Donald Trump on Gaza: গাজা দখলের ঘোষণা ট্রাম্পের, একযোগে নিন্দায় চিন-রাশিয়া-সৌদি, দেশের অন্দরেও সমালোচনা, নীরব ভারত
US Takeover of Gaza: যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা আমেরিকা দখল করবে বলে ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প।

নয়াদিল্লি: আমেরিকার মসনদে ফেরার পর থেকেই একের পর এক চমক দিয়ে চলেছেন। এবার গাজা দখলের ঘোষণা করে শোরগোল ফেলে দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। দেশের অন্দরেও সমালোচনা শুরু হয়েছে। ট্রাম্পের ‘আগ্রাসনে’র বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন একে একে সকলে। (Donald Trump on Gaza)
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা আমেরিকা দখল করবে বলে ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। আর তাতেই নতুন করে পশ্চিম এশিয়ার ভূরাজনীতিতে অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ট্রাম্পের ঘোষণার তীব্র সমালোচনা করেছে হামাস, ইরান, চিন, রাশিয়া, সৌদি আরব। ভারতে নরেন্দ্র মোদির সরকার এ নিয়ে এখনও পর্যন্ত প্রতিক্রিয়া না জানালেও, কংগ্রেস উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গাজা নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া উচিত বলে মত তাদের। (US Takeover of Gaza)
হামাস
হোয়াইট হাউসে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে পাশে নিয়ে গাজা দখলের ঘোষণা করেন ট্রাম্প। তাঁর সেই ঘোষণার তীব্র নিন্দা করেছে হামাস। হামাস নেতা সামি আবু জুহরি জানিয়েছেন, ট্রাম্পের মন্তব্য অত্যন্ত হাস্যকর। ট্রাম্পের এই মন্তব্যে পশ্চিম এশিয়ায় অস্থিরতা তৈরি হতে পারে বলেও দাবি তাঁর। হামাসের তরফে বিবৃতি জারি করে বলা হয়, “নতুন করে উত্তেজনা এবং বিশৃঙ্খলা তৈরির রেসিপি বাতলে দিচ্ছেন ট্রাম্প। গাজায় আমাদের মানুষজনেরা এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে দেবেন না। দখলদারি এবং আগ্রাসন ঠেকাতে আমাদের উৎখাত করা যাবে না। ১৫ মাস ধরে লাগাতার বোমাবর্ষণের মধ্যেও মাটি কামড়ে পড়ে থেকেছেন সকলে।”
Palestine Liberation Organisation
Palestine Liberation Organisation-এর সচিব হুসেন আল-শেখ গাজা দখলের প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং শান্তির কথা মাথায় রেখে প্যালেস্তিনীয় নেতৃত্ব দুই পৃথক দেশের অবস্থানে অনড়।” প্যালেস্তিনীয় নাগরিকদের তাঁদের মাতৃভূমি থেকে কোনও ভাবে উচ্ছেদ করা যাবে না বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে তারা।
প্যালেস্তাইন
প্যালেস্তাইনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসও ট্রাম্পের প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “গাজা থেকে প্যালেস্তিনীয়দের উৎখাতের পরিকল্পনা মেনে নেওয়া হবে না। আমাদের মানুষদের অধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না কোনও ভাবে। নিজেদের অধিকারের জন্য দশকের পর দশক লড়াই করছি আমরা, অনেক আত্মত্যাগ করেছি। এই ধরনের প্রস্তাব আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। ১৯৬৭ সালের দুই রাষ্ট্রের সমাধান অনুযায়ী, রাজধানী জেরুসালেম-সহ স্বাধীন প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ছাড়া শান্তি এবং স্থিতাবস্থা ফেরানো সম্ভব হবে না।”
Palestinian Islamic Jihad
Palestinian Islamic Jihad-এর বক্তব্য, “ট্রাম্পের অবস্থান এবং তাঁর নীতি আরব দুনিয়া এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। যেভাবে মিশর এবং জর্ডানের মুখোমুখি প্যালেস্তিনীয়দের দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন ট্রাম্প, তা বিপজ্জনক, যা অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।” ঘরছাড়া প্যালেস্তিনীয়দের মিশর এবং জর্ডানে থিতু হওয়ার পক্ষে ট্রাম্প। তাতেই এমন মন্তব্য Palestinian Islamic Jihad-এর।
রাষ্ট্রপুঞ্জ
