Julian Assange Free: ইরাক-আফগানিস্তানে নিরীহদের হত্যা নিয়ে আমেরিকার গোপন নথি ফাঁস, আজ জেল থেকে বেরোলেন আসাঞ্জ
Julian Assange: দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর সম্প্রতি আমেরিকার সঙ্গে একটি চুক্তি হয় আসাঞ্জের।
ওয়াশিংটন: আফগানিস্তান, ইরানে কীভাবে হামলা চালাচ্ছে আমেরিকা, নিরীহ মানুষের উপর কী নিদারুণ অত্যাচার চলছে, সেই নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করে তাঁর সংস্থা। আমেরিকা সরকারের একের পর এক গোপন ফাইল ফাঁস করে দেয় তারা। সেই নিয়ে গত দেড় দশক ধরে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা WikiLeaks-কে নিয়ে টানাপোড়েন চলছিল। এবার আমেরিকার সঙ্গে সমঝোতা করে দীর্ঘদিনের কারাবাস কাটিয়ে বেরোলেন সংস্থার মালিক জুলিয়ান আসাঞ্জ। (Julian Assange Free)
দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর সম্প্রতি আমেরিকার সঙ্গে একটি চুক্তি হয় আসাঞ্জের। ঠিক হয়, দেশের সেনাবাহিনীর গোপন নথি ফাঁস নিয়ে আদালতে দোষ স্বীকার করবেন তিনি। বেআইনি ভাবে তিনি আমেরিকার সেনার গোপন ফাইল হাতিয়েছিলেন এবং তা ফাঁস করে দিয়েছিলেন বলে মেনে নেবেন। গুপ্তচরবৃত্তি আইন লঙ্ঘন করেছেন বলে স্বীকার করবেন। বিনিময়ে আমেরিকার বিচারবিভাগ তাঁকে মুক্ত করবে। সেই মতো মঙ্গলবার ব্রিটেনের বেলমার্শ ম্যাক্সিমাম সিকিওরিটি জেল থেকে মুক্তি পেলেন আসাঞ্জ। মোট ১ হাজার ৯০১ দিন ওই জেলে বন্দি ছিলেন তিনি। (Wikileaks Espionage Case)
এখনও পর্যন্ত যে তথ্য মিলেছে, সেই অনুযায়ী, আসাঞ্জ এখন মুক্ত। ব্রিটেন ছেড়েছেন তিনি। বুধবার সকালে আমেরিকার ভূখণ্ডে হাজির হবেন তিনি। মারিনা আইল্যান্ড আদালতে দোষ স্বীকার করলে আসাঞ্জকে ৬২ মাসের সাজা শোনানো হতে পারে বলে খবর, ব্রিটেনের জেলে কাটানো পাঁচ বছরও তার অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ নিজের দেশ অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যেতে পারবেন তিনি।
আরও পড়ুন: Hajj Death: তীব্র গরমের জের, হাজারের বেশি হজ যাত্রীর মৃত্যুর কথা জানাল সৌদি আরব
আমেরিকার সেনার গোপন নথি প্রকাশের জেরে ২০১০ সালে খবরের শিরোনামে উঠে আসেন আসাঞ্জ। অভিযোগ ওঠে, আমেরিকার সেনা গোয়েন্দা বিভাগের বিশ্লেষক চেলসি ম্যানিংকে দিয়ে কূটনৈতিক এবং সামরিক নথিপত্র চুরি করান তিনি। পরে সেগুলি নিজের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে দেন। সেনার গোপন নথি প্রকাশ করে আসাঞ্জ আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার উপর বিপদ ডেকে এনেছেন যেমন, তেমনই আমেরিকা এবং তাদের বন্ধুদেশগুলির ক্ষতি করে শত্রুপক্ষকে সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন।
