কোভিড-১৯ চিকিৎসা: সাসপেনসন প্রত্যাহার করে ফের হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগে সায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার
হু-র এইচসিকিউ ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত ছিল না আইসিএমআর
নয়াদিল্লি: কোভিড-১৯ চিকিৎসায় পরীক্ষামূলক ওষুধের প্রয়োগ হিসেবে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের (এইচসিকিউ) ক্লিনিকাল ট্রায়াল সাসপেন্ড করার এক সপ্তাহ পরই পিছু হঠে পুনরায় চালু করার সুপারিশ করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। এদিন হু জানিয়েছে, এইচসিকিউ-এর ব্যবহার সম্পর্কিত সুরক্ষা তথ্য খতিয়ে দেখেন বিশেষজ্ঞরা। তারপরই সাসপেনশন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
যখন প্রতিদিনই সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছে, তখন বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন কতদিনে আসবে? এই পরিস্থিতিতে ফের একবার ভরসা ফিরল হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনে। নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসে ভারতের পথেই হাঁটল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চ বা আইসিএমআরের পথেই হেঁটে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষণা করেছে, করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় ফের হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু করা যাবে।
করোনা-পর্বের শুরু থেকেই নোভেল করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের পক্ষে জোরাল সওয়াল করে এসেছে আইসিএমআর। তারা জানায়, করোনা-চিকিৎসায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার করে কিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল মিলেছে।
এরপর ভারত থেকে এই হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন পেতেই মরিয়া ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারত এই ওষুধ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় তিনি হুমকি পর্যন্ত দিয়ে বসেন।
ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বায়োমেডিক্যাল অ্যাডভান্সড রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি-র ডিরেক্টর রিক ব্রাইট-কে পদচ্যুত করে ট্রাম্প প্রশাসন।
কিন্তু, সম্প্রতি মেডিক্যাল জার্নাল দ্য ল্যানসেট পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রের উপর ভিত্তি করে গত ২৫ মে 'হু'-এর প্রধান দাবি করেন, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ওষুধ প্রয়োগে মৃত্যুর সম্ভাবনা বাড়ছে।
তাই যতদিন না সুরক্ষার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে, ততদিন করোনার কোনও চিকিৎসা পদ্ধতিতে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার করা যাবে না। পাশাপাশি হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের নিয়ে গবেষণাও বন্ধ করে দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
কিন্তু, হু-র এইচসিকিউ ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত ছিল না ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ বা আইসিএমআর। তারা জানিয়ে দেয়, ভারতে ওই ওষুধের ব্যবহার চালু থাকবে।
কারণ হিসেবে আইসিএমআর জানায়, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের সেই অর্থে কোনও ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। ভারতে করোনা-প্রতিরোধক হিসেবে ওই ওষুধের ব্যবহার চালু থাকবে। এতে ভয়ের কিছু নেই। শুধু খালি পেটে ওষুধটি খাওয়া চলবে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে গবেষণাপত্রের ভিত্তিতে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দেয়, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন শতাধিক নামী বিজ্ঞানী ও চিকিৎসক।
বিতর্কিত গবেষণাপত্রটি কীসের ভিত্তিতে ছাপা হল, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস মিলেছে মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেট-এর পক্ষ থেকেও।
এর মধ্যেই সম্প্রতি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চ বা আইসিএমআর একটি সমীক্ষা রিপোর্ট পেশ করে। তাতে বলা হয়,সংক্রমণের ভয় আছে এমন এলাকায় কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীরা, যাঁরা যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন এবং ৪ বা তার বেশি ডোজে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার করেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল মিলেছে। সংক্রমণের ভয় কমেছে অনেকাংশে।
আইসিএমআর-এর সাম্প্রতিকতম এই রিপোর্টের প্রকাশিত হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নিয়ে পুরনো অবস্থান থেকে সরে এল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বরং ভারতের পথে হেঁটেই আবার এই ওষুধ ব্যবহারে ছাড়পত্র দিল তারা। যা সঠিক পদক্ষেপ বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
তবে কি আগামী দিনে করোনা মোকাবিলায় গেম চেঞ্জার হিসেবে উঠে আসবে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অবস্থান বদলের পর সেই আশার কিরণ আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল।