃতি। কবি লিখেছেন, মা যখন তাঁদের ছেড়ে চলে যান, তখন তাঁর বয়স কম। মা  যে অনেকদিন ধরেই ভুগছিলেন, জীবনসংকটে তা তিনি বুঝতে পারেননি। অসুস্থ অবস্থায় অন্তঃপুরের তিনতলায় থাকতেন। সেই নিদারুণ দুঃখের দিনের স্মৃতিকথায় কবি লিখেছেন- ' যে রাত্রিতে তাঁহার মৃত্যু হয়, আমরা তখন ঘুমাইতেছিলাম, তখন কত রাত্রি জানি না, একজন পুরাতন দাসী আমাদের ঘরে ছুটিয়া আসিয়া চিৎকার করিয়া কাঁদিয়া উঠিল, ওরে তোদের কী সর্বনাশ হল রে!' রাতে মনে গুরুতর আঘাত লাগা এড়াতে বউঠাকুরানি তাকে ঘর থেকে টেনে বের করে নিয়ে যান বলে লিখেছেন কবি। সকালে উঠে মায়ের মৃত্যুর খবরে তার অর্থ সম্পূর্ণ বুঝতে পারেননি। খাটের উপর সুসজ্জিত মায়ের দেহ দেখার পর তেমন বিচলিত মনে হয়নি। তবে তারপর ! কবি লিখেছেন,' কেবল যখন তাঁহার দেহ বহন করিয়া বাড়ির সদর দরজার বাহিরে লইয়া গেল এবং আমরা তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ শ্মশানে চলিলাম তখনই শোকের সমস্ত ঝড় যেন একেবারে এক দমকায় আসিয়া মনের ভিতরটাতে এই একটা হাহাকার তুলিয়া দিল যে, এই বাড়ির এই দরজা দিয়া মা আর- একদিনও তাঁহার নিজের এই চিরজীবনের ঘরকরনার মধ্যে আপনার আসনটিতে আসিয়া বসিবেন না। বেলা হইল। শ্মশান হইতে ফিরিয়া আসিলাম;গলির মোড়ে আসিয়া তেতালায় পিতার ঘরের দিকে চাহিয়া দেখিলাম - তিনি তখনো তাঁহার ঘরের সম্মুখের বারান্দায় স্তব্ধ হইয়া উপাসনায় বসিয়া আছেন। '  

মা যে কী, তাঁর অভাব যে কবি বড়ো হলেও ভীষণমাত্রায় অনুভব করেছেন, তা লিখে গিয়েছেন। বেলফুলের কুঁড়ি কপালে বুলিয়ে মায়ের আঙুলের স্পর্শ অনুভূত হত।  ' যে স্পর্শ সেই সুন্দর আঙুলের আগায় ছিল সেই স্পর্শই প্রতিদিন এই বেলফুলগুলির মধ্যে নির্মল হইয়া ফুটিয়া উঠিতেছে, জগতে তাহার আর অন্ত নাই, তা আমরা ভুলিই আর মনে রাখি ।' মা দীর্ঘদিন ছিলেন তাঁর কাছে। কিন্তু মা- কে নিয়ে তাঁর নানা লেখা আজ হয়ে উঠেছে সর্বজনীন।  


Rabindra Jayanti 2021 : '...মা মনে করতেন, ছেলে মাঝে মাঝে পড়া কামাই করলে এতই কি লোকসান

পুত্রের চোখে

পদ্মাবোট
পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবি-পিতাকে কেন্দ্র করে অনেককিছু লিখে গিয়েছেন। তাঁর মধ্যে একটি পদ্মাবোট নিয়ে। এই বোটটির নামকরণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজে। পদ্মানদী ছিল প্রিয়, তাই নাম দিয়েছিলেন পদ্মাবোট। এই বোটে থাকতে অত্যন্ত ভালোবাসতেন কবি। বাড়িতে থাকার থেকেও বেশি ভালোবাসতেন বোটে থাকতে। হয়তো তা নির্জনতার কারণে। ভাবতে পারতেন, লিখতে পারতেন । ঘুরে বেড়াতেন। রথীন্দ্রনাথ লিখছেন, সম্পূর্ণ নির্জনতা চাইলে শিলাইদহের কর্মচারীদের কবি আদেশ দিতেন, কেউ যেন কাছে না যায়। এই প্রসঙ্গে ছোটবেলার একটি স্মৃতি শেয়ার করেছেন রথীন্দ্রনাথ। একদিন সন্ধে নাগাদ বোটে দুটি চেয়ারে কবির সঙ্গে বসে আছেন তিনি। চারদিক নিস্তব্ধ।  হঠাৎ রথীন্দ্রনাথ শুনতে পান জলে কিছু একটা ফেলে দেওয়ার শব্দ। দেখেন, কবির পা থেকে অতি প্রিয় কটকি চটির একটি পাটি জলে পড়ে গিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ঝপাং করে আরেকটি শব্দ। কবি ঝাঁপ দিয়েছেন জলে। ভেসে গিয়েছে চটি। সাঁতার কেটে সেটিকে ধরে হাতে করে তুলে নিয়ে আসেন বোটে। তৃপ্তির হাসি মুখে। বাবার আত্মভোলা ভাবের কথাও লেখায় উল্লেখ করেছেন রথীন্দ্রনাথ। 

