Future of Aam Aadmi Party: যে দিল্লিতে জন্ম, সেখানেই পরাজিত AAP, I.N.D.I.A জোটেও ভবিষ্যৎ টালমাটাল
Arvind Kejriwal: ভারতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটেই নয় শুধু, বিজেপি বিরোধী I.N.D.I.A জোটেও গুরুত্ব কমতে বাধ্য।

নয়াদিল্লি: দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন থেকে সটান ক্ষমতার অলিন্দে। কিন্তু রাজধানী দিল্লিতে হ্যাট্রিক হাঁকানো হল না অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং তাঁর দল আম আদমি পার্টির। শনিবার দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে AAP. নিজের কেন্দ্র ধরে রাখতে পারেননি কেজরিওয়ালও। আর তাতেই দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে। ভারতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটেই নয় শুধু, বিজেপি বিরোধী I.N.D.I.A জোটেও গুরুত্ব কমতে বাধ্য। (Future of Aam Aadmi Party)
তদানীন্তন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন UPA সরকারের বিরুদ্ধে ২০১১ সালে অনশন শুরু করেন আন্না হাজারে। আর সেখান থেকেই ভারতীয় রাজনীতির নয়া অধ্যায়ের সূচনা ঘটে। ২০১২ সালে নয়া রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে আম আদমি পার্টি। দলের নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পান কেজরিওয়াল। সেই সময় তাদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছিল বিজেপি। কিন্তু গত দেড় দশকে যমুনার উপর দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। পর পর বিপুল সমর্থনে জয়ী হয়ে দিল্লিতে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল AAP. জাতীয় রাজনীতিতে কেজরিওয়াল হয়ে উঠছিলেন বিকল্প। (Arvind Kejriwal)
বলা বাহুল্য, দলের শক্তিবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে, কেজরিওয়ালও রাজনৈতিক ভাবে বলীয়ান হয়ে উঠছিলেন। ২০১৪ সালে গোটা দেশে যখন মোদি-ঝড়, সেই সময় বারাণসীতে কেজরিওয়ালকে টক্কর দিতে নামেন কেজরিওয়াল। সেখানে ৩ লক্ষ ৭১ হাজার ৭৮৪ ভোটে পরাজিত হলেও, কংগ্রেস এবং বহুজন সমাজবাদী পার্টিকে হারিয়ে দ্বিতীয় স্থান দখল করেন তিনি। অর্থাৎ পরবর্তীতে মোদির বিকল্প হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টা করেন কেজরিওয়াল।
২০২২ সালে পঞ্জাবে আম আদমি পার্টির সরকার প্রতিষ্ঠা হলে, তাদের সামনে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ে যায় ‘গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি’ কংগ্রেস। এর পর একে একে গোয়া, গুজরাতেও আঞ্চলিক দল হিসেবে স্বীকৃতি জোটে। ২০২৩ সালের ১০ এপ্রিল সর্বভারতীয় বা জাতীয় দল হিসেবে স্বীকৃতি পায় AAP. ২০২৪ সালে জাতীয় রাজনীতিতে যখন বিজেপি বিরোধী I.N.D.I.A জোট গঠিত হয়, সেই সময় নির্ণায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন কেজরিওয়াল এবং তাঁর দল AAP.
