Maharaj Film Controversy: ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে যৌন উৎপীড়নের মামলা, উত্তাল হয়েছিল পরাধীন ভারত, বিতর্কে আমিরের ছেলের ছবিও
Maharaj Libel Case: যে ঘটনাকে ছবির বিষয়বস্তু করে তুলেছেন সিদ্ধার্থ, সেটি পরাধীন ভারতের ঘটনা।
মুম্বই: মুক্তির আগেই বিতর্কে আমির খানের ছেলে জুনেইদ খান। তাঁর অভিনীত প্রথম ছবি 'মহারাজ'-এর মুক্তিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে গুজরাত হাইকোর্ট। ১৪ জুন অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল 'মহারাজ' ছবিটির। আইনে ঝামেলায় বর্তমানে আটকে গিয়েছে ছবিটির মুক্তি। কেন ছবিটিকে ঘিরে এত বিতর্ক, এর সঙ্গে রাজনীতির কী যোগ, বুঝতে হলে ফিরতে হবে অতীতে। (Maharaj Film Controversy)
১৮৬২ সালের মহারাজ লিবেল মামলার উপর নির্ভর করে 'মহারাজ' ছবির গল্প বুনেছেন পরিচালক সিদ্ধার্থ পি মালহোত্র। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে বোনা ছবির গল্পের দুই মূল চরিত্র, সাংবাদিক তথআ সমাজ সংস্কারক করসনদাস মুলজির চরিত্রে অভিনয় করছেন জুনেইদ। বল্লভাচার্য গোষ্ঠীর প্রধান, ধর্মগুরু যদুনাথ ব্রিজরতন মহারাজের চরিত্রে রয়েছেন জয়দীপ আলাওয়াত। (Maharaj Libel Case)
যে ঘটনাকে ছবির বিষয়বস্তু করে তুলেছেন সিদ্ধার্থ, সেটি পরাধীন ভারতের ঘটনা। ১৮৬২ সালে বম্বে হাইকোর্টে মহারাজ লিবেল মামলাটি ওঠে। ধর্মাচারের নামে যদুনাথ মহারাজের বিরুদ্ধে মহিলা শিষ্যদের যৌন উৎপীড়নের অভিযোগ তোলেন মুলজী। তাঁর নির্ভীক সাংবাদিকতা, তদন্তমূলক রিপোর্ট, শুধুমাত্র অপরাধচক্রেরই পর্দাফাঁস করেনি, সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমের গুরুত্বও বাড়িয়ে তোলে। কিন্তু অজস্র মানহানির মামলার মুখে পড়তে হয় মুলজীকে। হেনস্থা হতে হয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে।
১৮৩২ সালে গুজরাতের ভাবনগরে বৈষ্ণব পরিবারে জন্ম মুলজীর। তাঁর পরিবার বল্লভাচার্যের অনুগামী ছিল। পুশতিমার্গ গোষ্ঠী নামেও পরিচিত তাঁর পরিবার,যাদের ধর্মগুরুকে মহারাজ বলেসম্বোধন করা হতো। ২৩ বছর বয়সে নিজের পত্রিকা 'সত্যপ্রকাশ'-এর প্রতিষ্ঠা করেন মুলজী। ১৮৫৫ সালে নিজের পত্রিকায় 'হিন্দুও নো আসলি ধর্ম আনে অত্যার্ন পাখন্ডি মাতো' শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন মুলজী, বাংলায় যার অর্থ 'হিন্দুদের প্রকৃত ধর্ম এবং এখনকার দ্বিচারিতা'।
ওই প্রতিবেদনে মুম্বইয়ে মহারাজদের ধর্মাচরণ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়ার পর বল্লভাচার্য গোষ্ঠীর অন্য মহারাজরা সুরতের যদুনাথ মহারাজের দ্বারস্থ হন। মুলজীর মোকাবিলা করতে আহ্বান জানান তাঁকে। এর পর যদুনাথ মহারাজের তরফে মানহানি মামলা ঠোকা হয় মুলজী এবং নানাভাই রানিনা নামের একজনের বিরুদ্ধে।
সেই মামলার শুনানি চলাকালীন মোট ৩১ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করেন যদুমাথ মহারাজ। মুলজী খামোকা মহারাজদের বদনাম করছেন বলে সাক্ষ্য দেন তাঁরা। এর পাল্টা মুলজী ৩৩ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করেন, যাঁরা ধর্মচগুরু এবং তাঁদের আচরণের বিরুদ্ধে বম্বের তদানীন্তন সুপ্রিম কোর্টে সাক্ষ্য দেন। দীর্ঘ শুনানিপর্ব চলে সেই সময়। শেষ পর্যন্ত তদানীন্তন বিচারপতি জোসেফ আর্নল্ড মুলজীর যে রায় দেন, তা মুলজীর পক্ষেই যায়।
