নিমতা হত্যাকাণ্ড: হল গাড়ির ফরেন্সিক, বুলেটের ব্যালিস্টেক পরীক্ষা, এখনও অধরা আততায়ী
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ভিড়ের মধ্যেই মিশেছিল আততায়ী। মৃত্যু নিশ্চিত কি না জানতে, দেবাঞ্জনের গাড়ির ভিতরে উঁকি দিয়েছিল মোট ৩ জন।

উত্তর ২৪ পরগনা: নিমতায় দেবাঞ্জন দাসের মৃত্যুর ঘটনায় ঘনীভূত রহস্য। উঠে আসছে একাধিক প্রশ্ন। আততায়ী কি গাড়ির ভিতরেই ছিল? নাকি বাইরে থেকে এসে গুলি চালিয়ে চম্পট দেয়? গাড়ির চাকার একাংশ কীভাবে বড় ধরনের ফুটো? আততায়ী নিহতের পূর্ব পরিচিত কিনা, সে সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। ১০ দিন আগে যাকে নিছকই পথ দুর্ঘটনা বলে দাবি করছিল পুলিশ, সেই মামলাতেই চাঞ্চল্যকর মোড়। নিহত দেবাঞ্জন দাসের গলা ও ডান হাতের কনুইয়ে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেল ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে। পুলিশ সূত্রের দাবি, গলার বাঁ দিক দিয়ে ঢুকে বেরিয়ে যায় একটি গুলি। সম্ভবত তার জেরেই দেবাঞ্জনের বাঁ দিকের চোয়ালের দু’টি দাঁত ভাঙা অবস্থায় পাওয়া যায়। আরেকটি গুলি ডান কনুইয়ের কাছে লেগে বেরিয়ে যায়। এই ঘটনা সামনে আসার পর বড়সড় প্রশ্নের মুখে নিমতা থানার ভূমিকা। বিতর্কের মুখে বৃহস্পতিবার স্বতঃপ্রণোদিত খুনের মামলা রুজু করে নিমতা থানা। যদিও দেবাঞ্জনের পরিবারের তরফে দায়ের করা মামলায় প্রিন্স সিংহ সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করা হয়েছে। এই ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করছে পুলিশ। খুনের নেপথ্যে যে তত্ত্ব জোরাল হচ্ছে, তা হল ত্রিকোণ প্রেমের জটিলতার জেরেই সম্ভবত অকালে চলে যেতে হল বছর একুশের তরতাজা তরুণকে। তবে খুনের তদন্তে পুলিশের গাফিলতির অভিযোগ ঘিরে ক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে। কারণ ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট আসার পর স্পষ্ট হয়ে যায়, পথ দূর্ঘটনায় মৃত্যু হয়নি দমদমের বাসিন্দা বছর ২১-এর দেবাঞ্জন দাসের। পুলিশের অনুমান, দেবাঞ্জনকে সম্ভবত পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করা হয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, দেবাঞ্জনের গাড়িতে এসি চলছিল। কাচ তোলা ছিল। তাছাড়া, নবমীর রাতে বাইরে থেকে গাড়ির ভিতরে গুলি চালানো হলে, সেটা কারও চোখে পড়ল না, এমনটা কি সম্ভব? সবমিলিয়ে আততায়ী দেবাঞ্জনের পূর্ব পরিচিত হতে পারে বলে জোরাল হচ্ছে সম্ভাবনা। পুলিশও সেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছে। বাইরে থেকে কেউ গুলি চালাল কি না তা খতিয়ে দেখতে পরীক্ষা করা হচ্ছে বিরাটি স্কুল রোডের আশেপাশে থাকা বিভিন্ন ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ভিড়ের মধ্যেই মিশেছিল আততায়ী। মৃত্যু নিশ্চিত কি না জানতে, দেবাঞ্জনের গাড়ির ভিতরে উঁকি দিয়েছিল মোট ৩ জন। এরমধ্যেই শুক্রবার সকাল ১১টার সময় ফের নিমতা থানায় যান ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনারেট মনোজ বর্মা। দুপুর ২টোর সময় ফরেন্সিক আধিকারিকরা গিয়ে দেবাঞ্জনের গাড়িটি পরীক্ষা করেন। পুলিশ সূত্রের দাবি, দেবাঞ্জনের গাড়ির সামনের বাঁ দিকের চাকায় একটি ফুটো দেখা গেছে। তাকি দুর্ঘটনার অভিঘাতে তৈরি হয়েছে? নাকি আততায়ীর ছোড়া গুলিতে? যদিও, বিরাটির স্কুল রোডে যেখানে দেবাঞ্জনের মৃতদেহ-সহ গাড়িটি উদ্ধার হয়, সেই রাস্তার আশেপাশে কোথাও গুলির খোল পাওয়া যায়নি। তাহলে চাকায় ফুটো তৈরি হল কী করে? সেই বিষয়ে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের রিপোর্টের অপেক্ষায় আছে পুলিশ। এছাড়াও গাড়ির ভিতর থেকে পাওয়া ২টি বুলেটের অংশের ব্যালিস্টিক পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে সূত্রের খবর। পুলিশ প্রথমে দেবাঞ্জনের মৃত্যুর ঘটনাকে পথ দূর্ঘটনা বলে দাবি করলেও, নিহতের পরিবার প্রথম থেকেই দাবি করে আসছে ত্রিকোণ প্রেমের জটিলতা এবং তার জেরেই বিবিএ পড়ুয়া দেবাঞ্জনকে খুন করা হয়েছে। প্রিন্স সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে নিমতা থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেছে নিহতের পরিবার। শুক্রবার উত্তর ২৪ পরগনার দুর্গানগরে ৩ নম্বর রেলগেট এলাকায় প্রিন্স সিংহের বাড়িতে গেলে পরিবার সূত্রে দাবি করা হয়, একাদশী পর্যন্ত বাড়িতে থাকলেও, তারপর রহস্যজনকভাবে উধাও হয়েছেন প্রিন্স। এই প্রেক্ষাপটেই যে ছাত্রীকে কেন্দ্র করে আক্রোশের তত্ত্ব খাড়া করা হচ্ছে, সেই ছাত্রীর সঙ্গে ভাইয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে মেনে নিয়েছেন প্রিন্সের দাদা দীপক সিংহ। তিনি বলেন, দেবাঞ্জনের বান্ধবীর সঙ্গে প্রিন্সের সম্পর্ক ছিল, দীর্ঘদিন সম্পর্ক ছিল, আমরাও সেটা জানতাম, মাঝে মধ্যে মেয়েটি ফোন করত, দেবাঞ্জনকে চিনি না। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার দিন প্রিন্স সিংহের মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকেশন কোথায় কোথায় ছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সঙ্গে দেবাঞ্জনের সঙ্গে তাঁর বান্ধবীর হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে কী কথা হত, সেটাও পরীক্ষা করছে পুলিশ। দেবাঞ্জনের বান্ধবীকে দফায় দফায় নিমতা থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশ সূত্রে খবর, গাড়ি থেকে যে গুলির অংশ পাওয়া গিয়েছে, সেগুলি প্রাথমিক পরীক্ষা করে অনুমান করা হচ্ছে, ৭ এমএম পিস্তল থেকে গুলি চালানো হয়েছে।






