শুধু তাই নয়, বিজেপি বিরোধী জোটে কে নেতৃত্ব দেবেন, সেই প্রশ্ন টানাপোড়েন যখন তুঙ্গে, সেই সময়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন কেজরিওয়াল। রাহুল গাঁধী এবং কংগ্রেসের হাতে জোটের নেতৃত্ব তুলে দেওয়া নিয়ে যেখন আপত্তি জানাতে শুরু করেন শরিকরা, সেই সময় তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অথবা কেজরিওয়ালের মধ্যে কারও হাতে জোটের নেতৃত্ব তুলে দেওয়ার দাবি শোনা যায়।
পরিস্থিতি এমন হয় যে, হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকে কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব আরও বাড়তে থাকে AAP-এর। দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনেও জোট সমঝোতা হয়নি। ফলে ‘একলা চলো’ নীতি নিয়ে দিল্লির নির্বাচনে নাম লেখায় দুই দল। নির্বাচনী প্রচারে আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, I.N.D.I.A জোট থেকে কংগ্রেসকেই বাদ দেওয়ার প্রস্তাব তোলে AAP. সেই সময় I.N.D.I.A জোটের শরিকদের অনেকেই কেজরিওয়ালের পাশে দাঁড়ান। তৃণমূল, অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি এবং উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা দিল্লিতে বিজেপি-র হয়ে প্রচারে যেতেও সম্মত হয়। ফলে জোটের মধ্যে এক অর্থে কোণঠাসা হয়ে পড়ে কংগ্রেস। কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে, কেজরিওয়াল, মমতা, অখিলেশরা তৃতীয় বিরোধী জোট গড়বেন কি না, সেই নিয়েও জল্পনা শুরু হয়।
কিন্তু শনিবার দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল সব হিসেব নিকেশ পাল্টে দিল। এভাবে যে দিল্লিতে হারতে হবে, কেজরিওয়াল নিজের কেন্দ্রও যে ধরে রাখতে পারবেন না, তা কল্পনাও করতে পারেননি দলের নেতারা। এমনকি জোটসঙ্গীদের অনেকেও নির্বাচনের এই ফল কল্পনা করেননি। আর তাতেই I.N.D.I.A জোটে কেজরিওয়াল এবং তাঁর দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
এক্ষেত্রে কংগ্রেসের ভূমিকাও নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে। I.N.D.I.A জোটে ঐক্যবদ্ধ হয়ে চলার শপথ নিলেও, যেভাবে শরিক দলগুলির সামনে লাগাতার কোণঠাসা হতে হচ্ছিল তাদের, তাতে দিল্লিতে কেজরিওয়াল এবং তাঁর দলের এই ফলাফল অক্সিজেন জোগাতে পারে কংগ্রেসকে। দিল্লিতে আগে থেকেই শূন্যে দাঁড়িয়েছিল কংগ্রেস। এবারের নির্বাচনেও তার হেরফের হয়নি। কিন্তু যে দিল্লিতে জন্ম, সেখানেই পরাজিত হয়েছে AAP. এই মুহূর্তে শুধুমাত্র পঞ্জাবেই তাদের সরকার টিকে রয়েছে। সেই নিরিখে কংগ্রেসের সরকার রয়েছে কর্নাটক, তেলঙ্গানা, হিমাচল প্রদেশে। জম্মু ও কাশ্মীর, ঝাড়খণ্ডে জোট সরকারে রয়েছে তারা।
তাই দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে কেজরিওয়ালের হারে কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, দিল্লিতে এবারে কিছু পাওয়ার ছিল না কংগ্রেসের। বরং AAP-এর ভোট কাটতেই এবার দিল্লিতে মাঠে নেমেছিল তারা। গোয়া, গুজরাত, উত্তরাখণ্ডে AAP যেভাবে তাদের ভোট কেটেছিল, দিল্লিতে AAP-এর সঙ্গেও সেই কাজ করল কংগ্রেস। এদিন ফলপ্রকাশের পর প্রিয়ঙ্কা গাঁধীকে বলতে শোনা যায়, "আম আদমি পার্টির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন মানুষ। পরিবর্তন চাইছিলেন।" তাই আগামী দিনে I.N.D.I.A জোটে কংগ্রেসের উপর চাপ সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে AAP আর সেই জোর পাবে না বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। কংগ্রেসের একাংশ বলছেন, জোটধর্ম পালন করলেও, নিজের রাজনৈতিক পরিসর ছেড়ে দেবে না কংগ্রেস।
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
