Digital India Act: খেটে মরছেন চুনোপুঁটিরা, লাভের গুড় খাচ্ছেন রাঘববোয়ালরা! ডিজিটাল দুনিয়ায় আইন চায় কেন্দ্র
DNPA Conclave 2024: DNPA Conclave & Digital Impact Awards-এর দ্বিতীয় বছর ছিল এবার।
নয়াদিল্লি: সময়ের সঙ্গে সংবাদ পরিবেশনের ধরন বদলেছে। প্রতি মুহূর্তে কোথায়, কী ঘটছে, এক ক্লিকেই এখন জেনে যান সাধারণ মানুষ, সৌজন্যে ডিজিটাল সংবাদমাধ্যম। হাতে হাতে স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার যত বেড়েছে, ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমও শাখাপ্রশাখা বিস্তার করে চলেছে তত। ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাই ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমের হাত শক্ত করতে উদ্যোগী হয়েছে ১৮টি মুদ্রণ এবং বৈদুতিন সংবাদমাধ্যমের ডিজিটাল শাখা, ডিজিটাল নিউজ পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশন (DNPA)। সংগঠনের বার্ষিক সম্মেলন এবং পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হল সম্প্রতি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় তথ্য-প্রযুক্তি এবং বৈদুতিন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর। সেখানে ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমের হাত শক্ত করার পক্ষে সওয়াল করলেন তিনি। (DNPA Conclave 2024)
DNPA Conclave & Digital Impact Awards-এর দ্বিতীয় বছর ছিল এবার। আয়োজনের দায়িত্বে ছিল Storyboard 18 DNPA. মঙ্গলবার সন্ধেয় দিল্লির হোটেল শাংরি-লায় জমকালো আয়োজন হয়। সেখানে বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চন্দ্রশেখর। তিনি জানান, বর্তমানে ডিজিটাল সংবাদ প্রকাশক এবং তাবড় প্রযুক্তি সংস্থার মধ্যে যে বোঝাপড়া রয়েছে, তাতে কিছু সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে লভ্যাংশ ভাগাভাগির যে কাঠামো রয়েছে, তাতে চরম অসাম্য চোখে পড়ে। এই অসাম্য দূর করতেই কেন্দ্রীয় সরকার ডিজিটাল ভারত আইন কার্যকর করতে বিশেষ ভাবে উদ্যোগী। (Digital India Act)
ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমের হাত শক্ত করার পক্ষে সওয়াল করেন চন্দ্রশেখর। তিনি বলেন, “যাঁরা পাঠকের কথা মাথায় রেখে সৃজনশীল তথ্যাবলী সৃষ্টি করছেন এবং যাঁরা ওই তথ্যাবলী থেকে আয়ের ব্যবস্থা করতে সাহায্য করছেন, এই দুই পক্ষের মধ্যে চরম অসাম্য রয়েছে।” চন্দ্রশেখর জানিয়েছেন, এই অসাম্য দূর করতে তৎপর কেন্দ্র। তাই ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন মিটলেই ডিজিটাল ভারত আইন কার্যকর করা হবে। ভারতের ডিজিটাল বাস্তুতন্ত্র থেকে ছোট ও মাঝারি ব্যক্তি এবং তাবড় প্রযুক্তি সংস্থার মধ্যে যে চরম অসাম্য রয়েছে, সঠিক আইন ব্যবহার করে ঘোচাতে হবে তাকে। একবারে ঘোচানো যদি সম্ভব না-ও হয়, অন্তত বাড়তে দেওয়া যাবে না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
