Global Slavery Index 2023: আধুনিকতার মোড়কে দাসত্বের শৃঙ্খলে বাঁধা বিশ্ব, ‘অমৃতকালে’ ঘরে ঘরে ক্রীতদাস, বলছে আন্তর্জাতিক রিপোর্ট
Modern Slavery: বিশ্বের ১৬০টি দেশকে নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে গ্লোবাল স্লেভরি ইনডেক্স বা বিশ্ব দাসত্ব সূচক।
নয়াদিল্লি: সাবেকিয়ানা ছেড়ে ডিজিটাল হয়েছে ভারত। স্বাধীনতার ৭৫ বছরে অমৃতকাল উপস্থিত হয়েছে বলে হাঁক শোনা যায় প্রায়শই। কিন্তু আধুনিকতার যাবতীয় উপকরণ কোলে সাজিয়ে বসে থাকলেও, দাসত্বের শিকল থেকে আজও মুক্ত হতে পারল না ১৪০ কোটির দেশ (Modern Slavery)। বিশ্ব দাসত্ব সূচক অন্তত তেমনই জানান দিচ্ছে। ভারতে আধুনিক দাসত্বের শৃঙ্খলে বাঁধা পড়েছে বলে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে তাতে (Global Slavery Index 2023)।
বিশ্বের ১৬০টি দেশকে নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে গ্লোবাল স্লেভরি ইনডেক্স বা বিশ্ব দাসত্ব সূচক। 'ওয়াক ফ্রি' নামের একটি মানবাধিকার সংগঠন কয়েক বছর অন্তরই এই সূচক প্রকাশ করে। আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন, ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের মতো সংস্থা থেকে বিশদ নথি সংগ্রহ করা হয় তার সপক্ষে।
মানব সভ্যতার ইতিহাসে যুগ যুগ ধরেই দাসপ্রথা চালু ছিল। বর্তমান দিনে ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে বিশ্ব, তা নির্ধারণ করাই এই সূচকের লক্ষ্য। এবারের যে রিপোর্টে যে পরিসংখ্যান সামনে এসেছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে বিশ্বের প্রায় ৫ কোটি মানুষ আধুনিক দাসত্ব করছেন। আধুনিক দাসত্বের শৃঙ্খলে বাঁধা পড়ে রয়েছেন তাঁরা, যার মধ্যে ভারতেই এই আধুনিক ক্রীতদাসের সংখ্য়া ১ কোটি ১০ লক্ষ।
২০২২ সালের হিসেব-নিকেশকে ভিত্তি করে এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। তার আগে ২০১৩, ২০১৪, ২০১৬ এবং ২০১৮ সালেও বিশ্ব দাসত্ব সূচক প্রকাশিত হয়। 'ওয়াক ফ্রি' সংগঠনের দাবি, আধুনিক দাসপ্রথা আসলে আমাদের রোজকার জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। চোখের সামনেই দাসপ্রথা বেঁচে রয়েছে। অথচ হেলদোল নেই কারও।
আরও পড়ুন: Malda: ৫ টাকার লক্ষ্ণণভোগ, ১০ টাকায় হিমসাগর! ক্রেতা খুশি, উদ্বেগে চাষি-বিক্রেতা
এর আগে, ২০১৬ সালের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, বিশ্বের ১ কোটি মানুষ আধুনিক ক্রীতদাস হয়ে রয়েছেন। সেই সংখ্যা বর্তমানে ৫ কোটিতে এসে ঠেকেছে। এর মধ্যে শিশু ক্রীতদাসের সংখ্যাই ১ কোটি ২০ লক্ষ। ২ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষকে জোর করে ক্রীতদাস বানিয়ে রাখা হয়েছে। বিবাহসূত্রে ক্রীতদাস হয়ে বাঁধা পড়ে রয়েছেন ২ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ।