ওই মামলা নিয়ে সেই সময় প্রচুর লেখালেখি হয় দেশ-বিদেশের পত্র-পত্রিকায়। রায় দিতে গিয়ে সেই সময় বিচারপতি আর্নল্ড বলেন, "একজন সাংবাদিক আসলে সমাজের শিক্ষক। আধুনিক সমাজের অন্যতম স্তম্ভ সংবাদমাধ্যম, যার আসল কাজ হল, সমাজকে শিক্ষিত করা, সমাজকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং বুজরুকির খপ্পর থেকে সমাজকে জ্ঞানের আলোয় উৎসারিত করা।
যদুনাথ মহারাজের বিরুদ্ধে এই আইনি লড়াইয়ের জন্য সমাজেও কম কোণঠাসা হতে হয়নি মুলজীকে। কিন্তু সমাজ সংস্কারের পথ থেকে সরে আসেননি তিনি। গুজরাতি জ্ঞানপ্রকাশক মণ্ডলীর সদস্য ছিলেন তিনি। বিধবা বিবাহের পক্ষে লেখালেখি করতেন মুলজী। মায়ের মৃত্যুর পর এক বিধবা আত্মীয়ার কাছেই থাকতেন তিনি। বিধবা বিবাহের পক্ষে ওই লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর ওই আত্মীয়ার বাড়ি ছাড়তে হয় মুলজীকে।
তবে কোনও কিছুতেই দমানো যায়নি মুলজীকে। সেই সময় ধর্মাচরণের নামে মহারাজদের যে ক্ষমতা এবং সম্পদবৃদ্ধি হচ্ছিল, নিজেদের শ্রীকৃষ্ণের অবতার হিসেবে তুলে ধরে অসহায় মানুষকে যেভাবে ঠকাচ্ছিলেন তাঁরা, সেই নিয়ে সরব হন মুলজী। যৌন উৎপীড়নের বিষয়টি তার পরও ধামাচাপা পড়েছিল। মুলজীই প্রথম নিজের লেখায় সেই নিয়ে বিস্ফোরণ ঘটান। যদুনাথ মহারাজ নিজেও মহিলা শিষ্যদের সঙ্গমে বাধ্য করতেন বলে নিজের লেখায় দাবি করেন মুলজী। তখনকার দিনে মুলজীর বিরুদ্ধে ৫০ হাজার টাকার মানহানি মামলা দায়ের করেছিলেন যদুনাথ মহারাজ। মামলার শুনানি চলাকালীন একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসে। মহারাজদের অনেকের যৌন রোগ রয়েছে বলে জানা যায়, শিষ্যাদের নিয়ে কোথায় কুকর্ম করতেন তাঁরা, তাও প্রকাশ পায় ধীরে ধীরে। নির্যাতনের শিকার হওয়া মহিলারাও একে একে এগিয়ে আসেন।
সেই সময় এই মামলার মোকাবিলা করতে ১৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল মুলজীর। আদালত তাঁকে ১১ হাজার ৫০০ টাকা পুরস্কার দেয়। আদালত জানায়, ধর্মতত্ত্ব নয়, নৈতিক বোধের প্রশ্ন জড়িয়েছিল এই মামলার সঙ্গে। ধর্মের নামে নীতিবোধকে বিসর্জন দেওয়া চলে না। ১৮৭১ সালে মারা যান মুলজী। ভারতীয় সমাজ সংস্কারক হিসেবে আজও স্মরণীয় তিনি। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন এ নিয়ে ব্লগ লিখেছিলেন নরেন্দ্র মোদিও। মুলজীর ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন তিনি। সেই মুলজী বনাম যদুনাথ মহারাজের আইনি লড়াইয়ের উপর তৈরি ছবিই এখন বিতর্কে কেন্দ্রে। ছবিতে শ্রীকৃষ্ণের ভক্তদের অবমাননা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গুজরাত হাইকোর্টে সেই নিয়ে পিটিশন জমা পড়লে ছবিটির মুক্তি আটকে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: RSS News: 'অহঙ্কারই পতনের কারণ', RSS নেতৃত্বের নিশানায় কে? বিতর্কে পড়ে সাফাই দিল সঙ্ঘ