ফেসবুকে বিদেশি মহিলা সেজে ২.৫ কোটি টাকার প্রতারণা, গ্রেফতার বিহারের ব্যক্তি
পুলিশ জানতে পেরেছে, ফেসবুকে ভুয়ো প্রোফাইল খুলে দামী উপহার ও পুরস্কারের টোপ দেখিয়ে তিনি অনেক নাইজিরীয়কেও প্রতারিত করেছেন।
জয়পুর: ফেসবুকে ফেক প্রোফাইল খুলে বন্ধুত্বের ফাঁদ পেতে এক মহিলার আড়াই কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করল রাজস্থান পুলিশ।
রবিবার ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, নীরজ সুরি নামে ওই ব্যক্তি বিহারের বাসিন্দা। জানা গিয়েছে, ফেসবুকে ফেক প্রোফাইল খুলে ওই মহিলার কাছে নিজেকে রেবেকা ক্রিস্টিন বলে পরিচয় দেন নীরজ।
পুলিশ জানিয়েছে, সাইবার অপরাধের শিকার হওয়া ওই মহিলার নাম গুঞ্জন শর্মা। বাড়ি রাজস্থানের সওয়াই মাধোপুরে। এহেন রেবেকার ছদ্মবেশে গুঞ্জনের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতান নীরজ।
নিজেকে একজন বিধবা ও ক্যান্সারে আক্রান্ত বলে গুঞ্জনকে পরিচয় দেন নীরজ। জানান, তাঁর ২৮ কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে। গুঞ্জনকে তিনি আরও জানান যে, তাঁর কোনও উত্তরাধিকারী নেই। ফলে, তিনি তাঁর যাবতীয় সম্পত্তি গুঞ্জনকে দিতে চান।
এরপর, নীরজ জানান যে, তাঁর আইনজীবী বারমেক্স ও এক ভারতীয় প্রতিনিধি বৈন জনসন গুঞ্জনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিস্তারিত তথ্য় ও গোটা প্রক্রিয়া জানাবেন।
সেইমতো, ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিপার্টমেন্ট থেকে একটি ই-মেল পান গুঞ্জন। সেখানে যা বলা হয়েছিল, সেই অনুযায়ী, মেলে পাঠানোর বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট নম্বরে গুঞ্জন মোট আড়াই কোটি টাকা ট্রান্সফার করেন।
গুঞ্জনের দাবি, ই-মেলে বলা হয়েছিল, বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী ও উপহার কাস্টমস বাজেয়াপ্ত করে রেখেছে। সেগুলি ছাড়াতে টাকা লাগবে। এছাড়া, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ফি, প্রসেসিং ফি, আইনজীবীর খরচ সহ বিভিন্ন খাতে কী খরচ করতে হবে, তা বলা ছিল।
প্রতারণার শিকার হয়েছেন বুঝতে পেরে পুলিশে অভিযোগ দাখিল করেন গুঞ্জন। অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে রাজস্থান পুলিশ।
রাজস্থান পুলিশের ডিআইজি (স্পেশাল অপারেশন্স গ্রুপ) শরৎ কবিরাজের নেতৃত্বে গঠন হয় টিম। ই-মেল থেকে প্রাপ্ত অ্যাকাউন্ট ট্রেস করে জানা যায় ওই অভিযুক্তর অফিস মুসোরী ও দেরাদুনে রয়েছে।
পুলিশ জানতে পারে, ভুয়ো চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট-এর কার্ড নিয়ে দিল্লি, মুসোরী ও দেরাদুনে দফতর ফেঁদে বসেছিলেন অভিযুক্ত। সেই দিয়ে জিএসটি, আইটিআর, প্যান ও আধার কার্ডের সহায়তায় ভুয়ো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে নীরজ বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিতেন।
পুলিশ আরও জানতে পারে, কমিশনের ভিত্তিতে কয়েকজন নাইজিরীয়কে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলতেও সাহায্য করতেন নীরজ। এমনকী, ফেসবুকে ভুয়ো প্রোফাইল খুলে দামী উপহার ও পুরস্কারের টোপ দেখিয়ে তিনি অনেক নাইজিরীয়কেও প্রতারিত করেছেন।
পুলিশ জানতে পেরেছে, আইনের চোখকে ফাঁকি দিতে গত ৫ বছরে ৬টি বিভিন্ন জায়গায় দফতর খুলেছিলেন নীরজ। যদিও, শেষ পর্যন্ত সেই আইনের শিকলে বাঁধা পড়লেন তিনি।