আধুনিক দাসত্বের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, হিংসা, হুমকি, নিগ্রহ, প্রবঞ্চনা, ক্ষমতার অপব্যবহার করে এবং অসহায়তার সুযোগ নিয়ে কিছু মানুষকে আধুনিক যুকে ক্রীতদাস করে রাখ হয়েছে। এই আধুনিক ক্রীতদাসেরা এমন পরিস্থিতিতে রয়েছেন, যেখানে না বলার উপায় নেই তাঁদের। আধুনিক দাসত্বের মধ্যে রাখা হয়েছে বাধ্যতামূলক শ্রম, জোরপূর্বক বিবাহ, ঋণের ফাঁদে বাঁধা পড়া, যৌন শোষণ, মানবপাচার, আক্ষরিক অর্থেই ফরমায়েশ খাটা, শিশুনিগ্রহকেও।
আধুনিক দাসত্বের নিরিখে কোন দেশ, কোন জায়গায় রয়েছে, তার তিনটি পর্যায় তৈরি করা হয়েছে। এর একেবারে উপরের দিকে রয়েছে উত্তর কোরিয়া, সৌদি আরব, তুরস্ক, তাজিকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, রাশিয়া, আফগানিস্তান, কুয়েত, মৌরিতানিয়া, ইরিত্রিয়া। দাসত্ব যেখানে নেই বললেই চলে, সেই দেশগুলি হল, সুইৎজারল্যান্ড, নরওয়ে, জার্মানি, হল্যান্ড, সুইডেন, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, আয়ারল্যান্ড, জাপান এবং ফিনল্যান্ড।
আরও পড়ুন: Chittaranjan Das: মামলায় জিতে একজন পেলেন নাম, অন্য জন হলেন 'ঋষি', আয়ের অধিকাংশই বিলিয়েছেন দেশবন্ধু
যে সমস্ত দেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ আধুনিক ক্রীতদাস হয়ে রয়েছেন, তাদের নিয়ে তৃতীয় পর্যায় তৈরি করা হয়েছে। সেই দেশগুলি হল, ভারত, চিন, উত্তর কোরিয়া, পাকিস্তান, রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, নাইজিরিয়া, তুরস্ক, বাংলাদেশ এবং আমেরিকা। রিপোর্টে বলা হয়েছে, সামগ্রিক ভাবে ধরলে, এই সমস্ত দেশে প্রতি তিন জন নাগরিকের মধ্যে দু'জন আধুনিক ক্রীতদাস, সামগ্রিক হিসেবে যা বিশ্বের মোট জনসংখ্য়ার প্রায় অর্ধেক।
১৯৭৬ সালে ভারতে অঙ্গীকারবদ্ধ শ্রম বিলোপ আইন পাস হয়। তার আওতায় জোরপূর্বক শ্রমদান এবংঅঙ্গীকারবদ্ধ শ্রম নিষিদ্ধ হয়। এ নিয়ে প্রত্যেক রাজ্যের সরকারের উপর ভিজিল্য়ান্স কমিটি গড়ার দায়িত্বও বর্তায়। ১৯৮৫ সালে সংশোধন ঘটিয়ে ঠিকাশ্রমিক এবং পরিযায়ী শ্রমিকদেরও সেই আইনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সুপ্রিম কোর্টও জানিয়ে দেয়, ন্যূনতম মজুরি না মেটানোও জোরপূর্বক শ্রমের মধ্যে পড়ে।
কিন্তু দাসত্ব বিলোপের পক্ষে এই আইন আদৌ আদৌ কার্যকর করা সম্ভব কিনা, প্রশ্ন উঠতে শুরু করে গোড়া থেকেই। আইনি ফাঁকফোকর, সরকারি উদাসীনতা, দুর্নীতি, রাজনীতিকদের মধ্যে সদিচ্ছার অভাবে এই আইন সার্বিক ভাবে কার্যকর করা সম্ভব হয়নি বলে মত সমাজকর্মীদের। অপরাধ বলে গন্য করা হলেও, জোরপূর্ব শ্রমে কোপ বসাতে গেলে দরিদ্র-নিম্নবিত্তের পেটে টান পড়বে। তার সমাধান না খুঁজে, এই আইন কখনও কার্যকর করা সম্ভব নয় বলে ২০১৭ সালে কেন্দ্রের কাছে চিঠিও পাঠান সমাজ সচেতন মানুষেরা। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার যে নয়া শ্রম আইন চালু করার দিকে এগোচ্ছে, তাতে সংগঠিত এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রে মালিক পক্ষের হাত আরও শক্ত হবে বলে আশঙ্কা করছেন সমাজকর্মীরা।