Duttapukur Incident : দত্তপুকুরে ফ্য়াক্টরিতে গবেষণাগারের মতো অত্যাধুনিক মেশিন থেকে শিল্ড লাগানো হেলমেট ! পরতে পরতে রহস্য
Duttapukur News : ইটভাটার আড়ালে রীতিমতো শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছে গেছিল বাজি কারখানা। কী বিপুল আয়োজন। একের পর এক অত্য়াধুনিক যন্ত্র।
সন্দীপ সরকার, উত্তর ২৪ পরগনা: অত্য়াধুনিক মেশিন, টেস্টটিউব, অসংখ্য় বিকার, প্রচুর পরিমানে সলিড ও লিক্য়ুইড রাসায়নিক! গ্লাভস, শিল্ড লাগানো সেফটি হেলমেট। একঝলক দেখলে মনে হবে কোনও অত্য়াধুনিক গবেষণাগার! কিন্তু অভিযোগ, দত্তপুকুরের এই এলাকাতেই তৈরি হত বোমা-বিস্ফোরক! বোমা তৈরির গবেষণাগার?
এবিপি আনন্দর ক্যামেরায় ধরা পড়ল, বিস্ফোরণ স্থল থেকে প্রায় ১ কিমি দূরে কেভিএম ইটভাটার অন্দরছবি। ইটভাটার আড়ালে রীতিমতো শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছে গেছিল বাজি কারখানা। কী বিপুল আয়োজন। একের পর এক অত্য়াধুনিক যন্ত্র। সেই যন্ত্র বসানো হয়েছে। এবং সেখানে নাকি বাজি তৈরি করা হত। একটা-দুটো মেশিন নয়, গোটা সাতেক অত্যাধুনিক মেশিন বসানো সেখানে। কী হত এখানে? প্রশ্ন করা হলে এক স্থানীয় বাসিন্দা শুধু বললেন, আরডিএক্স। ফুলঝুরি বানানোর জন্য় এটার দরকার পড়ে না।
দত্তপুকুরের মোচপোলে যেখানে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়েছে, তার থেকে ১ কিলোমিটার দূরে, বেরো নারায়ণপুরেই এই পরিত্য়ক্ত ইটভাটা। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এটি বন্ধ হয়ে যায়। রীতিমতো ধাঁধাঁ লাগিয়ে দেবে এখানকার পরিবেশ। পরিত্য়ক্ত ইট ভাটার আড়ালে বাজি কারখানা তৈরি হয়েছিল। ১ থেকে ২ বছর ধরে চলেছিল এই কারখানা। ফাঁকা চত্বরে কংক্রিটের ঢালাই করে হেলিপ্য়াডের মত তৈরি করা হয়েছে। বাজি তৈরির সরঞ্জাম রোদে শুকনো হত।
ত্রিপল দিয়ে ঘেরা। বাইরে থেকে দেখলে আলাদা করে কিছুই মনে হবে না। কিন্তু ভিতরে এলেই চোখ ধাঁধিয়ে যাবে।' বিকারের মধ্য়ে রয়েছে রাসায়নিক। তা সারি সারি ভাবে রাখা। ছোট বড় বিভিন্ন মাপের। গায়ে লেখা মেড ইন জার্মানি। তার মধ্য়ে অদভূত গন্ধের তরল রয়েছে। যাতে হাত দিয়ে ব্য়বহার না করে, তাই গ্লাভস। এক একটা টেবিল যেন এক একটা পরীক্ষার জায়গায়। কাচের গায়ে পরিমাপ দেওয়া। পরিমাপের জন্য় বড় আকারের সিরিঞ্জ রাখা। কোথাও টেস্টটিউব রাখা। এটা কীসের রসায়নগার? কী প্রয়োজনে? '
রয়েছে অত্য়াধুনিক সব যন্ত্রপাতি। যেখানে বাজি তৈরি থেকে শুরু করে, প্য়াকেটজাত করা হত। ABP Ananda র ক্যামেরায় দেখা গেল, অসংখ্য় মেশিন বসানো রয়েছে। যেখানে বাজি তৈরি করা হত। কোনও জানলা নেই। সব দিক ইঁটের গাঁথনি। আলো বাতাস ঢোকার কোনও জায়গা নেই। শুধু একটা এক্সহস্ট ফ্য়ান। তার সাহায্য়ে বাতাস চলাফেরা করত। বাইরে থেকে দেখে ভিতরে কেউ বুঝবে না ভিতরে কি চলছে। অত্য়াধুনিক যন্ত্রের মাধ্য়মে তৈরি বাজি বাক্সে এসে পড়ত। কোনও অগ্নিনির্বাপন ব্য়বস্থা কোথাও কিছু নেই। শুধু সারি সারি মেশিন। প্য়াকেটজাতও হচ্ছে যন্ত্রের সাহায্য়ে। অধুনিকতম ব্য়বস্থা।
ফ্য়াক্টরির তিনটি পৃথক বিল্ডিং। একটা মেন বিল্ডিং। যেখানে ল্য়াবরেটরির মতো সেট আপ, অত্য়াধুনিক সব যন্ত্রপাতি, মেশিন। তার থেকে কয়েকশো মিটার দূরে আরেকটা বিল্ডিং। যেখানে লিকুইড রাসায়নিক মজুত করা হত। এর থেকেও কয়েক শো মিটার দূরে বারুদ বা অন্য় সলিড বিস্ফোরক তৈরির মশলা মজুত থাকত। স্থানীয়দের দাবি, ভিতরে ঢোকার অনুমতি কারও ছিল না। গেটের সামনে ২৪ ঘণ্টাই থাকত কড়া পাহাড়া। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন সেখানে ঢোকাও যেত না। শ্রমিকরা আসতেন মুর্শিদাবাদ থেকে।
পরিত্য়ক্ত কারখানার ভিতর থরে থরে সাজানো প্রচুর প্য়াকেটবন্দি বাজির প্যাকেটের ওপর লেখা রয়েছে প্রস্তুতকারী সংস্থার নাম, কিরণ ফায়ার ওয়ার্ক্স। কিন্তু এই কারখানাটির মালিক কে? এখানে থাকা একটি গাড়িতে এদিন সকালে ভাঙচুর চালান স্থানীয় বাসিন্দারা। গাড়িটির মালিক শেখ নুর হোসেন নামে এক ব্য়ক্তি। সূত্রের খবর, সম্ভবত এই কারখানার অন্য়তম মালিক তিনিই। ফ্য়াক্টরিটি কি বৈধ? বাজির আড়ালে কি তৈরি হত অন্য় কিছু? উঠছে এমনই একাধিক প্রশ্ন।