International Women's Day 2024: প্রতিবন্ধকতায় হার মানেননি- চলার শক্তি হারালেও আজ অজস্র মানুষের মনের শক্তি তিনি
Shagun Pathak Inspirational Story: একটা দুর্ঘটনা অনেকের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তেমনই এক দুর্ঘটনা জীবন বদলে দিয়েছিল শাগুণের। যা খেলতে তিনি ভালবাসতেন সবথেকে বেশি, সেই বাস্কেটবলই আর খেলা হল না তাঁর।
কলকাতা: সময়টা ১৯০৯ সাল। আমেরিকায় সমান কাজের অধিকার, সমান বেতন ও সমান ভোটের অধিকারের দাবিতে যে বিরাট আন্দোলন তৈরি হয়েছিল, তাঁর হাত ধরেই সূচিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবসের। ক্লারা জেটকিনের লড়াই সেই সময় শুরু হয়েছিল আর আজ সেই লড়াইয়ের অদৃশ্য মশাল হাতে অজস্র নারী তাঁদের নিজ নিজ ক্ষেত্রের লড়াই এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। তাঁদের কথা স্মরণ করতেই প্রতি বছর ৮ মার্চ সারা বিশ্ব জুড়ে পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ২০২৪ সালের এই নারী দিবসের আগে এমন এক নারীর কথা জেনে নেওয়া যাক, প্রতিবন্ধকতা যাঁর লড়াইকে থামাতে পারেনি। অক্ষমতা কাড়তে পারেনি তাঁর আত্মবিশ্বাস, তাঁর অদম্য জেদ। দুর্ঘটনায় হাঁটাচলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন শাগুণ পাঠক। আর আজ তিনিই অন্যতম সফল মোটিভেশনাল স্পিকার।
একটা দুর্ঘটনা অনেকের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তেমনই এক দুর্ঘটনা জীবন বদলে দিয়েছিল শাগুণের। যা খেলতে তিনি ভালবাসতেন সবথেকে বেশি, সেই বাস্কেটবলই আর খেলা হল না তাঁর। এক মুহূর্তের মধ্যে হাঁটাচলার সব শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন শাগুণ। তারপর একেবারেই অন্য খাতে বয়ে গিয়েছে তাঁর জীবন।
জেলাস্তরে বাস্কেটবল খেলতেন শাগুণ পাঠক। ছোটবেলা থেকেই তিনি মনস্থির করেছিলেন অ্যাথলেটিকসেই নিজের কেরিয়ার গড়ে তুলবেন। আর তাই যখন সেই দুর্ঘটনা ঘটে তাঁর জীবনে, দুর্বিষহভাবে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। কারণ সেই একই বাস্কেটবলের মাঠ এখন তাঁর কাছে দুরূহ বলে মনে হবে। সপ্তাহের পর সপ্তাহ মাঠ ছেড়ে কাটাতে হয়েছে বিছানায় শুয়ে। ধীরে ধীরে সব আশা একপ্রকার ছেড়েই দিচ্ছিলেন শাগুণ। কিন্তু তাঁর বাবা-মা আশা ছাড়েননি। ভারতের হেন জায়গা নেই যেখানে তাঁরা শাগুণকে নিয়ে যাননি চিকিৎসার জন্য। কিন্তু আশা প্রায় নিভেই যাচ্ছিল যখন AIIMS-এর ডাক্তার জানালেন যে তাঁদের আর বিশেষ কিছু করার নেই, বাকি জীবনটা এভাবেই কাটাতে হবে তাঁকে।
বাড়ি ফিরে এসে শাগুণ প্রায়ই দেখতেন তাঁর বোনেরা, ভাইয়েরা স্কুলে যাচ্ছে। পড়তে যাচ্ছে আর তিনি সারাদিন ঘরে শুয়ে আছেন। এমনকী একটু নড়ার ক্ষমতাও তাঁর ছিল না। তিনি আর তাঁর পরিবার দিল্লিতে এসে থাকতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু নিজের এই প্রতিবন্ধকতার বদলে একটা চাকরি পেতে তাঁর খুবই সমস্যা হয়েছিল। বেশিরভাগ সংস্থাতেই তাঁকে প্রত্যাখ্যান করে দেওয়া হচ্ছিল। অবশেষে একটা ব্যাঙ্কিং কোম্পানিতে চাকরি পান শাগুণ। আর তখন থেকেই তিনি অনুভব করতে শুরু করেন যে কিছু সংখ্যক মানুষ হলেও তাঁর নিজের এই জীবনের কাহিনি পৌঁছে দিতে হবে তাঁদের কাছে যাতে তাঁরা একই সমস্যায় থাকলে তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। শুরু হয় মোটিভেশনাল স্পিকার এবং সক্রিয় প্রতিবন্ধী অধিকার কর্মী হিসেবে তাঁর নতুন জীবন। একটা রোলেটর নিয়ে এখন নড়াচড়া করেন শাগুণ আর আজ প্যারালিম্পিকসে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন শাগুণ পাঠক।
জীবনের সমস্ত প্রতিবন্ধকতায়, সমস্ত চ্যালেঞ্জে নিজের মনোবল অক্ষুণ্ন রেখে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন শাগুন। জীবনের লড়াইতে হেরে যাননি তিনি, আর আজ এভাবেই ফিরে এসে আরও শত শত হেরে যাওয়া মানুষকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন শাগুণ। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নারীর শক্তি, নারীর অদম্য জেদের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত শাগুণ পাঠক।