মাত্র ১১ জনকে জাতীয় পুরস্কার দিলেন রাষ্ট্রপতি, দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা, বলছেন শিল্পীরা
নয়াদিল্লি: ৬৫ তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে। সাড়ে ছয় দশকের প্রথা ভেঙে এবার মাত্র ১১ জনের হাতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার তুলে দিলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। বাকিদের পুরস্কার দেন কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। এর প্রতিবাদে অনুষ্ঠান বয়কট করেন বহু শিল্পী। ক্ষোভের কথা জানিয়ে চিঠিও লেখেন তাঁরা। নগরকীর্তন ছবির জন্য ঋদ্ধি সেন সেরা অভিনেতার পুরস্কার নিতে গেলেও, অন্যান্য শিল্পীদের সুরেই প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, ‘সবাই হতাশ কারণ আমরা শেষমুহূর্তে জানতে পেরেছি রাষ্ট্রপতি সবার হাতে পুরস্কার তুল দেবেন না। আমার মনে হয় এটা অত্যন্ত অন্যায্য। কারণ, সারা দেশ থেকে শিল্পীরা পরিবারের লোকজনকে নিয়ে এখানে এসেছেন। তাঁরা রাষ্ট্রপতির হাত থেকেই পুরস্কার নিতে এসেছিলেন।’
নগরকীর্তনের পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় পুরস্কার নিতে যাননি। তিনি এ বিষয়ে বলেছেন, ‘আমরা পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করছি না। কিন্তু রাষ্ট্রপতির আমাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়ার কথা ছিল। এটার কোনও বিকল্প হয় না। আমাদের এ বিষয়ে কিছু জানানোও হয়নি।’
সেরা মহিলা প্লেব্যাক সঙ্গীতশিল্পীর পুরস্কার পাওয়া শাশা তিরুপতি বলেছেন, ‘এই পুরস্কার পেয়ে খুব ভাল লাগছে। কিন্তু আমাদের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের বিষয়ে আগে কিছু জানানো হয়নি। এ বিষয়ে আমার অনেকগুলি আপত্তির জায়গা আছে। এই অনুষ্ঠানের কয়েক ঘণ্টা আগে বোমা বিস্ফোরণের মতো খবরটা পাই। এক বছর আগে এই অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা হয়। তাই এটা মানা যায় না। যেভাবে গোটা বিষয়টি কার্যকর করা হল, সেটা আমার ভাল লাগেনি।’
বাহুবলী ২-এর প্রযোজক প্রসাদ দেবীনেনী বলেছেন, ‘এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও অন্যায্য ঘটনা। আমরা খুব হতাশ। সবাই রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নিতে চাইছিলেন। আমি এখানে এসেছি, কারণ রাষ্ট্রপতিকে অসম্মান করতে চাইনি।’
প্রাপকদের হাতে বরাবর জাতীয় পুরষ্কার তুলে দিয়ে থাকেন রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি একান্তই উপস্থিত থাকতে না পারলে উপ রাষ্ট্রপতি। বরাবরই এই ছবিই দেখে আসছে গোটা দেশ। একমাত্র ১৯৫৫ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার তুলে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। কিন্তু, সব প্রথারই ব্যাতিক্রম ঘটল এবার। পুরষ্কার তুলে দিলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার প্রদান অনুষ্ঠানে এই ছবি আগে কোনওদিন দেখা গেছে বলে মনে করতে পারছেন না অনেকেই! শেষমুহূর্তে জানানো হল মাত্র এগারোজনকে পুরষ্কার দেবেন রাষ্ট্রপতি! বাকিদের স্মৃতি ইরানি! এতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিভিন্ন রাজ্যের প্রথিতযশা শিল্পীরা। তাঁদের বক্তব্য, আমন্ত্রণপত্রে বলা হয়েছিল রাষ্ট্রপতি পুরষ্কার দেবেন, আর অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগে জানানো হয়, তা দেবেন মোদী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী! এরপরই অনুষ্ঠান বয়কট করেন দেশের ৬২জন প্রথিতযশা শিল্পী, যাঁরা এ বছর জাতীয় পুরষ্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন।
এবার জাতীয় পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল দু’ভাগে। প্রথম দফায় পুরস্কার তুলে দেন কেন্দ্রীয় তথ্য সম্প্রচারমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি এবং প্রতিমন্ত্রী রাজ্যবর্ধন সিংহ রাঠৌড়। দ্বিতীয় দফায় মাত্র ১১ জন প্রাপকের হাতে জাতীয় পুরস্কার তুলে দেন রাষ্ট্রপতি।
শিল্পীদের দাবি, ৬৫ বছরের প্রথায় যে এতবড় রদবদল হচ্ছে, একথা বুধবার একেবারে শেষ মুহূর্তে তাঁদের জানান ডিরেক্টরেট অফ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল চৈতন্য প্রসাদ। ডিরেক্টরেট অফ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল চৈতন্য প্রসাদকে একজোটে চিঠি পাঠিয়ে তাঁরা ক্ষোভ উগরে দেন।
চিঠিতে ক্ষুব্ধ শিল্পীরা লেখেন, ‘এই সম্মানীয় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করার সময় বলা হয়, আমাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন রাষ্ট্রপতি। প্রোটোকল মেনে চলা একটি অনুষ্ঠান সম্পর্কে এরকম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে ভুলে গেলে সেটা বিশ্বাসভঙ্গের সামিল। ৬৫ বছরের প্রথা যেভাবে এক মহূর্তে বদলে দেওয়া হচ্ছে, সেটা দুর্ভাগ্যজনক। আমরা শিল্পী। নিজেদের স্বপ্ন আঁকড়ে ধরে এমন কাজ করি, যেখানে সম্মান সহজে আসে না। জাতীয় পুরস্কারের মতো সম্মান পাওয়ার সুযোগ সারা জীবনে একবারই আসে। তা থেকে বঞ্চিত হব জেনে আমাদের মন ভেঙে গিয়েছে। আমরা এটা জেনে অত্যন্ত হতাশ যে, রাষ্ট্রপতি মাত্র ১১ জনকে পুরস্কার দেবেন, বাকি ১২০ জনকে নয়।’
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব অশোক মালিক অবশ্য জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি কোনও অনুষ্ঠানে একঘণ্টার বেশি থাকেন না। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এটাই প্রোটোকল। সপ্তাহখানেক আগেই বিষয়টি কেন্দ্রীয় তথ্যসম্প্রচার মন্ত্রককে জানানো হয়। শেষ মুহূর্তে যেভাবে এনিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, তাতে রাষ্ট্রপতি ভবন বিস্মিত।