CDS Anil Chauhan: ‘যুদ্ধ ও রাজনীতি পাশাপাশি চলছিল, ভারতকে ১০০০ বার আঘাত করতে চায় পাকিস্তান’, Operation Sindoor নিয়ে বললেন CDS
Operation Sindoor: ‘টেস্ট ক্রিকেটে উইকেট, বল দেখে না কেউ’, Operation Sindoor-এ ক্ষয়ক্ষতির প্রশ্নে বললেন সেনা আধিকারিক।

পুণে: Operation Sindoor নিয়ে ফের মুক খুললেন চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান। জানালেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারতের হাঁটু ভেঙে দিতে চেয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু আট ঘণ্টার মধ্যেই তাদের ঠান্ডা করে দেয় ভারত। আর তাতেই ইসলামাবাদ যুদ্ধবিরতির আর্জি জানায় বলে দাবি করলেন। Operation Sindoor-এ ভারতের যুদ্ধবিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে এর আগে বিদেশি মুখ খুলেছিলেন জেনারেল চৌহান। কিন্তু কয়টি যুদ্ধবিমান হারিয়েছে ভারত, তা যদিও খোলসা করেননি। তবে শীঘ্রই সেই সমক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে জানালেন। (CDS Anil Chauhan)
মঙ্গলবার পুণে ইউনিভার্সিটিতে বক্তৃতা করছিলেন জেনারেল চৌহান। পহেলগাওঁ হামলার পরই পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে Operation Sindoor অভিযান চালায় ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী। সেই পহেলগাঁও হামলার তীব্র নিন্দা করেন তিনি। বলেন, "পহেলগাঁওয়ে যা হয়েছে, তা পীড়িতদের উপর চরম নৃশংসতা। প্রত্যেকগে মাথায় গুলি করে মারা হয়, পরিবার ও সন্তানের সামনে ধর্ম জিজ্ঞেস করে করে মারা হয়। এতে সমাজে বিদ্বেষ ছড়ায়। পুরনো স্মৃতি আবার জেগে ওঠে। পশ্চিমি দেশগুলিতে হয়ত একটা-দু'টো হামলা গয়েছে, কিন্তু ভারতেই সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। প্রায় ২০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। পহেলগাঁও হামলার কয়েক সপ্তাহ আগে জেনারেল আসিম মুনির ভারত এবং হিন্দুদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন। এখন অন্য ভাবে ওদের মোকাবিলা করা হবে। ভারত বিরোধী কাজকর্মে সামরিক পদক্ষেপ করব আমরা। জল এবং রক্ত একসঙ্গে বইতে পারে না। তাই সন্ত্রাসকে জলের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছি আমরা। সামরিক অভিযানের ক্ষেত্রে নয়া রেখা নির্ধারণ করে দিয়েছি।" (Operation Sindoor)
#WATCH | Pune | Chief of Defence Staff (CDS) General Anil Chauhan says, "...On the 10th of May, at about 1 am, their (Pakistan) aim was to get India to its knees in 48 hours. Multiple attacks were launched and in some manner, they have escalated this conflict, which we had… pic.twitter.com/hBqlz912cU
— ANI (@ANI) June 3, 2025
এদিন জেনারেল চৌহান বলেন, "১০ মে রাত ১টা নাগাদ ওরা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারতের হাঁটু ভেঙে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। ওরা ভেবেছিল ৪৮ ঘণ্টা অভিযান চলবে। কিন্তু আট ঘণ্টাতেই গুটিয়ে যায়। তার পরই ফোন তুলে কথা বলতে আবেদন জানায়। ওরাই সংঘাত বাড়িয়েছিল। আমরা শুধুমাত্র জঙ্গিঘাঁটিগুলিকেই নিশানা করেছিলাম। ৭ মে Operation Sindoor অভিযানের দিন ওদের জানিয়েছিলাম। ওদের তরফে বাগাড়ম্বরপূর্ণ মন্তব্য আসতে শুরু করলে, কড়া হাতে মোকাবিলার কথা বলি। আমাদের সেনাঘাঁটিতে হামলা চালালে , আমরাও উপযুক্ত জবাব দেব, আরও তীব্র আঘাত করব বলে জানিয়ে দিই। (ভারত ও পাকিস্তান) দুই দেশের পৃথক ক্ষমতা, ফলত ঝুঁকি অবশ্যই ছিল। আমাদের যা ক্ষমতা ছিল, আগে যুদ্ধক্ষেত্রে তার প্রয়োগ হয়নি। ফলে ঝুঁকি থাকেই, কিন্তু ঝুঁকি না নিলে সাফল্য় মিলবে না। আমাদের ড্রোন প্রতিরোধ প্রযুক্তি যে মজবুত, তা জানতামই।"
