(Source: ECI/ABP News/ABP Majha)
Shiv Sena attacks Centre : বঙ্গোপসাগরে এখনও "ঔদ্ধত্যের ঘূর্ণিঝড়" ঘোরাঘুরি করছে, আলাপন-ইস্যুতে কেন্দ্রকে খোঁচা শিবসেনার
রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত অব্যাহত। এই ইস্যুতে এবার কেন্দ্রের সমালোচনায় সরব হল শিবসেনা। আজ দলের তরফে কেন্দ্রকে একহাত নিয়ে বলা হয়, বঙ্গোপসাগরে এখনও "ঔদ্ধত্যের ঘূর্ণিঝড়" ঘোরাঘুরি করছে।
মুম্বই : রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত অব্যাহত। এই ইস্যুতে এবার কেন্দ্রের সমালোচনায় সরব হল শিবসেনা। আজ দলের তরফে কেন্দ্রকে একহাত নিয়ে বলা হয়, বঙ্গোপসাগরে এখনও "ঔদ্ধত্যের ঘূর্ণিঝড়" ঘোরাঘুরি করছে। রাজ্যের উপর চাপ সৃষ্টি করা কেন্দ্রের তরফে ভুল।
দলীয় মুখপত্র 'সামানা'-য় সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক জয়-পরাজয় নিয়ে কেন্দ্রের বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গি থাকা উচিত। এটা না থাকলে দেশের একতা আঘাত পায়। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনোমোহন সিং, রাজীব গাঁধী, পি ভি নরসিমহা রাও বা অটল বিহারী বাজপেয়ী- কারও আমলেই কেন্দ্র-রাজ্য টানাপোড়েন ছিল না।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডাকা বৈঠকে যোগ না দিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলা আইন লঙ্ঘন করেছেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। এই অভিযোগে ৩১ মে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে শোকজ নোটিস জারি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। এনিয়ে শিবসেনা বলছে, "ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এসে চলেও গেল। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে এখনও "ঔদ্ধত্যের ঘূর্ণিঝড়" ঘোরাঘুরি করছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডাকা ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত রিভিউ মিটিংয়ে যোগ দেননি আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও। একজন আমলা যদি তাঁর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মানেন, তাহলে তিনি কীভাবে অপরাধী ? উনি যদি প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে যোগ দিতেন, তাহলে রাজ্যও তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিত।"
প্রসঙ্গত, রাজ্যের সদ্যপ্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় কেন কলাইকুণ্ডায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পর্যালোচনা বৈঠক এড়িয়ে গেলেন ? ২৮ মে প্রধানমন্ত্রীর ইয়াস পরবর্তী পর্যালোচনা বৈঠক কেন এড়িয়ে গেলেন ? প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে প্রাক্তন মুখ্যসচিবকে শো-কজ করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের আন্ডার সেক্রেটারি একে সিংহ এই শোকজ নোটিস পাঠান। এই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্যসচিব উপস্থিত থাকবেন বলে জানালেও কেন বৈঠকের দিন মুখ্যসচিব থাকলেন না, এই প্রশ্নও করা হয়।
চিঠিতে কেন্দ্রীয় সরকারের আন্ডার সেক্রেটারি আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যসচিব হিসেবে সম্বোধন করেন। কেন্দ্রীয় সরকারের আন্ডার সেক্রেটারি চিঠিতে লেখেন, প্রধানমন্ত্রী তথা জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের পর্যালোচনা বৈঠক থেকে মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরত থাকা, কেন্দ্রীয় বিধি অমান্য করার সামিল, অর্থাৎ ২০০৫ সালের বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ৫১ (বি) ধারা লঙ্ঘন। এজন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলা হচ্ছে, তিনদিনের মধ্যে তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকে ব্যাখ্যা দিন, তাঁর বিরুদ্ধে ২০০৫ সালের বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ৫১ নম্বর ধারায় কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? মোদি সরকারের নির্দেশের পরও, দিল্লিতে কর্মিবর্গ মন্ত্রকে রিপোর্ট করেননি আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ! তার পরিবর্তে নির্ধারিত দিনেই অবসর নিয়ে নেন তিনি। এরপরই ১৯৮৭ ব্যাচের আইএএস অফিসারকে শোকজ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। শোকজের জবাব দেওয়ার জন্য ৩ দিনের সময়সীমা শেষ হওয়ার কথা আজ, বৃহস্পতিবার।
নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগেই কেন্দ্রীয় সরকারের শো-কজের জবাব দিলেন পশ্চিমবঙ্গের সদ্য প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লিখেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলাম। আলোচনার পরে রিপোর্ট দিয়ে অনুমতি নিয়ে বেরিয়ে আসি। প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়েই আমরা বেরিয়ে আসি।’ কেন্দ্রীয় আন্ডার সেক্রেটারি এ কে সিংহকে এই সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি।
এদিকে আলাপন-ইস্যুতে বিজেপি-তৃণমূল আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ চলছে। গতকাল বিজেপির তরফে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, "সরকারের বেআইনি কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গিয়েছেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই তাঁকে রক্ষা করার জন্য মরিয়া প্রয়াস মুখ্যমন্ত্রীর ।" পাল্টা কুণাল ঘোষের কটাক্ষ, "শুভেন্দু অধিকারীকে নারদ এবং সারদা মামলায় গ্রেফতার করা উচিত। ও তো সিবিআই-র (CBI) হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে বিজেপিতে গিয়েছে।" আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে টেনে আক্রমণ শানান তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
আলাপন-ইস্যুতে এর আগে মোদি সরকারের তীব্র সমালোচনা করে কংগ্রেস। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে বাংলার মুখ্যসচিবকে দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর কফিনে শেষ পেরেক। ঠিক এমনই কড়া ভাষাতে বিবৃতি প্রকাশ করা হয় তাদের তরফে। কংগ্রেসের পক্ষে বিবৃতি দিয়ে সাধারণ সম্পাদক রণদীপ সুরজেওয়ালা জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের এভাবে সরাসরি গণতন্ত্রের অবমাননা দেশে বিশৃঙ্খলা ডেকে আনবে। এভাবে আচমকা, ন্যক্কারজনকভাবে একপক্ষের সিদ্ধান্তে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিবকে দিল্লিতে যোগ দেওয়ার নির্দেশে সারা দেশের মানুষই শঙ্কিত। এটাই দ্বিগুণ বিস্ময়ের যখন জানা যায় মাত্র চারদিন আগে মোদি সরকারই তাঁকে মুখ্যসচিব হিসাবে আরও কয়েকমাস কাজ করার অনুমতি দিয়েছিল। এটি এককথায় ভারতের সংবিধান এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে হত্যার সামিল।
এরপর আজ সরব হয় শিবসেনা। তাদের তরফে বলা হয়, নারদ স্টিং অপারেশন মামলায় ছয় জন অভিযুক্ত আছেন। তার মধ্যে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু, বাকি দুজনকে করা হয়নি। কারণ, তাঁরা দুজনে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। সংবিধান কি কেন্দ্রকে এভাবে কাজের অনুমতি দিয়েছে ? বন্দ্যোপাধ্যায়কে(আলাপন) শাস্তি দিয়ে কেন্দ্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শিক্ষা দিতে চাইছে। এটা দেশের আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে হুমকি। চূড়ান্ত ঔদ্ধত্য। রাজনৈতিক জয়, পরাজয় নিয়ে কেন্দ্রের বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গি রাখা উচিত।