Raghupati Raghav Raja Ram: 'রঘুপতি রাঘব রাজা রামে' 'ঈশ্বর আল্লাহ্' কেন? বাজপেয়ীর স্মরণসভায় তুমুল বিক্ষোভ
Patna News: ২৫ ডিসেম্বর বাজপেয়ীর জন্মতিথি উপলক্ষে পাটনায় বিশেষ স্মরণসভার আয়োজন হয়।
পটনা: শুধুমাত্র মহাত্মা গাঁধীর প্রিয় বলেই নয়, আপনা থেকেই 'রঘুপতি রাঘব রাজা রাম' গুনগুন করে ওঠেন আম ভারতীয়। কিন্তু সেই গান নিয়েই এবার হুলস্থুল কাণ্ড বিহারে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারি বাজপেয়ীর স্মরণসভায় এক লোকশিল্পী ওই গান ধরতেই খাপ্পা হয়ে উঠল ভিড়। 'ঈশ্বর আল্লা তেরো নাম' পঙক্তিটি ঘিরেই আপত্তি ওঠে। পরিস্থিতি এতটাই তেতে ওঠে যে গান থামাতে হয় শিল্পীকে। (Raghupati Raghav Raja Ram)
২৫ ডিসেম্বর বাজপেয়ীর জন্মতিথি উপলক্ষে পাটনায় বিশেষ স্মরণসভার আয়োজন হয়। স্মরণসভার নাম রাখা হয়েছিল 'ম্যায়ঁ অটল রহুঙ্গা'। বাপু সভাঘর অডিটোরিয়ামে স্মরণসভাটির আয়োজন করেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি-র বর্ষীয়ান নেতা অশ্বিনীকুমার চৌবে এবং একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এই ঘটনার পর মন্ত্রী বলেন, "এই ঘটনা কাম্য ছিল না।" চৌবে বাজপেয়ী জমানাতেও মন্ত্রী ছিলেন। বাজপেয়ী জমানার সিপি ঠাকুর, সঞ্জয় পাসোয়ান এবং শাহনওয়াজ হুসেনও। (Patna News)
জন্মতিথিতে বাজপেয়ীর অবদান স্মরণ করাই ছিল অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন ভোজপুরি শিল্পী দেবী। তাঁকে ভজন গাইতে অনুরোধ করেন সকলে। সেই মতো 'রঘুপতি রাজা রাম' গাইতে শুরু করেন দেবী। কিন্তু যেই 'ঈশ্বর আল্লা তেরো নাম' পঙক্তিটি গেয়ে ওঠেন তিনি, সঙ্গে সঙ্গে হল্লা শুরু হয়ে যায়। ওই গানের তীব্র বিরোধিতা করে ৫০ জনের একটি ভিড়। ওই গান গাওয়া যাবে না ঘোষণা করে। পরিস্থিতি তপ্ত ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে ভ্যাবাচাকা খেয়ে যান দেবী। ক্ষমা চেয়ে নেন তিনি। এর পর ছটপুজোর ভজন গেয়ে কোনও রকমে নিজের কাজ সাঙ্গ করেন।
সংবাদমাধ্যমে দেবী বলেন, "আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আয়োজকরা ভজন গাইতে অনুরোধ করেন। বাজপেয়ীজির স্মৃতিচারণের জন্য যেহেতু আয়োজন, তাই মহাত্মা গাঁধীর প্রিয় গানই বেছে নিই। কিন্তু যেই 'ঈশ্বর আল্লা তেরো নাম' লাইনটি গেয়ে উঠি, সঙ্গে সঙ্গে তুলকালাম বাধে। সঙ্গে সঙ্গে থামিয়ে দেওয়া হয় আমাকে। পৃথিবীর সর্বত্র ওই গান গেয়ে পেয়েছি। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটল।" শাহনওয়াজ বলেন, "অটলজি বলতেন, ছোট মন নিয়ে কেউ বড় হতে পারে না। ভজনের প্রতিবাদ অসহিষ্ণুতার চরমতম উদাহরণ। অত্যন্ত অপ্রস্তুত হয়েছি, লজ্জিত হয়েছি।" প্রায় ৫০ জনের ভিড় বিক্ষোভ দেখালেও, এই ঘটনায় কাউকে শনাক্ত করা যায়নি বলে জানা গিয়েছে।
'রঘুপতি রাজা রাম' গানটি একটি ভক্তিগীতি। এর বিভিন্ন সংসস্করণও রয়েছে। কেউ গানটির কৃতিত্ব দেন তুলসিদাসকে, যিনি 'রামচরিতমানস' লিখেছিলেন। কেউই কেউ আবার ১৭ শতকের মারাঠি কবি, সন্ত রামদাসকে গানটির কৃতিত্ব দেন। মহাত্মা গাঁধী সেটিতে 'ঈশ্বর আল্লা তেরো নাম' যুক্ত করেন। 'দ্য সাউন্ডস অফ সত্যাগ্রহ' বইয়ে লেখিকা সিন্থিয়া স্নজগ্রাস লেখেন, ১৯৩০ সালে লবণ সত্যাগ্রহের সময় গানটি গাওয়া হয়। গানটিকে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতেই গানটিতে মহাত্মা গাঁধী ওই পঙক্তি যোগ করেন বলে লেখেন তিনি। ১৯২৫ সালের ২২ জানুয়ারি 'ইয়াং ইন্ডিয়া'য় মহাত্মা লেখেন, 'রাম, আল্লাহ্, গড আমার কাছে পরিবর্তনযোগ্য'। ১৯৪৬ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় নোয়াখালিতে মহাত্মার সঙ্গে ছিলেন তাঁর প্রপৌত্রী মানু। মানুই প্রথম 'ঈশ্বর, আল্লা তেরে নাম, সবকো সন্মতি দে ভগবান' লাইনটি উচ্চারণ করেন বলে মহাত্মার লেখায় পাওয়া যায়। ১৯৪৭ সালের ২ এপ্রিল মহাত্মা বলেন, "আমাকে মেরে ফেললেও থামব না। দেখবেন শেষ নিঃশ্বাস ফেলার সময়ও আমি রাম, রহিম, কৃষ্ণ, করিমের বলছি।" গানটিতে মহাত্মা যে লাইন যুক্ত করেন, ধর্ম নিরপেক্ষ ভারতের মন্ত্র হয়ে ওঠে সেটি।