আসাঞ্জের সংস্থা WikiLeaks যে নথিপত্র প্রকাশ করেছিল, তাতে ইরাকে আমেরিকার অভিযান সংক্রান্ত ৪ লক্ষ নথি ছিল। ওই গোপন নথি অনুযায়ী, ইরাকে নিরীহগ মানুষদের উপর অত্যাচার চলছে বলে অভিযোগ এসেছিল আমেরিকার হাতে। হাজার হাজার ইরাকি নাগরিক কচুকাটা হচ্ছেন বলে খবর ছিল পেন্টাগনের কাছে। ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয় ১ লক্ষ ৯ হাজার মানুষকে, যাঁদের মধ্যে নিরীহ ইরাকি নাগরিকের সংখ্যা ছিল ৬৬ হাজার ৮১, শত্রুপক্ষ বলে চিহ্নিত করা হয় ২৩ হাজার ৯৮৪ জন নিহতকে ইরাকি সেনার ১৫ হাজার ১৯৬ জন মারা যান, জোটসেনার ৩ হাজার ৭৭১ জন প্রাণ হারান।
২০০৭ সালের একটি ভিডিও-ও প্রকাশ করে WikiLeaks, যাতে আমেরিকার অ্যাপাচে হেলিকপ্টার থেকে নির্বিচারে গুলি চালানোর দৃশ্য ধরা পড়ে। এত মানুষের মৃত্যুর খবর থাকা সত্ত্বেও আমেরিকা তা রুখতে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে দাবি করা হয়। এমনকি নিরীহ নাগরিকদের মৃত্যুর পরিসংখ্যান নেই বলে যে দাবি করা হয় পেন্টাগনের তরফে, তাও অসত্য বলে উঠে আসে। মানুষের সামনে সত্য তুলে ধরতেই ওই গোপন নথি ফাঁস করা হয়েছে বলে সেই সময় জানান আসাঞ্জ।
আফগানিস্তান যুদ্ধ নিয়েও ৯০হাজার নথি প্রকাশ করে WikiLeaks, তাতে বলা হয়, কোনও রকম বিচার ছাড়া তালিবান নেতাদের ধরামাত্র মেরে ফেলার জন্য 'ব্ল্যাক ইউনিট' গড়া হয় গোপনে। তালিবানের হাতে যে শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র পৌঁছে গিয়েছিল, সেই তথ্য চাপা দেওয়া হয়। আমেরিকা এবং জোট সেনা ড্রোনের মাধ্যমে নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে আফগানিস্তানে, এমন তথ্যও উঠে আসে। তালিবান, বোমা, গুলি, অস্ত্রশস্ত্র, ক্ষেপণাস্ত্র পাচ্ছে কোথা থেকে, সেই প্রশ্ন যেমন ওঠে, তেমনই বারাক ওবামা সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে এতে। যদিও সেই সময় ওবামা সরকার পূর্বতন সরকারের গাফলতি ছিল বলে পাল্টা দাবি করে।
WikiLeaks ওই সব গোপন তথ্য ফাঁস করার পর, শোরগোল পড়ে যায় সর্বত্র। এই ঘটনায় ৩৫ বছরের সাজা হয়েছে ম্যানিংয়ের। সরকারি নথি ফাঁস, গুপ্তচর আইন লঙ্ঘনের দায়ে জেলে রয়েছেন তিনি। যদিও ২০১৭ সালে তাঁর সাজা কমানোর আর্জি মঞ্জুর করেন ওবামা। সার বছর জেল খেটে বেরিয়ে আসেন তিনি।
অন্য দিকে, আসাঞ্জ প্রথমে লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাসে আশ্রয় নেন। একটি মামলায় ইংল্যান্ডের আদালত তাঁকে সুইডেনে প্রত্যর্পণের নির্দেশ দিলে রাজনৈতিক আশ্রয় পান তিনি। ২০১৯ সালে ইকুয়েডকর সরকার আসাঞ্জকে আশ্রয় দেওয়া থেকে হাত তুলে নেয়। এর পর তাঁকে গ্রেফতার করে ব্রিটিশ পুলিশ। সেই থেকে জেলে ছিলেন। জেলে ২x৩ মিটারের কুঠুরিতে আসাঞ্জকে একাকী ফেলে রাখা হয় বলে জানায় Wikileaks. বিভিন্নমহল থেকে এ নিয়ে আপত্তি উঠলেও আসাঞ্জের পরিস্থিতি পাল্টায়নি। সংবাদজগতে তো বটেই, পৃথিবীর সর্বত্র নায়কে পরিণত হন আসাঞ্জ। বাক স্বাধীনতার উপর রাষ্ট্রের আঘাতের বিরুদ্ধে যে লড়াই, তার মুখ হয়ে ওঠেন আসাঞ্জ। অস্ট্রেলিয়ায় তাঁর স্ত্রী-সন্তান জুলিয়ানের জন্য অপেক্ষা করছেন।