CDS-এর বক্তব্যের হাইলাইটস
- ভারতেই সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। প্রায় ২০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
- পহেলগাঁও হামলার কয়েক সপ্তাহ আগে জেনারেল আসিম মুনির ভারত এবং হিন্দুদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন।
- জল এবং রক্ত একসঙ্গে বইতে পারে না। তাই সন্ত্রাসকে জলের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছি আমরা। সামরিক অভিযানের ক্ষেত্রে নয়া রেখা নির্ধারণ করে দিয়েছি।
- ওরা ভেবেছিল ৪৮ ঘণ্টা অভিযান চলবে। কিন্তু আট ঘণ্টাতেই গুটিয়ে যায়। তার পরই ফোন তুলে কথা বলতে আবেদন জানায়।
- ক্ষয়ক্ষতি গুরুত্বপূর্ণ নয়। কী ফল মিলল, তা গুরুত্বপূর্ণ। সব হিসেব সামনে আনব।
- Operation Sindoor-এর ক্ষেত্রেও যুদ্ধ এবং রাজনীতি সমান্তরাল ভাবে চলছিল। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ যোগাযোগের মাধ্যমে চলছিল গোটা প্রক্রিয়া।
পাকিস্তানে সামরিক অভিযান চালাতে গিয়ে ভারতের কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, গোড়া থেকেই সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে সেই নিয়ে মুখ খুলেছিলেন জেনারেল চৌহান। পাকিস্তান ভারতের যুদ্ধবিমান নামিয়েছে বলে মেনে নিলেও, ভারত ভুল শুধরে নিয়ে ফের মাঠে নামে বলে জানান। এদিন সেই প্রসঙ্গ উঠলে তিনি বলেন, "আমাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে চাওয়া হলে বলেছিলাম, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কী ফল মিলল, তা গুরুত্বপূর্ণ। ফুটবলে গোলের নিরিখে সোজা হিসেব হয়। ক্রিকেটের টেস্ট ম্যাচে ইনিংসের নিরিখে জয় আসে। কত উইকেট, কত ফল, কত সংখ্যক খেলোয়াড়, সেসব গুরুত্ব রাখে না। প্রযুক্তিগত মাপকাঠির নিরিখে এই সংক্রান্ত পরিসংখ্যান শীঘ্রই সামনে আনব। আমরা ক'টা যুদ্ধবিমান নামিয়েছি, কত রেডার ভেঙেছি, হিসেব কষে জানাব আমরা।"
#WATCH | Pune: On being asked about the losses incurred by Pakistan side during Operation Sindoor, Chief of Defence Staff (CDS) General Anil Chauhan says, "When I was asked about losses on our side, I said these are not important. The results and how you act are important. It… pic.twitter.com/Pa0Re5k1TF
— ANI (@ANI) June 3, 2025
Operation Sindoor পরবর্তী কালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতির উপক্রম হয়। সেই সময় তারা হস্তক্ষেপ করে যুদ্ধবিরতিতে দুই দেশকে রাজি করায় বলে দাবি করেছে আমেরিকা। জেনারেল চৌহান যদিও যুদ্ধ এবং রাজনীতি নিয়ে এদিন নিজের মতামত জানান। তিনি বলেন, "যুদ্ধ এবং যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি মানবজাতির রাজনৈতিক ইতিহাসের সমার্থক। মানবসভ্যতার মতোই প্রাচীন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি। আধিপত্য এবং আত্মরক্ষা মানুষের মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্টের মধ্যে পড়ে। যে কোনও যুদ্ধের প্রধান উপাদান হল হিংসা এবং হিংসার নেপথ্যে থাকা রাজনীতি। হিংসা রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য হিংসার প্রয়োজন পড়ে। শত্রুপক্ষের উপর নিজের ইচ্ছে চাপাতে হয়। যুদ্ধ রাজনীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখে। আর তৃতীয় উপাদান হল যোগাযোগ, যা লাগাতার চলছে। যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে।"
