অগ্নিগর্ভ পাহাড়ে ৬ কোম্পানি আধাসেনা পাঠাল কেন্দ্র, রাজ্যের কাছে রিপোর্ট তলব
দার্জিলিং: দার্জিলিং পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট তলব করল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। এদিকে, মোর্চার বনধ ঘিরে সোমবারের পর মঙ্গলবারও অশান্ত ছিল পাহাড়। পাহাড় ইস্যুতে বারবার কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও চিঠি দিয়েছে তারা। যদিও মোদী সরকার মঙ্গলবার জানিয়ে দিল, দার্জিলিঙে এখনও প্রতিনিধি দল পাঠানোর কথা তারা ভাবছে না। এদিন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের মুখপাত্র অশোক প্রসাদ বলেন, এখনও পর্যন্ত প্রতিনিধি দল পাঠানোর কোনও পরিকল্পনা নেই। যদিও তিনি যোগ করেন, দার্জিলিং নিয়ে রাজ্যের থেকে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই, ৬ কোম্পানি আধা-সামরিক বাহিনী (প্রায় ৬০০ জন) সেখানে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ২ কোম্পানি মহিলা-বাহিনীও রয়েছে। তিনি জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। যদিও এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া, পাহাড় শান্ত আছে। কেন্দ্র কোনও রিপোর্ট চায়নি। এদিকে, মোর্চার আহ্বানে সাড়া দিয়ে মঙ্গলবার জিমখানা ক্লাবের সর্বদল বৈঠকে হাজির ছিল জিএনএলএফ, সিপিআরএম, বিজেপি-সহ ৫টি দল। গোখা জনমুক্তি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, ৬টা দল বৈঠক করলাম। সর্বসম্মতভাবে পুলিশের দমননীতির নিন্দা প্রস্তাব নিয়েছি। গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আমরা সব দল একমত হয়েছি। জিএনএলএফ-ও সর্বোতভাবে গোর্খ্যাল্যান্ডের দাবি সমর্থন করছে। তাৎপূর্ণ বিষয় হল এই জিএনএলএফ-ই সদ্য সমাপ্ত পুর নির্বাচনে, তৃণমূলের জোটসঙ্গী ছিল! দার্জিলিং, কার্শিয়ং, কালিম্পং, মিরিক..চার পুরসভাতেই মোর্চার বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়েছিল দু’দল। তাদের গলাতেই এখন শোনা যাচ্ছে অন্য সুর! গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে লড়াইয়ে বিমল গুরুঙের নেতৃত্বেও তাদের আপত্তি নেই! এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে জিএনএলএফ নেতা নীরজ জিম্বা বলেন, ওটা নির্বাচনী সমঝোতা ছিল। অন্য কিছু নয়। রাজনীতিতে অনেক কিছু হয়। সুবাস ঘিসিং প্রথম দাবি তুলেছিলেন, তাই গোর্খ্যাল্য্যান্ডের আন্দোলনে আমরা আছি। গুরুঙ্গের নেতৃত্বে আপত্তি নেই। যৌথ নেতৃত্বে দাবি আদায়ের চেষ্টা করব। পাহাড়ে মোর্চার ডাকা সর্বদলে হাজির বিজেপি। সমতলে দিলীপ ঘোষদের গলায় তৃণমূল সম্পর্কে কটাক্ষের সুর। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, মমতা গিয়ে গণ্ডগোল করছে। সুর চড়িয়েছে কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধীরাও। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, একদিকে মমতার দিদিগিরি, আরেকদিকে গুরুঙের দাদাগিরি। রাজীব গাঁধী তো গোর্খা কাউন্সিল করেছিলেব। তৃণমূল সরকার তো গোর্খ্যাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন করে দিয়েছে! এদিকে, মোর্চার বনধের দ্বিতীয়দিনেও অশান্ত ছিল পাহাড়। এদিন সকাল দশটা নাগাদ চকবাজার থেকে শুরু হয় মোর্চার মিছিল। মিছিল এগোতে শুরু করে ম্যালের দিকে। কিন্তু, পুলিশ থাকায় মিছিল গলিপথ দিয়ে ঘুরে ফের চকবাজারে! কিন্তু, মিছিলের অভিমুখ জেলাশাসকের দফতরের দিকে এগোতেই তৎপর হয়ে ওঠে পুলিশ। একদিক থেকে দার্জিলিঙের এসপি, অন্যদিক থেকে সিআইএফের এসপি বাহিনী নিয়ে মিছিল ঘিরে ফেলেন। এরপরই রাস্তায় বসে পড়েন নারী মোর্চার কর্মীরা। সেইসময় মিছিলের পিছনের অংশকে তাড়া করে র্যাফ। পিছু হঠেন বিক্ষোভকারীরা। মহিলা মোর্চার মোকাবিলায় সক্রিয় হয় মহিলা পুলিশ। এই পরিস্থিতিতে বন্ধ মার্কেট থেকে পুলিশের দিকে ইট ছোড়া হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শুরু হয় লাঠিচার্জ। চকবাজার থেকে তাড়া খেয়ে সিংমারিতে গিয়ে, দলীয় দফতরের বাইরে রাস্তায় বসে পড়ে মোর্চার কর্মীরা। সেখানেও পৌঁছে যান পুলিশ সুপার। দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, বেআইনি মিছিল বরদাস্ত করা হবে না। অবরোধকারীদের সরাতে গেলে আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি পৌঁছে যায় র্যাফ, সিআরপিএফ-ও। যান পাহাড়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ২ আইপিএস অফিসার জাভেদ শামিম, সিদ্ধিনাথ গুপ্ত। এরপর সিংমারি থেকে সরে পাতলেবাস যাওয়ার রাস্তায় বসে পড়ে মোর্চ। পরে সেখান থেকেও অবরোধকারীদের হঠিয়ে দেয় পুলিশ। মোর্চা-পুলিশ এই লুকোচুরির মধ্যেই মঙ্গলবার পাহাড় কার্যত বন্ধ ছিল। নেপথ্যে ২৪টি শ্রমিক সংগঠনকে নিয়ে তৈরি যৌথ মঞ্চের সাধারণ ধর্মঘট। মোর্চা তাদের বনধ থেকে স্কুল-কলেজকে বাদ দিলেও, আদতে ভিন্ন অভিজ্ঞতা হয়েছে পড়ুয়াদের। প্রথম দিন তাদের ডাকা সরকারি অফিস বনধে কোনও প্রভাব না পড়লেও, সাধারণ ধর্মঘটের অছিলায় এদিন রাস্তায় নামল মোর্চা। উদ্দশ্যে, এটাই প্রমাণ করা যে, তাদের ডাকেই সাড়া দিচ্ছে পাহাড়বাসী। এসবের মধ্যেই পাহাড়ে শান্তি ফেরানোর দাবিতে ১৭ জুন শিলিগুড়িতে মিছিল করবে বিজেপি।