Jagannath Puri Rathyatra: কীভাবে গড়ে ওঠে পুরীর জগন্নাথ মন্দির ? জানেন বিগ্রহের ইতিহাস ?
সামনেই রথযাত্রা। তার আগে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের বিভিন্ন আকর্ষণীয় বিষয় ও রীতি-নীতি নিয়ে চলছে এই সিরিজ। আজকের প্রতিবেদনেও রইল এরকমই কিছু তথ্য। পর্ব-৭।
পুরী : ওড়িশার পুরী। প্রতি বছর জগন্নাথের রথযাত্রা উপলক্ষে মেতে ওঠে। দশদিন ধরে চলা এই উৎসবে শামিল হন বহু ভক্ত। কিন্তু, করোনা অতিমারির কারণে গতবারের মতো এবারও রথযাত্রার সেই চেনা ভিড় দেখা যাবে না। তবে, কিছু বিধি-নিষেধের মধ্যে দিয়ে এবারও পালিত হবে রথাযাত্রা। প্রতি বছর জুন অথবা জুলাই মাসে হওয়া হিন্দু ধর্মের অন্যতম প্রধান এই উৎসবের জগৎজোড়া খ্যাতি। জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার বাৎসরিক গুণ্ডিচা মন্দির পরিদর্শনকে উদযাপন করতে বিশেষ এই সময়টিতে পুজো-অর্চনায় মেতে ওঠেন ভক্তরা। কিন্তু, কীভাবে এই জগন্নাথ রথযাত্রা শুরু হয়েছিল জানেন কি ? চলুন একবার দেখে নেওয়া যাক।
এই রথযাত্রা ঘিরে দুই ধরনের জনশ্রুতি প্রচলিত আছে। কথিত আছে, পুরীর রাজা ছিলেন ইন্দ্রদুম্ন। তিনি নাকি অহংকারী ও শক্তিশালী ছিলেন। যখন ভগবান কৃষ্ণের নশ্বর দেহ দাহ করা হয়, তখন রাজা তাঁর হৃদয়টি নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। মনে করা হয় যে, কৃষ্ণর হৃদয় দ্বারকা সমুদ্রে নিমগ্ন আছে। যদিও সেই হৃদয় ভেসে ওঠার পর তা পুরীর আদিবাসী সম্প্রদায়ের কাছে মূর্তির আকারে ছিল। রাজা তখন সেই মূর্তির দাবি জানাতে যান। তখনই সেখান থেকে উধাও হয়ে যায় মূর্তি। এই ঘটনায় অনুতপ্ত বোধ করেন রাজা। অনুশোচনা থেকে, তিনি দেবতার কাঠের পবিত্র মূর্তি বানান। এবার তিনি প্রভু জগন্নাথের উদ্দেশে মন্দির নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন।
অন্য একটি জনশ্রুতিতে একই রাজার কথা অন্যভাবে বলা আছে। কথিত আছে, যখন ভগবান কৃষ্ণ তাঁর নশ্বর দেহ ত্যাগ করেন, তখন তাঁর দাদা বলভদ্র এবং ছোট বোন সুভদ্রা খুবই কষ্ট পেয়েছিলেন। এতটাই কষ্ট পেয়েছিলেন যে তাঁরা ভগবান কৃষ্ণের অর্ধদগ্ধ দেহ নিয়ে দ্বারকা শহরে(যা সমুদ্রের তলায় আছে বলে বিশ্বাস) ঝাঁপ দেন। একই দিনে রাজা ইন্দ্রদুম্ন স্বপ্নে দেখেন, ভগবান কৃষ্ণের দেহ পুরীর সমুদ্র সৈকতে কাঠের গুঁড়ির আকারে ভেসে উঠেছে। তখনই তিনি একটি মন্দির গড়ে তা জগন্নাথের উদ্দেশে উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নেন।
তবে এই দুটি জনশ্রুতি এক জায়গায় গিয়ে একত্রিত হয়ে গেছে। রাজা জগন্নাথ এবং তাঁর ভাই-বোনেদের বিগ্রহ গড়ার জন্য একজন দক্ষ শিল্পীকে চেয়েছিলেন। শীঘ্রই তিনি স্থাপত্যের ভগবান বিশ্বকর্মাকে পেয়ে যান। যদিও কাঠমিস্ত্রির প্রকৃত পরিচয় সম্পর্কে অবগত ছিলেন না রাজা। মিস্ত্রি বিগ্রহ নির্মাণে সম্মত হন। কিন্তু, একটি শর্তে। যদি তাঁর কাজে কোনও ব্যাঘাত ঘটে তবে তিনি সেই মুহূর্তে চলে যাবেন। এই অদ্ভুত শর্তে রাজিও হয়ে যান রাজা। বন্ধ ঘরে কাজ শুরু করেন কাঠমিস্ত্রি। এভাবে দিনের পর দিন কাজ চলতে থাকে। এদিকে দিনের পর দিন যখন মিস্ত্রি খাবার খেতে, জল পান করতে বা বিশ্রাম নিতে ঘরের বাইরে এলেন না, তখন স্তম্ভিত হয়ে গেলেন রাজা। কৌতূহলবশত রাজা ঘরের দরজা খুলে ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গে সেই বৃদ্ধ কাঠমিস্ত্রি তথা বিশ্বকর্মা উধাও হয়ে যান। জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার বিগ্রহ অর্ধসমাপ্ত থেকে যায়। রাজা চাননি এই পরিশ্রম বৃথা যাক। তাই তিনি সেই অর্ধসমাপ্ত বিগ্রহই নতুন মন্দিরে স্থাপন করেন। তার পর থেকেই চলছে পুজো।