Digital Arrest : কী কাণ্ড ! 'ডিজিটাল অ্যারেস্ট' বর্ধমানের 'সাধুবাবা', তারপর ঝটকা খেল প্রতারকই !
মুম্বই পুলিশের নাম করে পুলিশের পোশাক পরে একটি ভিডিও কল আসে 'সাধুবাবার' কাছে। বলা হয়, তাঁর বিরুদ্ধে ১৭ টি মামলা আছে ।
কমলকৃষ্ণ দে, পূর্ব বর্ধমান : ডিজিট্যাল অ্যারেস্ট ! মানুষকে সর্বস্বান্ত করার নিত্যনতুন ফাঁদ পাতছে প্রতারকরা। ইতিমধ্যেই বহু মানুষ সব হারিয়ে কপর্দকশূন্য হয়েছে আর্থিক প্রতারকদের জালে পড়ে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীও তাঁর 'মন কি বাত'-এ ডিজিট্যাল অ্যারেস্ট নিয়ে সতর্ক করেছিলেন দেশেরে মানুষকে। তারপরেই একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে। ইদানিং ফোনেও লাইন কানেক্ট করার আগে সাবধানবাণী শোনানো হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে । তারপরও সক্রিয় প্রতারকরা। কিন্তু এবার ডিজিট্যাল অ্যারেস্ট করেও জাল গোটাল জালিয়াতরা। ঘটনাটা বর্ধমানের।
দেখা গিয়েছে, বেশিরভাগ সময় এইসব প্রতারকদের টার্গেট হয় বয়স্ক মানুষরা। এক্ষেত্রেও করা হয়েছিল ঠিক তাই। বর্ধমানের এক সাধুকে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করার মতলব আঁটে প্রতারকরা। ভিডিও কলও করা হয়। তারপরই ঘটল সেই মজার কাণ্ড !
মুম্বই পুলিশের নাম করে পুলিশের পোশাক পরে একটি ভিডিও কল আসে 'সাধুবাবার' কাছে। বলা হয়, তাঁর বিরুদ্ধে ১৭ টি মামলা আছে । তারপর জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে প্রতারকরা। তাদের কথার চালে ফাঁসানোর চেষ্টা করতে থাকে। তারপর যখন প্রতারকরা ভাবতে শুরু করেছে, তাদের প্রচেষ্টা সফল হয়েই এসেছে, সেই সময়ই গুগলি খেল তারা। সাধুবাবা জানালেন, 'আমার তো অ্যাকাউন্টই নেই, দানধ্যানে চলে' ! ব্যাস্ ! খেয়ালি পোলাও রাঁধা বন্ধ হয়ে যায় জালিয়াতদের।
বর্ধমানের পালিতপুরে রয়েছে তিব্বতী বাবার আশ্রম। সেখানেই সন্ন্যাসীজীবন কাটান অশোক চক্রবর্তী। সাধারণরত তাঁর কাছে কোনও ফোন এলে তিনি 'ওম, নমঃ শিবায়, বাবা তোমার মঙ্গল হোক।' বলেন। ওপার থেকে হয়ত কোনও ভক্ত প্রণাম জানান। কিন্তু গত মঙ্গলবার তেমনটা হয়নি। অশোক চক্রবর্তীর দাবি, তিনিএদিন ফোন তুলতেই একটু ভারী গলায় একজন বলেন, 'আপনার নামে মুম্বইয়ের একটি থানায় ১৭টি কেস রয়েছে। আগামী দু'ঘণ্টা পর থেকে আপনার ফোন বন্ধ হয়ে যাবে।'
এমন কথা শুনে সাধুবাবার তো মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম। কিছুটা স্তম্ভিত হয়ে তিনি বলেন, 'বাবা তুমি কে? আমি কোনও দিন কারও ক্ষতি করিনি। কোনও অন্যায় কাজের সঙ্গেও যুক্ত হইনি। আমার নামে কী করে এতগুলি কেস হল?' তখনই প্রতারকরা সাধুবাবার কাছে ভিডিও কলের অনুমতি নিয়ে ভিডিও কল করেন। ভিডিও কলে দেখা যায় একজন পুলিশের পোশাক পরে বসে আছে। এরপর অফিসার সুলভ আচরণ ভঙ্গিমা করে ওপার থেকে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, 'আপনার কতগুলি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে? কত সম্পত্তি রয়েছে? যে ঘরে থাকেন সেটা ঘুরিয়ে দেখান। ' তার কথা মতো তিনি চারদিক ঘুরিয়ে দেখাতে থাকেন। হাঁটতে হাঁটতে বলেন, 'আমার একটাও অ্যাকাউন্ট নেই। কোনও সম্পত্তি নেই। তবে খাবার অভাব হয় না। আশ্রমে আসা ভক্তরা সহযোগিতা করেন।'
এই কথা শুনে নিজেই কিছুটা হতভম্ব হয়ে যায় প্রতারক। তারা বুঝতে পারে সাধুর থেকে কিছুই মিলবে না। তারপরেই সে বলতে থাকে, 'ঠিক আছে।আপনাকে কিছু করতে হবে না। ' এরপরই সাধু বলেন, 'তোমার শুভবুদ্ধির উদয় হোক'। তারপর আর ফোন আসেনি।
পরে সাধুর মোবাইল থেকে সেই কলে নম্বরে ঘুরিয়ে একাধিকবার ফোন করা হলেও সেই ফোন আর রিসিভ করেনি প্রতারকরা। যদিও এ বিষয়ে সাধুর তরফে বর্ধমান থানায় কেনো অভিযোগ দায়ের হয় নি।
আরও পড়ুন :
গঙ্গাসাগরে মকরস্নানে সমাগম কপিল মুনির আশ্রম ঘিরেই, কে এই কপিলমুনি?