আন্দামান: হ্যাভলক ও নীল দ্বীপ থেকে উদ্ধার করা হল ১৯০০ জনকে
নয়াদিল্লি: প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আন্দামানের হ্যাভলক ও নীল দ্বীপে আটকে পড়া প্রায় ১৯০০-র বেশি জনকে শুক্রবার সন্ধ্যে পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রক সূত্রে এমনটাই জানানো হল। এর মধ্যে হ্যাভলক থেকে উদ্ধার হয়েছেন ১৬১৪ জন। অন্যদিকে নীল দ্বীপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ২৮৯ জনকে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, বায়ুসেনার কপ্টারে করে নীল দ্বীপ থেকে বের করা হয়েছে ৬৫ জনকে। হ্যাভলক থেকে বের করা হয়েছে ২৩০ জনকে। ভারতীয় নৌসেনা ও উপকূলরক্ষী বাহিনীর জাহাজে করে হ্যাভলক থেকে বের করা হয়েছে ৬৪৩ জনকে। এছাড়া, নীল দ্বীপ থেকে বের করা হয়েছে ২২৪ জনকে। পাশাপাশি, হ্যাভলক থেকে বেসরকারি জাহাজে করে বের করা হয়েছে আরও ৭৪১ জনকে।
তৈরি ছিল জাহাজ। প্রস্তুত ছিল হেলিকপ্টার। শুক্রবার, আন্দামানে আবহাওয়ার সামান্য উন্নতি হতেই জোরকদমে শুরু হয় উদ্ধার কাজ। কোমর বেঁধে নেমে পড়ে সেনা-বায়ুসেনা-নৌসেনার সঙ্গে উপকূলরক্ষী বাহিনী। গত কয়েকদিনের দুর্যোগে আন্দামানের হ্যাভলক ও নীল দ্বীপে বহু পর্যটক। এ দিন সকালে, বৃষ্টি কিছুটা কমতেই শুরু হয় দ্বীপবন্দি পর্যটকদের উদ্ধারের কাজ। শুক্রবার সকাল থেকেই আন্দামানের আবহাওয়ার উন্নতি হয়। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, এ দিন সকালে বিশাখাপত্তনম উপকূল থেকে ৯৯০ কিলোমিটার দূরে ছিল ঘূর্ণিঝড় ভরদা। যার অভিমুখ ছিল উত্তর-পশ্চিমে অন্ধ্রপ্রদেশের দিকে।
হ্যাভলক দ্বীপে পৌঁছয় ‘কনকলতা বড়ুয়া’ ও ‘রাজবীর’ নামে উপকূলরক্ষী বাহিনীর দু’টি জাহাজ। প্রথম দফায়, ১২০ জন পর্যটককে নিয়ে হ্যাভলক থেকে পোর্ট ব্লেয়ার রওনা দেয় উপকূলরক্ষী বাহিনীর জাহাজ ‘কনকলতা বড়ুয়া’। দ্বিতীয় দফায় ১২২ জন পর্যটককে উদ্ধার করে পোর্ট ব্লেয়ার পৌঁছয় উপকূলরক্ষী বাহিনীর আরেকটি জাহাজ, ‘রাজবীর’। পরে বিভিন্ন পর্যায়ে আরও আটক পর্যটকদের উদ্ধার করা হয়। আগের থেকে বৃষ্টি কমলেও, রয়েছে ঝোড়ো হাওয়া। এরই মধ্যে উদ্ধার কাজে নামে বায়ুসেনার ৩টি এমআই-১৭ ভি-৫ কপ্টার। একইসঙ্গে ব্যবহার করা হয় স্থানীয় প্রশাসনের হাতে থাকা তিনটি পবন হংস কপ্টারকে।
উদ্ধারকাজে নামে নৌবাহিনীর ৬টি জাহাজ-- আইএনএস করমুখ, আইএনএস কুম্ভীর, আইএনএস বিট্রা, আইএনএস বারাটাং, এলসিইউ ৩৭ ও এলসিইউ ৩৮। ভুবনেশ্বরের কয়েকজন পর্যটক বৃহস্পতিবার রাতেই পোর্ট ব্লেয়ার বিমানবন্দরে পৌঁছন। কিন্তু, রাতে উড়ান পরিষেবা না থাকায় চরম বিপাকে পড়েন। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও সিআইএসএফের সঙ্গে বচসাতেও জড়িয়ে পড়েন অনেকে। শুক্রবার সকালে কলকাতায় এসে ক্ষোভ উগড়ে দেন আন্দামান ফেরত ভুবনেশ্বরের ওই পর্যটকরা। স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি আন্দামানের পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। আন্দামান-নিকোবরের উপরাজ্যপাল জগদীশ মুখী হোটেলগুলিকে নির্দেশ দিয়েছেন, আটকে পড়া পর্যটকদের থেকে থাকা-খাওয়ার খরচ না নিতে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের আবহবিদ এইচ আর বিশ্বাস বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় আন্দামানে আবহাওয়ার উন্নতি হবে। নতুন করে শক্তি সঞ্চয় না করলে দুর্বল হবে ঘূর্ণিঝড় ‘ভরদা’। দুর্বল হলে অন্ধ্রে তেমন প্রভাব পড়বে না। আন্দামান প্রশাসনের আশ্বাস, আবহাওয়ার উন্নতি হলে আরও দ্রুত শেষ করা হবে উদ্ধার কাজ।
ছবি ও ভিডিও প্রতিরক্ষামন্ত্রক সূত্রে প্রাপ্ত