Adani Group: দফায় দফায় আয়কর হানা, নিমেষেই সাফ ময়দান, আবারও আদানির সহায় মোদি! সিমেন্ট চুক্তি ঘিরে বিতর্ক
Ambuja Cements-SIL Deal: চলতি মাসেই গুজরাতের সিমেন্ট সংস্থা সঙ্ঘী ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড অধিগ্রহণ করেছে আদানি গোষ্ঠীর মালিকানাধীন অম্বুজা সিমেন্ট।
নয়াদিল্লি: করফাঁকি থেকে শেয়ারে কারচুপির ভূরি ভূরি অভিযোগ সামনে এনেছিল রিসার্চ সংস্থা হিন্ডেনবার্গ সংস্থা। তাতেই বাজারে ধস নামতে শুরু করে আদানিগোষ্ঠীর শেয়ারে। সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা অসম্ভব বলে ধরে নিয়েছিলেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সব হিসেব-নিকেশকে মিথ্যে প্রমাণ করে একের পর এক মাইলফলক গড়ে চলেছে শিল্পপতি গৌতম আদানির সংস্থা, তাতে নবতম সংযোজন সিমেন্ট সংস্থা সঙ্ঘী ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের অধিগ্রহণ (Ambuja Cements-SIL Deal)। কিন্তু জাদুদণ্ডের ছোঁয়াতে এই অসাধ্যসাধন সম্ভব হয়নি, বরং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narenda Modi), তাঁর সরকার এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির স্পর্শ তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। (Adani Group)
চলতি মাসেই গুজরাতের সিমেন্ট সংস্থা সঙ্ঘী ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড অধিগ্রহণ করেছে আদানি গোষ্ঠীর মালিকানাধীন অম্বুজা সিমেন্ট। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৫০০০ কোটি টাকা দিয়ে সঙ্ঘী সিমেন্ট কিনে নিয়েছে আদানি গোষ্ঠী। চলতি সপ্তাহের গোড়াতেই চুক্তি স্বাক্ষর হয়। কিন্তু পর পর যে ঘটনাক্রম সামনে এসেছে এবং তার পর যে ভাবে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, রীতিমতো জোর-জবরদস্তি এই চুকতি স্বাক্ষর করা হয়েছে। সঙ্ঘী সিমেন্ট কিনতে আগ্রহী ছিল শ্রী সিমেন্ট নামের অন্য একটি সংস্থা। বিষয়টি চাউর হতেই দফায় দফায় শ্রী সিমেন্টে দফায় দফায় হানা দায়ে আয়কর দফতর। তাতে বাধ্য হয়ে পিছিয়ে যায় শ্রী সিমেন্ট। তার পর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সঙ্ঘী সিমেন্টের মালিকানা ওঠে আদানি গোষ্ঠীর হাতে।
কংগ্রেসের জনসংযোগ বিভাগের দায়িত্বে থাকা জয়রাম রমেশ বলেন, 'বিমানবন্দর থেকে বন্দর এবং সাম্প্রতিক কালে সিমেন্ট, আদানির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামা সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে সিবিআই, ইডি এবং আয়কর দফতরকে লেলিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে প্রতিযোগী সংস্থাগুলি দর হাঁকা থেকে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয় এবং শেষ মেশ আদানি গোষ্ঠীর হাতেই সব সম্পত্তির মালিকানা ওঠে'।
কী ভাবে শ্রী সিমেন্ট দর হাঁকা থেকে পিছিয়ে গেল এবং শেষ মেশ সঙ্ঘী সিমেন্টের মালিকানা আদানি গোষ্ঠীর হাতে উঠল, তার ঘটনাক্রমও তুলে ধরেন জয়রাম। তাতে দেখা গিয়েছে-
- ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম সিমেন্ট উৎপাদনকারী সংস্থা শ্রী সিমেন্টের সঙ্গে সঙ্ঘী ইন্ডাস্ট্রিজের কথাবার্তা চলছে বলে সামনে আসে।
- এর পর ২১ জুন পাঁচ জায়গায় শ্রী সিমেন্টের দফতরে, মালিকের দফতরে হানা দেয় আয়কর বিভাগ।
- ১৯ জুলাই সঙ্ঘী সিমেন্ট কেনার দৌড় থেকে নাম তুলে নেয় শ্রী সিমেন্ট।
- ৩ অগাস্ট আদানি গোষ্ঠীর মালিকানাধীন অম্বুজা সিমেন্ট সঙ্ঘী ইন্ডাস্ট্রিজ অধিগ্রহণ করে।
In our Hum Adani ke Hain Kaun (HAHK) series of 100 questions for PM Modi, the Congress party had pointed out how the Adani Group has repeatedly profited from well-timed, Modi-made raids by investigative agencies on its business competitors.
— Jairam Ramesh (@Jairam_Ramesh) August 5, 2023
The latest episode is the chronology… pic.twitter.com/fiCTDiRCne
গুজরাতের সঙ্ঘীপুরমে সঙ্ঘী ইন্ডাস্ট্রিজের যে ইউনিট রয়েছে, তা দেশের একক বৃহত্তম সিমেন্ট এবং ঝামা উৎপাদন কেন্দ্র। চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর, সঙ্ঘীপুরম বন্দরেও এখন থেকে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হবে আদানি গোষ্ঠীর। কংগ্রেসের দাবি, আদানির হাতে সঙ্ঘী সিমেন্ট এবং সেখানকার বন্দরের নিয়ন্ত্রণ তুলে দিতে চেষ্টায় কোনও ত্রুটি রাখেননি মোদি। জয়রাম লেখেন, 'হম আদানি কে হ্যায় কৌন সিরিজে প্রধানমন্ত্রীর জন্য ১০০টি প্রশ্ন তুলে ধরেছে কংগ্রেস। একেবারে দিনক্ষণ ধরে, কী ভাবে আদানির প্রতিদ্বন্দ্বি সংস্থাগুলির দফতরে মোদির পাঠানো কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি হানা দিল এবং শেষ মেশ কী ভাবে আদানির হাতে সংস্থার হাতে মালিকানা উঠল, তারও বিশদ তথ্য তুলে ধরা হল'। সংসদেও আগামী দিনে বিষয়টি উত্থাপিত করবেন বিরোধীরা। তবে কেন্দ্রীয় সরকার এবং আদানি গোষ্ঠীর তরফে এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
তবে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার ফলে আগামী দিনে ফুলে ফেঁপে উঠবে আদানি গোষ্ঠীর মালিকানাধীন অম্বুজা সিমেন্ট। ১০০ কোটি টন চুনাপাথর সঞ্চিত রয়েছে সঙ্ঘী সিমেন্টের। আগামী দু'বছরে তার সাহায্যে ১৫ মেট্রিক টন করে সিমেন্ট উৎপাদন করতে পারবে আদানিদের অম্বুজা সিমেন্ট। এর পাশাপাশি সঙ্ঘীপুরম বন্গদর ব্যবহার করে বড় জাহাজ ঢোকাতে পারবে তারা। এই চুক্তির ফলে সিমেন্ট উৎপাদনে কার্যত একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হেব আদানি গোষ্ঠীর। এ যাবৎ বছরে ৭৩.৬ মেট্রিক টন সিমেন্ট উৎপাদন করতে পারত তারা। সঙ্ঘী সিমেন্ট হাতে আসায় একধাক্কায় তা বেড়ে হবে ৭৩.৬ মেট্রিক টন। ২০২৫ নাগাদ তাদের উৎপাদন ক্ষমতা ১০১ মেট্রিক টনে পৌঁছবে বলে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।