প্যালেস্তাইনে রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিনিধিদলও ট্রাম্পের প্রস্তাবের সমালোচনা করেছে। সেখানে রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিনিধিদলের নেতা রিয়াদ মনসুর জানিয়েছেন, ইজরায়েলে নিজেদের ভিটেমাটির ফিরে পাওয়ার অধিকার আছে প্যালেস্তিনীয়দের। তাঁর কথায়, “যাঁরা প্যাালেস্তিনীয়দের ‘ভাল জায়গায়’ পাঠিয়ে দিতে চান, প্যালেস্তিনীয়দের নিজের ভিটেয় ভিড়তে দিন, যা এখন ইজরায়েলে। প্যালেস্তিনীয়রা গাজাকে পুনরায় গড়ে তুলতে চান কারণ, গাজা তাঁদের।”
মিশর
মিশরের বিদেশমন্ত্রী বদর আবদেলাতি জানিয়েছেন, প্যালেস্তাইনের প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ মুস্তাফার সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর। প্যালেস্তিনীয়দের যাতে জন্মভূমি ছেড়ে বেরিয়ে যেতে না হয়, গাজার পুনর্নিমাণ হয় যাতে, তা নিয়ে কথা হয়েছে তাঁদের মধ্যে।
সৌদি আরব
প্যালেস্তাইন নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে সম্প্রতি ইজরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের সখ্য গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয় আমেরিকা। কিন্তু ট্রাম্প গাজা দখলের ঘোষণা করার পর, তারাও বেঁকে বসেছে। প্যালেস্তিনীয়দের অধিকারচ্যুত করা, তাঁদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা কোনও রকম ভাবে বরদাস্ত করা হবে না বলে জানিয়েছে সৌদি আরবের বিদেশ মন্ত্রক। পৃথক প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র ব্যাতীত ইজরায়েলের সঙ্গে কোনও রকম সম্পর্কে অনাগ্রহী তারা।
জর্ডান
জর্ডানের রয়্যাল কোর্টের বক্তব্য, “রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লা জানিয়েছেন, ইজরায়েলি আগ্রাসন রোখা প্রয়োজন। প্যালেস্তিনীয়দের উৎখাত করার সব ধরনের প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করছেন তিনি। ”
ইরান
ইরানের এক আধিকারিক বলেন, “প্যালেস্তিনীয়দের উৎখাতের প্রস্তাব মানবে না ইরান। একাধিক মাধ্যমে সেই কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
রিপাবলিকান্স ও ডেমোক্র্যাটস
আমেরিকার ডেমোক্র্যাট সেনেটর ক্রিস মার্ফি বলেন, “প্রকাশ্যে একটি জাতিকে নির্মূল করার ডাক দিচ্ছেন ট্রাম্প। গণহত্যাকারী, যুদ্ধাপরাধীর পাশে দাঁড়িয়ে এসব বলছেন উনি। আমেরিকার গাজা দখলের অর্থ হাজার হাজার সৈনিকের মৃত্যু, পশ্চিম এশিয়ায় আরও কয়েক দশক ধরে যুদ্ধ। অত্যন্ত জঘন্য, অসুস্থ রসিকতা।” আসল সমস্যা থেকে নজর ঘোরাতেই ট্রাম্প এমন করছেন বলে মত তাঁর। ডেমোক্র্যাট সেনেটর ভ্যান হোলেন বলেন, “২০ লক্ষ প্যালেস্তিনীয়কে গাজা থেকে বের করে দিয়ে গাজা দখলের যে ডাক দিয়েছেন ট্রাম্প, তা একটি জাতিকে নির্মূল করে দেওয়ারই নামান্তর। এতে ইরান এবং অন্য শত্রু দেশগুলি আরও জোর পাবে। আরব দেশগুলি একা বোধ করবে এবার। এতদিন যে দুই রাষ্ট্রের নীতিকে সমর্থন করে এসেছে আমেরিকা, ট্রাম্পের ঘোষণা তারও পরিপন্থী। এই বিপজ্জনক, বেপরোয়া মনোভাবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে কংগ্রেসকে।”
শুধু ডেমোক্র্যাটস শিবির থেকেই নয়, রিপাবলিকানরাও এ নিয়ে মুখ খুলেছেন। কেন্টাকির সেনেটর ব়্যান্ড পল বলেন, “আমি তো ভাবলাম আমরা আমেরিকাকে প্রথমে রাখার জন্য ভোট দিয়েছি।” মন্টানার রিপাবলিকান সেনেটর জশ হাওলি বলেন, “আমেরিকার সম্পদের এটা সঠিক ব্যবহার কি না জানি না আমি।”
রাশিয়া
রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সেরগেই লাভরভ বলেন, “অধিকৃত ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক পুরোপুরি দখল করে নিতে চায় ইজরায়েল। সেই আবহেই প্য়ালেস্তিনীয়দের গাজা থেকে উৎখাতের চেষ্টা হচ্ছে। এভাবে একটা গোটা জাতিকে শাস্তির মুখে ঠেলে দেওয়ার নীতি প্রত্যাখ্যান করে রাশিয়া।” ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, দুই রাষ্ট্রই এই সমস্যার একমাত্র সমাধান। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপুঞ্জের অবস্থানও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
চিন
চিনের বিদেশ মন্ত্রকও ট্রাম্পের প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করেছে। তাদের মতে, জোর করে গাজা থেকে মানুষকে বিতাড়িত করার বিরোধী তারা।
