DSP Humayun Bhat: কাশ্মীরে জঙ্গিদের গুলিতে ঝাঁঝরা তরতাজা ছেলে, ফুল ছোঁয়ালেও বড্ড ভারী ঠেকল কফিন, ভেঙে পড়লেন একদা পুলিশকর্তা বাবা
Jammu And Kashmir: অবসর জীবনে পৌঁছে তরতাজা ছেলের কফিনে ফুল ছোঁয়াতে গিয়ে কার্যতই পাথর হয়ে গেলেন প্রাক্তন পুলিশকর্তা বাবা।
নয়াদিল্লি: জন্মসূত্রেই দেশের অন্যতম অশান্ত অঞ্চলটির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে পড়েছিলেন। উপত্যকা জুড়ে সরকারি বিরোধী আন্দোলন যখন চরমে, সেইসময়ও কর্তব্যপালন থেকে বিরত হননি একচুল। বরং বাবার দেখাদেখি ছেলেও জম্মু ও কাশ্মীরের প্রশাসনে অংশ নিয়েছিলেন। শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ থেকে জনসাধারণকে রক্ষা করতেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু শেষটা যে এমন হবে, তা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি গোলাম হাসান ভাট। অবসর জীবনে পৌঁছে তরতাজা ছেলের কফিনে ফুল ছোঁয়াতে গিয়ে কার্যত পাথর হয়ে গেলেন তিনি। কিন্তু ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল ছেলের কফিন কাঁধে চাপতেই। (DSP Humayun Bhat)
বুধবার জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগে জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছেন সেনা ও পুলিশের তিন আধিকারিক। মেজর আশিস ধোনাক, ১৯ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের কর্নেল মনপ্রীত সিংহ এবং উপত্যকার পুলিশের ডিএসপি হুমায়ুন ভাট শহিদ হন। ২৯ বছর বয়সি হুমায়ুনের বাবা গোলাম হাসান। নিজেও দীর্ঘ সময় পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। জম্মু ও কাশ্মীরের অবসরপ্রাপ্ত ইনস্পেক্টর জেনারেল গোলাম হাসান। ২০১৮ সালে অবসর গ্রহণ করেন। বাবাকে দেখেই এক পেশায় আসা হুমায়ুনের। জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের ২০১৮ ব্যাচের অফিসার ছিলেন তিনি। (Jammu And Kashmir)
Humayun Bhat, a DSP who was killed today at the age of only 29, is Ghulam Hassan Bhat saheb, a retired DIG of the J&K Police. 😭
— CAPF Seema Bhawani 🇮🇳 (@seema_bhawani) September 14, 2023
Salute to braveheart. Om Shanti🙏🪖
Jammu and Kashmir #Anantang #Encounter #JammuKashmirPolice #JammuKashmir #IndianArmy #HindiDiwas pic.twitter.com/TnFzVNDgMJ
অধস্তন কর্মীদের কাছেও বন্ধুর মতো ছিলেন হুমায়ুন। গুরুদায়িত্ব কাঁধে থাকা সত্ত্বেও মুখে হাসি ঝুলে থাকত সারাক্ষণ। গত বছরই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন হুমায়ুন। দু'মাস আগে কন্যাসন্তানের বাবা হন। বুধবার যখন বদগামের বাড়িতে তেরঙ্গায় মোড়া, কফিনবন্দি দেহ পৌঁছয় হুমায়ুনের, তখনও অবিশ্বাস তাঁর স্ত্রীর চোখেমুখে। দু'মাসের মেয়েকে কোল থেকে কেউ একজন সরিয়ে নেন। তাতে কফিনের উপর আছড়ে পড়েন হুমায়ুনের স্ত্রী। পুত্রশোকে বিহ্বল হুমায়ুনের মা আঁকড়ে ধরেন ছেলের বাক্সবন্দি দেহটিকে। (Anantanag Encounter)
এতকিছুর মধ্যেই খুব শান্ত থাকতে দেখা গিয়েছিল হুমায়ুনের বাবা গোলাম হাসানকে। দীর্ধদিনের অভিজ্ঞতার কারণেই হয়ত, ছেলের কফিনে ফুল ছোঁয়ানো থেকে, দেহ নিয়ে বাড়ি ফেরা, সবকিছু একাহাতে সামলান তিনি। সেই পর্যন্ত কোথাও ভেঙে পড়তে দেখা যায়নি তাঁকে। কিন্তু বাড়ির উঠোন থেকে যখন ছেলের কফিন কাঁধে উঠল, সেখানেই বাঁধ ভাঙল তাঁর সব ধৈর্য, সহ্য, আবেগ। অঝোরে কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি। কর্মজীবনে এমন বহু সহকর্মীর কফিন তুলেছেন, কিন্তু ছেলের কফিন এত ভারী হতে পারে, তা বোধহয় আগের মুহূর্ত পর্যন্তও উপলব্ধি করতে পারেননি তিনি। তাই কাঁধে কফিন নিয়ে হাঁটতে গিয়ে পা টলমল করে উঠল। পরিস্থিতি ঠাহর করতে পেরে দু'দিক থেকে তাঁকে ধরলেন দু'জন। সেই অবস্থাতেই ছেলেকে সমাধিস্থ করলেন গোলাম হাসান।
#WATCH | Jammu and Kashmir: Last rites of DSP of J&K Police Humayun Muzammil Bhat, who lost his life in the Anantnag encounter, performed in Budgam. pic.twitter.com/xwN04vK057
— ANI (@ANI) September 13, 2023
গোলাম হাসান এবং হুমায়ুনকে যাঁরা চিনতেন, তাঁদের সকলের কাছেই এই শোক বড্ড ভারী। সেনার তরফেও বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে, হুমায়ুনের মৃত্যুতে বড় ক্ষতি হয়ে গেল। কিন্তু এমন ক্ষতি আর কত সইতে হবে প্রশ্ন নিহতদের পরিবার-পরিজনের। বুধবারের ঘটনার নেপথ্যে স্থানীয় জঙ্গি সংগঠন TRF-এর হাত রয়েছে বলে জানা গিয়েছে, যাদের সীমান্তের ওপার থেকে মদত জোগায় পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবা। উপত্যকার বিশেষ মর্যাদা খর্ব হওয়ার পর ওই সংগঠন গড়ে ওঠে। কিন্তু গত কয়েক বছরেই কাশ্মীরে কার্যত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তারা। তাই কেন্দ্রীয় সরকার বার বার উপত্যকায় শান্তি ফিরেছে বলে যে দাবি করছে, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।