Supreme Court Handbook: লিঙ্গ বৈষম্য থেকে বেরোতে হবে বিচারব্যবস্থাকেও, লেখা যাবে না ‘পরকীয়া’, ‘গৃহবধূ’, ‘পবিত্র নারী’র মতো শব্দ
Combat Gender Stereotypes: বুধবার ওই সারগ্রন্থ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়।
নয়াদিল্লি: লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে প্রতিবাদ চলছে দিকে দিকে। কিন্তু সমাজ-সংসারের গতিপথ নির্ধারণ করে যে আদালত, সেই আদালতই ত্রুটিমুক্ত নয়। টিকা-টিপ্পনি করা হোক বা রায়দান, অনেক সময় আদালত থেকেও যৌনগন্ধী মন্তব্য় ভেসে আসে। সেই ভুল সংশোধনে এবার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করলে দেশের সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court Handbook)। প্রকাশ করা হল বিশেষ সারগ্রন্থ, যাতে কোন কোন শব্দ আদালতের অনুপযুক্ত, তা লিপিবদ্ধ রয়েছে। (Combat Gender Stereotypes)
বুধবার ওই সারগ্রন্থ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। তিনি বলেন, "আদালতও অনেক সময় গতানুগতিক শব্দ চয়ন করে। বিচার বিবেচনা না করেই প্রয়োগ করা হয় সেগুলির। আদালতের সিদ্ধান্ত বা আদালত প্রদত্ত রায়ের কুৎসা করা অভিপ্রায় নয় এই সারগ্রন্থের। বরং এর সাহায্যে বিচারপতিরা শব্দচয়নের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে পারবেন।"
ভবিষ্যতে আদালতের রায় বা বিশেষ কোনও বিচারপতির রায় নিয়ে যাতে কোনও প্রশ্ন না ওঠে, শব্দচয়ন নিয়ে আপত্তি যাতে না ওঠে, তার জন্যই এই সারগ্রন্থ বলে জানান প্রধান বিচারপতি। ওই সারগ্রন্থে যে যে শব্দগুলি এড়িয়ে চলার কথা বলা রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে, 'পতিতা', 'দেহ ব্যবসায়িনী'র মতো শব্দ।
কোন শব্দ ব্যবহার করা যাবে না, তার পরিবর্তে কী শব্দ ব্য়বহার করা যেতে পারে, তারও বিশদ তালিকা রয়েছে ওই সারগ্রন্থে। যেমন, Adulteress অর্থাৎ ব্যাভিচারিণী। এর পরিবর্তে বৈবাহিক সম্পর্কের বাইরে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া রমণী লিখতে বলা হয়েছে। Affair-এর পরিবর্তে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক, Bastard-এর পরিবর্তে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ না হওয়া যুগলের সন্তান, জন্মসূত্রে মহিলা বা জন্মসূত্রে পুরুষের পরিবর্তে, জন্মকালে নির্ধারিত লিঙ্গ, মেয়ে বা ছেলের জন্মের পরিবর্তে জন্মকালে মেয়ে বা ছেলে হিসেবে নির্ধারিত, Career Woman বা কর্মব্যস্ত মহিলার পরিবর্তে শুধু মহিলা লিখতে হবে।
এর পাশাপাশি, শারীরিক মিলনের পরিবর্তে যৌন মিলন, পবিত্র নারীর পরিবর্তে শুধু নারী, Child Prostitute-এর পরিবর্তে পাচার হওয়া শিশু, রক্ষিতার পরিবর্তে বিবাহ বহির্ভূত ভাবে কোনও মহিলার সঙ্গে একজন পুরুষের প্রেম অথবা যৌন সম্পর্ক লিখতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়াও, বাধ্য, কর্তব্যপরায়ণ স্ত্রীর পরিবর্তে শুধু স্ত্রী, চরিত্রহীন মহিলা বা ছলাকলায় পারদর্শী মহিলার পরিবর্তে শুধু মহিলা, কামুকের পরিবর্তে লিঙ্গ উল্লেখ করে ঘটনার জন্য দায়বদ্ধ লিখতে বলা হয়েছে।Feminine Hygiene Products-এর পরিবর্তে ঋতুস্রাবের পণ্য, জোরপূর্বক ধর্ষণের পরিবর্তে শুধু ধর্ষণ, পতিতার পরিবর্তে শুধু মহিলা, Housewife-এর পরিবর্তে Homemaker বা গৃহিণী, ভারতীয় বা বিদেশি নারীর পরিবর্তে শুধু নারী লেখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
ওই সারগ্রন্থে বলা হয়েছে, যুগ যুগ ধরে অসংখ্য পক্ষপাতদুষ্ট এবং গতানুগতিক ধারা এবং আচরণের সম্মুখীন হয়েছেন মেয়েরা। সমাজ এবং বিচারব্যবস্থাতেও ন্যায্য এবং সমানাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তাঁরা। তাই ভাবনা-চিন্তা, সিদ্ধান্তগ্রহণ এবং লিখিত নির্দেশে কোথাও লিঙ্গ বৈষম্য থেকে যাচ্ছে কিনা, তার কী প্রভাব পড়ছে সমাজে, সে ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন বিচারব্যবস্থার।