Pune, Maharashtra: Chief of Defence Staff (CDS) General Anil Chauhan says, "We all know that war and warfare are synonymous with the political history of mankind, and warfare is as old as human civilization. This is because, I believe, dominance and self-preservation are part of… pic.twitter.com/fdQSep5h4m
— IANS (@ians_india) June 3, 2025
পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এর সঙ্গে পাকিস্তানের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা জড়িয়ে রয়েছে বলেও এদিন দাবি করেন জেনারেল চৌহান। এ প্রসঙ্গে পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট তথা প্রধানমন্ত্রী জুলফিকর ভুট্টোর উল্লেখ টানেন তিনি। বলেন, "Operation Sindoor-এর ক্ষেত্রেও যুদ্ধ এবং রাজনীতি সমান্তরাল ভাবে চলছিল। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ যোগাযোগের মাধ্যমে চলছিল গোটা প্রক্রিয়া। বলা হয়, যুদ্ধ একটি যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত। অন্য সব রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে যুদ্ধে পদার্পণ করা হয়। এই নির্দিষ্ট যুদ্ধের সূচনাপর্ব ছিল পহেলগাঁওয়ের হামলা। তাহলে কি সন্ত্রাসও যুক্তিসঙ্গত পদক্ষেপ? আমার তা মনে হয় না। কারণ সন্ত্রাসের কোনও নির্দিষ্ট সংজ্ঞা হয় না। সন্ত্রাসীর কিছু হারানোর থাকে না। তাদের রাষ্ট্র থাকে না। তাই দেশ, আদর্শ, মানুষের কথা ভাবে না, যা রাষ্ট্রের ভিত্তি। ফলে সন্ত্রাসীদের পদক্ষেপ যুক্তিসঙ্গত নয়। কিন্তু রাষ্ট্র যখন সন্ত্রাসকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে, রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি করে, তার নেপথ্যে কারণ থাকে। আমাদের শত্রুতা প্রসঙ্গে বলব, (পাকিস্তান) ওরা ভারতকে হাজার বার রক্তাক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১৯৬৫ সালে জুলফিকর আলি ভুট্টোই রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের বিরুদ্ধে ১০০০ বছরের যুদ্ধের ঘোষণা করেছিলেন। জিয়াউল হক সেই নীতিকে রূপায়িত করেন। এটাই ওদের নীতি, যার প্রমাণও রয়েছে।"
তবে পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিকতম সংঘাতকে বেশি দিন টেনে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল না বলেও জানিয়েছেন জেনারেল চৌহান। তাঁর কথায়, "Operation Parakram-এর অভিজ্ঞতা রয়েছে। ন'মাস ওখানে পড়েছিলাম। অনেক খরচও জড়িয়ে থাকে, সব কিছুতে বিঘ্ন ঘটে। বালাকোটের পরও একই জিনিস দেখেছি। সব জড়ো করতে হয়েছিল। এক্ষেত্রে সব জড়ো করার আগেই অভিযান স্থগিত হয়ে যায়। Operation Sindoor এখনও শেষ হয়নি, চলছে। সাময়িক সংঘাতবিরতি চলছে। আমরা সতর্ক রয়েছি। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে বলতে পারি, ওরা দ্রুতই সরঞ্জাম হারাচ্ছিল, বুঝতে পেরেছিল এভাবে চললে অনেক ক্ষতি হবে। তাই ফোন তুলে নেয় হাতে।" পাকিস্তানের তরফে যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি ও ভিডিও তুলে ধরা হচ্ছিল, তাতেই নিজেদের সাফল্য বুঝতে পারছিলেন বলেও জানিয়েছেন জেনারেল চৌহান।






















