Chittaranjan Das: মামলায় জিতে একজন পেলেন নাম, অন্য জন হলেন 'ঋষি', আয়ের অধিকাংশই বিলিয়েছেন দেশবন্ধু
Chittaranjan Das Death Anniversary: ভারী বুটের শব্দ এলে, ঝিঁঝিঁ পোকারাও যেনও ইশারা দেয়। তবে যে, দু'চোখ ভরা স্বপ্ন,নিকশ অন্ধকারকেও শুষে নেয়। সে স্বপ্ন স্বাধীনতার। দিগন্ত ছুঁয়ে যাত্রা শুরু দেশবন্ধুর।
কলকাতা: '..পুলিশের কালো গাড়িতে এল, সন্ধ্যা। আলো জ্বালতেই জানলা দিয়ে বাইরে লাফিয়ে পড়ল, অন্ধকার।' সাল ১৯০৮। বঙ্গে তখন বিট্রিশরাজ। রাত নাকি দিন ? বোঝার উপায় নেই। ভারী বুটের শব্দ এলে, ঝিঁঝিঁ পোকারাও যেনও ইশারা দেয়। তবে যে, দু'চোখ ভরা স্বপ্ন,নিকশ অন্ধকারকেও শুষে নেয়। সে স্বপ্ন স্বাধীনতার। কদাচিৎ জ্যোৎস্নার আলো, জানলা থেকে ভিতরে ঢুকে পড়তেই চিকচিক করে ওঠে। মানিকতলায় মুরারীপুকুরে ধরা পড়ে যায় বারুদে ঠাসা তাজা বোমা। অন্যান্য বিস্ফোরক পদার্থে ভর্তি আস্ত কারখানার পর্দাফাঁস করে পুলিশ (Police)। গ্রেফতার হন অরবিন্দ ঘোষ (Aurobindo Ghosh)-সহ আরও একাধিক বিপ্লবী (Freedom Fighter of India)। আর এখানেই মোহনা। দিগন্ত ছুঁয়ে যাত্রা শুরু দেশবন্ধুর (Deshbandhu Chittarnjan Das)।
মামলায় জিতে একজন পেলেন নাম, অন্য জন হলেন 'ঋষি'
তখন সবে কলকাতা হাইকোর্টে পেশাদারি জীবনের ১৪ বছরে পা। ১৮৯৪ সালে কলকাতা হাইকোর্টে, ব্যারিস্টার হিসেবে নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ। পরিবারে প্রায় সবাই আইনজীবী। আর হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করার মাঝেই প্রকাশ্যে আসে বিখ্যাত আলিপুর বোমা মামলা। যেই মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন খোদ জাতীয়তাবাদী অরবিন্দ ঘোষ। মূলত তাঁর বিরুদ্ধে আলিপুর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ওঠে। তবে এই মামলায় চিত্তরঞ্জন দাশের কর্মদক্ষতা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। অরবিন্দ ঘোষের বিচার, তাঁকে পেশাগত মঞ্চের প্রথম সারিতে নিয়ে আসে। বেকসুর খালাস দেওয়া হয় অরবিন্দ ঘোষকে। একদিকে নাম যশ ছড়ায় চিত্তরঞ্জন দাশের। আর অন্যদিকে, তখন মুক্তি পেয়ে, বিপ্লবের সংস্পর্শ ত্যাগ করেন, পন্ডিচেরীতে অধ্যাত্ম সাধনায় ব্রতী হন ঋষি অরবিন্দ ঘোষ।
আয়ের অধিকাংশই অকাতরে বিলিয়েছেন তিনি
সেদিক থেকে দেখতে গেলে এই দুই মহামানবেরই বড় হওয়া এশহরেই। চিত্তরঞ্জন দাশের ১৮৭০ সালে। জীবনের অনেকটা সময়ই কেটেছে কলকাতার পটলডাঙা স্ট্রিটের এক বাড়িতে। বাবা, ভুবনমোহন দাশ। মা, নিস্তারিণী দেবী। আট সন্তানের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। আদিবাড়ি বিক্রমপুরের তেলিরবাগ। আর তাই কলকাতায় বরাবর কাটালেও, নিজেকে বিক্রমপুরবাসী বলেছেন আজীবনকাল। তবে পেশাগত জীবনে এত যার সাফল্য, সেই আয়ের অধিকাংশ নিজে কখনই ভোগ করেননি। দেশবাসীর খারাপ সময়ে, আজীবনকাল অকাতরে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে গিয়েছেন তিনি। ১৯১৭ সালে কলকাতার ভবানীপুরে বঙ্গীয় প্রাদেশিক অধিবেশনে সভাপতি রূপে রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে আত্মপ্রকাশ দেশবন্ধুর। এরপরেই পেশাগত আইনি জীবনে ইতি টানেন তিনি। মহাত্মা গাঁধীর (Mahatma Gandhi) অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন দেশবন্ধু।
জীবনের শেষ দিনটা কাটিয়েছিলেন পাহাড়ে
জীবনের শেষদিনে তিনি ছিলেন দার্জিলিংয়ে। মাত্র ৫৫ বছরেই তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। স্বাভাবিকভাবেই যিনি, আজীবনকাল সকলের জন্য ভেবেছেন, কাজ করে গিয়েছেন, তাঁর প্রয়াণের খবরে তাই শোকের ছায়া ছড়িয়েছিল সারা দেশেই। কলম ধরেছিলেন রবি ঠাকুরও। দেশবন্ধুর শায়িত দেহ কলকাতায় আনতে দার্জিলিং মেলের সঙ্গে একটি অতিরিক্ত কামরা যুক্ত করা হয়েছিল রেলের তরফে। পা রাখার জায়গা ছিল না সেদিন স্টেশনে।
আরও পড়ুন, সাঁতারে কী কী রোগ থেকে মুক্তি ? কী বলছেন চিকিৎসক ?
আরও পড়ুন, জানেন কি রান্নাঘরের এই মশলা জীবন বদলে দিতে পারে ?
ঋণ: সুভাষ মুখোপাধ্যায় (যত দূরেই যাই), পশ্চিমবঙ্গ সরকার, সরকারি ওয়েবসাইট, ডকুমেন্টারি।