উচ্চতা, পড়াশোনা, বয়স কিছুই মিলছে না! হাড়ের বয়স নির্ধারণের পরীক্ষা হবে অমৃতাভর
সব মিলিয়ে মৃত থেকে হঠাৎই জীবিত হয়ে ওঠা অমৃতাভ-রহস্যের জট কাটাতেই এখন মরিয়া চেষ্টা করছে সিবিআই।
কলকাতা: জ্ঞানেশ্বরী প্রতারণাকাণ্ডে অভিযুক্ত অমৃতাভ চৌধুরীর বয়স নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। উত্তর পেতে ধৃতের অসিফিকেশন বা হাড়ের বয়স নির্ধারণের পরীক্ষা করা হবে। DNA পরীক্ষারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গোয়েন্দারা। ধোঁয়াশা রয়েছে তাঁর উচ্চতা ও পড়াশোনা নিয়েও।
এ যেন সিনেমার চিত্রনাট্য। যাঁর মৃত্যুর জেরে সরকারি চাকরি পেয়েছে পরিবার, আর্থিক সাহায্যও মিলেছে, সেই তাঁরই হঠাৎ জীবিত থাকার চাঞ্চল্যকর তথ্য। কিন্তু, এই কি সেই?এই অমৃতাভ চৌধুরীই কি সরকারি খাতায় ২০১০ সালে জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় মৃত অমৃতাভ চৌধুরী? তদন্তকারীরা বলছেন, এই যে সেই, তা মনে করার একাধিক পোক্ত কারণ ও যুক্তি আছে। কিন্তু, তাঁর সঙ্গে বেশকিছু ধোঁয়াশাও রয়েছে!
এই যেমন বয়স। জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় মৃতদের তালিকায় থাকা অমৃতাভ চৌধুরীর সেই সময় বয়স ছিল ২৮। অর্থাৎ, এখন তাঁর বয়স হওয়ার কথা ৩৯ বছর। অথচ বাস্তবে যে অমৃতাভ চৌধুরী কাঠগড়ায়, তাকে দেখে মনে হচ্ছে বয়স ৩০-এর আশপাশে।
কী করে এত ফারাক? তাহলে কি এ সে নয়? CBI সূত্রে খবর, অমৃতাভ চৌধুরীর প্রকৃত বয়স জানতে অসিফিকেশন টেস্ট করা হবে। এই পরীক্ষায় হাড়ের গঠন দেখে বয়স নির্ধারণ করা যায়। ধন্ধ আরও একটি জায়গাতেও রয়েছে। তা হল অমৃতাভর পড়াশোনা।
BP পোদ্দার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রাক্তনী অমৃতাভ চৌধুরী। ম্যাকাউট কর্তৃপক্ষের দাবি, ৭৫ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়ে ইলেক্টিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক অমৃতাভ।
ম্যাকাউট উপাচার্য সৈকত মৈত্র জানাচ্ছেন, 'খুব মেধাবি ছাত্র, ভাল ছাত্র ছিল অমৃতাভ। জয়েন্টে ভাল র্যাঙ্ক করেছিল। ও যে সময় পাস করেছে, তখন অনেক চাকরির সুযোগ ছিল।' অথচ, তদন্তকারীদের দাবি জেরায় ধৃত অমৃতাভ দাবি করছেন, তিনি না কি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কিছুই জানেন না। এখানেই প্রশ্ন, অমৃতাভ কি লুকোচ্ছেন? না কি অন্য রহস্য?
অমৃতাভর উচ্চতা নিয়েও ধন্ধ বেঁধেছে। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, অমৃতাভর কয়েকজন ঘনিষ্ঠ দাবি করেছেন, সরকারি খাতায় মৃত্যুর সময়, অর্থাৎ আটাশ বছর বয়সে তাঁর উচ্চতা ছিল ৫.৪। কিন্তু, এখন দেখা যাচ্ছে ৫.৬। এখানেই প্রশ্ন একজন প্রাপ্তবয়স্কর উচ্চতা কীভাবে পরে এভাবে বাড়তে পারে?
না কি এটাও তদন্তকারীদের ঘোল খাওয়ানোর একটা চেষ্টা? এগুলি কি একই ব্যক্তির? তাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। অমৃতাভ চৌধুরীরি ডিএনএ টেস্ট এদিন হয়নি। বুধবার তা হওয়ার কথা।
শিয়ালদা DRM অফিসে, কাজ করেন অমৃতাভ চৌধুরীর বোন মহুয়া চৌধুরী পাঠক। ভাইয়ের মৃত্যুর গ্রাউন্ডেই তিনি এই চাকরি পেয়েছিলেন। কিন্তু, হঠাৎই অফিসে তাঁর দেখা নেই। অন্য়দিকে বাড়ির সামনে পোস্টবক্সে বাবা ও ছেলের নাম রয়েছে, মেয়ের নাম লেখা কাগজ ছেড়া রয়েছে।
অভিযুক্ত অমৃতাভর বাবা বলছেন, 'রেলকে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন। রেলের কাছে তো লিস্ট আছে।' সব মিলিয়ে মৃত থেকে হঠাৎই জীবিত হয়ে ওঠা অমৃতাভ-রহস্যের জট কাটাতেই এখন মরিয়া চেষ্টা করছে সিবিআই।