তুরস্ক
তুরস্কের বিদেশমন্ত্রী হাকান ফিদান জানিয়েছেন, ট্রাম্পের মন্তব্য কোনও ভাবে মেনে নেওয়া যায় না। প্যালেস্তিনীয়দের বের করে দিলে নতুন সংঘাত শুরু হবে বলে সতর্ক করেছেন তিনি। ইজরায়েলের সঙ্গে ব্য়বসা-বাণিজ্য ইতিমধ্যেই কাটছাঁট করেছে তুরস্ক, রাষ্ট্রদূতক ফিরিয়ে এনেছে। পরিস্থিতি বুঝে আরও কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছে তুরস্ক।
জার্মানি
জার্মানির বিদেশমন্ত্রী অ্যানালেনা বেরবক জানিয়েছেন, গাজার উপর অধিকার রয়েছে প্যালিস্তিনীয়দের। তাঁদের বিতাড়ন করা আন্তর্জাতিক আিনের পরিপন্থী। এতে নতুন করে যন্ত্রণা, ঘৃণার সঞ্চার ঘটবে বলে মত তাঁর। প্যালেস্তাইনকে সমাধানের মূল্য চোকাতে হয়, এমন কিছু করা যাবে না বলে জানান তিনি।
ফ্রান্স
ফ্রান্সের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ক্রিস্টফ লেমোঁ বলেন, “আবারও গাজা থেকে প্যালেস্তিনীয়দের জোর করে বিতাড়নের তীব্র বিরোধিতা করছি আমরা। এতে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘিত হয়, দুই রাষ্ট্রের পথে বাধা তৈরি করা হয়। মিশর এবং জর্ডানের সঙ্গে সম্পর্ক টালমাটাল হতে পারে, যা ওই অঞ্চলের ভূরাজনীতিকে অশান্ত করে তুলতে পারে।” ভবিষ্যতের প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রের উপর কোনও তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ কর্তৃত্ব থাকবে না বলেও জানিয়ে দেন তিনি।
স্পেন
স্পেনের বিদেশমন্ত্রী হোসে ম্যানুয়েল আলবারেস বলেন, “পরিষ্কার বলছি, গাজা প্যালেস্তিনীয়দের জন্মভূমি। ওঁরা গাজাতেই থাকবেন। ভবিষ্যতের প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রের অংশ গাজা, স্পেন যার সমর্থক।”
আয়ারল্যান্ড
আয়ারল্যান্ডের বিদেশমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস বলেন, “একটা বিষয় স্পষ্ট: এক্ষেত্রে দুই রাষ্ট্রের সমাধানই কাম্য। প্যালেস্তাইন এবং ইজরায়েলের পাশাপাশি, শান্তিপূর্ণ ভাবে অবস্থানের অধিকার আছে। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।”
ব্রিটেন
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কির স্টার্মার বলেন, “ওঁদের (প্যালেস্তিনীয়দের) বাড়িতে থাকতে দিতে হবে। পুনরায় বাড়ি তৈরি করতে দিতে হবে, দুই রাষ্ট্রের লক্ষ্য নিয়েই এগোতে হবে আমাদের।” ব্রিটেনের বিদেশমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, “আমরা গোড়া থেকেই দুই রাষ্ট্রের তত্ত্বে বিশ্বাস করে আসছি। প্যালেস্তিনীয়রা যাতে নিজেদের জন্মভূমিতে বাস করতে পারেন, গাজা এবং ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে থেকে সমৃদ্ধির পথে এগোতে পারেন, তা দেখাই লক্ষ্য আমাদের।”
ব্রাজিল
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুই ইনাশিও ডা সিলভা বলেন, “ট্রাম্পের কথার কোনও যুক্তি নেই। প্যালেস্তিনীয়রা কোথায় থাকবেন? যে কোনও মানুষের কাছেই বিষয়টি বোধগম্য নয়। প্যালেস্তিনীয়রাই গাজাকে দেখবেন। ”
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ার প্রধামন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ বলেন, “ইজরায়েল এবং প্যালেস্টাইন, পৃথক দুই রাষ্ট্র হিসেবে পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ ভাবে বিরাজ করবে। আমরা যুদ্ধবিরতির পক্ষে ছিলাম, বন্দিমুক্তির সপক্ষে সওয়াল করি, গাজায় ত্রাণও পৌঁছনোর পক্ষে সায় দিই।” সরাসরি ট্রাম্পের সমালোচনা না করলেও, দুই পৃথক রাষ্ট্রের সপক্ষেই সায় দিয়েছেন তিনি।
Amnesty International
Amnesty International-এর এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর পল ও’ব্রায়েন জানিয়েছেন, গাজা থেকে প্যালেস্তিনীয়দের বিতাড়নের কথা বলা ট্রাম্প আসলে জাতি হিসেবে ওঁদের ধ্বংস করার কথা বলেছেন। তাঁর কথায়, “গাজা ওঁদের জন্মভূমি। গাজায় আজ যে ধ্বংসস্তূপ, তা ইজরায়েল সরকারের হামলার ফলাফল। হাজার হাজার নিরীহ নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে, যাতে আমেরিকার তৈরি বোমা ব্যবহার করা হয়েছে।”
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