পঁচিশে বৈশাখ, বাইশে শ্রাবণ। প্রতিবার বাঙালির এই দুই চিরন্তন দিন প্রত্যেককে ছোঁয়া দিয়ে যায়। মনে করায় গৌরব। কবিস্মৃতিতে ভরে ওঠে সমৃদ্ধ এক জাতি। আজ একশো ষাটতম জন্মদিনে শ্রদ্ধা, কবিগুরু। 

 

ঋণ : ছেলেবেলা, জীবনস্মৃতি, পিতৃস্মৃতি (রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর), On The Edges of Time (Rathindranath Tagore)

আরও দেখুন
Advertisement
Advertisement
Advertisement

সেরা শিরোনাম

Team India Flight: ঘরে ফেরার সময়েও নজির! বিশেষ রেকর্ড গড়ল রোহিত-বিরাটদের বিমানও
ঘরে ফেরার সময়েও নজির! বিশেষ রেকর্ড গড়ল রোহিত-বিরাটদের বিমানও
Hemant Soren: ফের ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত, শপথ নিয়েই ভোটবার্তা, চম্পাই-অস্ত্রে শান বিজেপি-র
ফের ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত, শপথ নিয়েই ভোটবার্তা, চম্পাই-অস্ত্রে শান বিজেপি-র
Narendra Modi in Space: মহাকাশ অভিযানে যাবেন মোদি! আশাবাদী ISRO প্রধান, কংগ্রেস বলল...
মহাকাশ অভিযানে যাবেন মোদি! আশাবাদী ISRO প্রধান, কংগ্রেস বলল...
Mamata Banerjee: এককালীন অবসরভাতা বেড়ে ৫ লক্ষ, প্যারা টিচার, আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সুখবর মমতার
এককালীন অবসরভাতা বেড়ে ৫ লক্ষ, প্যারা টিচার, আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সুখবর মমতার
Advertisement
ABP Premium

ভিডিও

Kolkata Municipality: মুখ্য়মন্ত্রীর বাড়ির কাছে সরকারি সম্পত্তি দখলমুক্ত করল কলকাতা পুরসভা। ABP Ananda LiveDengue In Bengal: বর্ষা আসতেই রাজ্য়ে ফিরেছে ডেঙ্গির ভয়! ABP Ananda LivePetrol Density: গাড়িতে তেল ভরার সময় কোন কোন বিষয়ে নজর রাখা দরকার? না রাখলে কী ক্ষতি হতে পারে?Bhupatinagar Incident: ভূপতিনগর বিস্ফোরণকাণ্ডে প্রথম চার্জশিটেই বিস্ফোরক দাবি NIA-র! ABP Ananda Live

ফটো গ্যালারি

ব্যক্তিগত কর্নার

সেরা প্রতিবেদন
সেরা রিল
Team India Flight: ঘরে ফেরার সময়েও নজির! বিশেষ রেকর্ড গড়ল রোহিত-বিরাটদের বিমানও
ঘরে ফেরার সময়েও নজির! বিশেষ রেকর্ড গড়ল রোহিত-বিরাটদের বিমানও
Hemant Soren: ফের ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত, শপথ নিয়েই ভোটবার্তা, চম্পাই-অস্ত্রে শান বিজেপি-র
ফের ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত, শপথ নিয়েই ভোটবার্তা, চম্পাই-অস্ত্রে শান বিজেপি-র
Narendra Modi in Space: মহাকাশ অভিযানে যাবেন মোদি! আশাবাদী ISRO প্রধান, কংগ্রেস বলল...
মহাকাশ অভিযানে যাবেন মোদি! আশাবাদী ISRO প্রধান, কংগ্রেস বলল...
Mamata Banerjee: এককালীন অবসরভাতা বেড়ে ৫ লক্ষ, প্যারা টিচার, আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সুখবর মমতার
এককালীন অবসরভাতা বেড়ে ৫ লক্ষ, প্যারা টিচার, আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সুখবর মমতার
West Bengal Assembly: আমাদের দুর্বল ভাবা ভুল', রাজ্যপালকে নিশানা বিমানের, শপথ জটিলতার মধ্যে কাল বিশেষ অধিবেশন
আমাদের দুর্বল ভাবা ভুল', রাজ্যপালকে নিশানা বিমানের, শপথ জটিলতার মধ্যে কাল বিশেষ অধিবেশন
Bihar Bridge Collapse: ধসে নেমে গেল মাঝের অংশ, নদীতে বসে গেল থাম, বিহারে ফের ভাঙল সেতু, ১৭ দিনে ১২টি
ধসে নেমে গেল মাঝের অংশ, নদীতে বসে গেল থাম, বিহারে ফের ভাঙল সেতু, ১৭ দিনে ১২টি
Brain Eating Amoeba: মস্তিষ্ক খেকো অ্যামিবার সংক্রমণ, পুকুরে স্নান করে চরম পরিণতি কিশোরের
মস্তিষ্ক খেকো অ্যামিবার সংক্রমণ, পুকুরে স্নান করে চরম পরিণতি কিশোরের
Team India Victory Parade Live: বৃষ্টি ও ট্রাফিকের জন্যই পিছিয়ে যাচ্ছে প্যারেডের সময়, এখনও বিমানবন্দরেই রোহিতরা
বৃষ্টি ও ট্রাফিকের জন্যই পিছিয়ে যাচ্ছে প্যারেডের সময়, এখনও বিমানবন্দরেই রোহিতরা
Embed widget