চন্দ্রশেখর আরও জানান, ডিজিটাল যুগে ভারতে ইন্চারনেটের যে সুবিশাল এবং পৃথক জগৎ তৈরি হয়েছে, সেখানেও গণতান্ত্রিক রীতিনীতি প্রয়োগের পক্ষপাতী সরকার। তিনি বলেন, “আমরা ইন্টারনেট জগৎকে আরও মুক্ত দেখতে চাই। হাতে গোনা দু’তিনটি সংস্থা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবে, এটা কাম্য নয়।” এ ব্যাপারে সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার এবং সৃজনশীল বিষয়বস্তু নিয়ে কাজ করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। তাঁর মতে, ইনফ্লুয়েন্সাররা নিজের মর্জির মালিক। কাকে গুরুত্ব দেবেন, কাকে দেবেন না, তা নিজে সিদ্ধান্ত নেন। চন্দ্রশেখর যে ডিজিটাল ভারত আইনের হয়ে সওয়াল করছেন, ইতিমধ্যেই সেই নিয়ে আপত্তি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। সরকার আসলে তথ্যের অধিকার আইন লঘু করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে চন্দ্রশেখরের দাবি, সরকার কোনও সালিশি সভা বসাতে চায় না, শুধু কিছু নীতি-নিয়ম চালু করতে চায়।
ডিজিটাল মাধ্যমের সঙ্গে অবগত দেশ-বিদেশের তাবড় নীতি-নির্ধারক, বিভিন্ন সংস্থার অংশীদার, তাবড় শিল্পপতি এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। যন্ত্রমেধার দৌলতে বর্তমানে ডিজিটাল দুনিয়া যে বিবর্তনের মুখে, তার জেরে আগামী দিনে কী কী সমস্যা তৈরি হতে পারে, সেই নিয়েও বিশদ আলোচনা এবং তর্ক-বিতর্কেও যোগ দেন সকলে। বর্তমানে ভারতের ডিজিটাল সংবাদমাধ্য Alphabet অধীনস্থ Google-এর মতো তাবড় প্রযুক্তি সংস্থার উপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল। ফলে লভ্যাংশের বড় অংশ তাদের পকেটেই ঢোকে, বঞ্চিত রয়ে যান প্রকাশকরা। ভারতের পাশাপাশি, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা এবং কানাডাতেও এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
এ নিয়ে নীতি আয়োগের প্রাক্তন সিইও অমিতাভ কান্তও নিজের মতামত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “এই তাবড় প্রযুক্তি সংস্থার উপর ভর করেই গত কয়েক বছরে পশ্চিমি দুনিয়ার এত বাড়বাড়ন্ত। চিনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। একচেটিয়া আধিপত্যের বিস্তার ঘটছে। একমাত্র ভারতই অন্য রাস্তা হাঁটছে।”
আন্তর্জাতিক স্তর থেকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন World Association of Newspapers and News Publishers-এর মিডিয়া পলিসি অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্স বিভাগের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর এলেনা পেরোত্তি, Axel Springer-এর সিনিয়র অ্যাডভাইসর ফ্লোরিয়ান নেম, News Media Canada-ক সিইও তথা প্রেসিডেন্ট পল ডিগান, APAC-এর সিনিয়র পাবলিশার ও প্ল্যাটফর্ম ডিরেক্টর ক্লেমেন্ট বার্ডস্যাল, আমেরিকান ইকনমিক লিবার্টিজ প্রজেক্টেরক ডিরেক্টর অফ রিসার্চ, অ্যান্টিট্রাস্ট নিয়ে কাজ করা আইনজীবী ম্যাথু স্টোলার, UCLA-র সেন্টার ফর জার্নালিজম অ্যান্ড লিবার্টির ডিরেক্টর কোর্টনি ব়্যাডশ। কর্পোরেট জগৎ থেকে উপস্থিত ছিলেন পুণাওয়ালা মনোজ গুজারন, অভিজ্ঞ সাংবাদিক শেখর গুপ্ত এবং বিক্রম চন্দ্র।
অনুষ্ঠানে Ernst & Young-এর তৈরি ‘State of Digital Media in India’ শীর্ষক একটি রিপোর্টও প্রকাশিত হয়। ভারতের ডিজিটাল সংবাদমাধ্যম কোন পথে এগোচ্ছে, তাদের ভবিষ্যৎই বা কী, তার বিশদ ব্যাখ্যা রয়েছে প্রতিবেদনে। ওই রিপোর্টে আরও একটি বিষয় বিশেষ ভাবে নজর কেড়েছে, যা হল, ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমগুলির মধ্যে কোনটিকে বেছে নেবেন, বিশ্বাসযোগ্যতার নিরিখে তা বাছাই করেন গ্রাহক।