The First Kiss: আধুনিক মানুষকে চুম্বন শেখাল কে? নিয়ান্ডারথালদের থেকেই কি শিক্ষা? বিবর্তনের ইতিহাস ঘেঁটে যা উঠে এল…
Evolution of Kiss: মানবজাতিই কি চুম্বনের স্রষ্টা, না কি চুম্বনও বিবর্তনের ফসল?

'অধরের কানে যেন অধরের ভাষা,
দোঁহার হৃদয় যেন দোঁহে পান করে-
গৃহ ছেড়ে নিরুদ্দেশ দু’টি ভালবাসা
তীর্থযাত্রা করিয়াছে অধরসংগমে…'
'চুম্বন' কবিতায় লিখে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ভালবাসার মুহূর্তকে এভাবেই কলমের দ্বারা ফুটিয়ে তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু পরস্পরের ঠোঁট ছুঁয়ে ভালবাসার এই যে অভিব্যক্তি, তার সূচনা কোথা থেকে? মানবজাতিই কি চুম্বনের স্রষ্টা, না কি চুম্বনও বিবর্তনের ফসল? তার উত্তর খুঁজতে গিয়ে নতুন তথ্য হাতে পেলেন বিজ্ঞানীরা। (Evolution of Kiss)
বন্ধু বা সঙ্গীর প্রতি ভালবাসা বোঝাতেই চুম্বনের সূচনা বলে মনে করা হয়। কিন্তু ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে যে চুম্বন, আজ থেকে ২ কোটি বছর আগেও ওই অভ্যাস থাকতে পারে। মানবসভ্যতার ইতিহাসে চুম্বনের যে নিদর্শন রয়েছে, তা ৪৫০০ বছর আগের। প্রাচীন মিশরে এবং মেসোপটেমিয়ায় চুম্বনের প্রচলন ছিল। কিন্তু এর সূচনা হল কী করে? মানবজাতির এই আচরণ নিয়ে ScienceDirect জার্নালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। ‘চুম্বনের বিবর্তনের তুলনামূলক অভিমুখ’ শীর্ষক ওই গবেষণাপত্রে চুম্বনের সেকাল ও একালের খোঁজ করেছেন। আর তাতে যে তথ্য় উঠে এসেছে, তা বেশ চমকপ্রদ। কারণ বিজ্ঞানীদের মতে, চুম্বনের প্রক্রিয়া মোটেই মনুষ্যজাতির অবিষ্কার নয়। বরং ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে চুম্বনের রীতি মানবজাতির আবির্ভাবের ঢের আগে থেকেই প্রচলিত। (The First Kiss)
ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ড, ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন এবং ফ্লোরিডা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি-র বিজ্ঞানীরা সম্মিলিত ভাবে যে গবেষণা চালিয়েছেন, তাতে আদিম প্রাণীদের থেকে চুম্বন কী ভাবে বিবর্তিত হয়েছে, তা খতিয়ে দেখেছেন তাঁরা। কিন্তু চুম্বনের সূচনা নিয়ে এই আগ্রহ কেন? বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বিবতর্নের সঙ্গে চুম্বন ঠিক খাপ খায় না। কারণ চুম্বনের উপর টিকে থাকা (সার্ভাইভাল) বা প্রজনন নির্ভরশীল নয়। বরং সংক্রমণ, রোগ ছড়ানোর ঝুঁকিই রয়েছে। তাই চুম্বনের সূচনা হল কী ভাবে, তা বোঝা জরুরি।
তবে বিজ্ঞানীরা চুম্বনকে যেভাবে বর্ণনা করেছেন, তা সঙ্গে প্রেম বা রোম্যান্সের উপর নির্ভরশীল নয়। ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে চুম্বনের আচরণকে একেবারে পৃথক রেখেছেন তাঁরা। মা যেভাবে ছানা পাখিদের খাবার খাওয়ায়, দেখে মনে হলেও চুম্বন সেই গোত্রে পড়ে না। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে চুম্বনকে বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা করেছেন এই মর্মে যে, ‘অজ্ঞানবাদী মিথস্ক্রিয়া, যার মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ভাবে মৌখিক যোগাযোগ গড়ে ওঠে। কোনও খাদ্য আদানপ্রদান হয় না বটে, তবে ঠোঁট ও মুখের একটি অংশকে নড়াচড়া করতে দেখা যায়’।
এই ব্যাখ্যা অনুযায়ী, পিঁপড়ে থেকে পাখি, মেরুভালুকের মতো প্রাণীও চুম্বন করে। তবে বিজ্ঞানীরা মূলত আফ্রো-ইউরেশিয়ান বানরজাতি এবং শিম্পাঞ্জির উপর জোর দিচ্ছেন। কারণ বানর এবং শিম্পাঞ্জিদের মধ্যে চুম্বনের রীতি রয়েছে। সেই মতো বেয়েসিয়ান ফাইলোজেনেটিক পদ্ধতিতে, বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এবং বর্তমানে বেঁচে থাকা প্রাণীদের আচরণগত তথ্য নিয়ে গবেষণা চলে। প্রাচীণ কাল থেকে জিনের বিবর্তনের ফলে কার কী আচরণ, আজকের দিনে কার মধ্যে পরিলক্ষিত হয়, সেই তথ্য একত্রিত করা হয়।
আর তাতেই দেখা যায়া, বিভিন্ন প্রজাতির বানরের মধ্যে প্রাচীন কালেও চুম্বনের রীতি ছিল। সেই তালিকায় রয়েছে শিম্পাঞ্জি, বোনোবো। আজকের মানুষজাতিও চুম্বন করে, যদিও ধরন পাল্টেছে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রাচীন কাল থেকেই চুম্বনের রীতি চলে আসছে। আজ থেকে ২ কোটি ১৫ লক্ষ এবং ১ কোটি ৬৯ লক্ষ বছর আগেও চুম্বনের চল ছিল আদিম প্রাণীদের মধ্যে। অর্থাৎ আজকের মনুষ্যজাতির অবলুপ্ত আত্মীয়, নিয়ানডারথালরাও (Neanderthals) পরস্পরকে চুম্বন করত। আজকের মনুষ্যজাতি, অর্থাৎ হোমো সেপিয়েন্স এবং নিয়ানডারথালদের মধ্যেও চুম্বন ঘটেছিল। তবে শুধু ঠোঁট ছোঁয়ানো থেকে ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের চুম্বনের উৎপত্তি হল কী করে, এখনও তা জানা সম্ভব হয়নি। বিজ্ঞানীদের দাবি, চিড়িয়াখানায় বন্দি পশুদের আচরণের উপর ভিত্তি করেই গবেষণা চালিয়েছেন তাঁরা। বানরজাতির বাইরে অন্য প্রাণীর শারীরিক আচরণ নিয়ে এখনও পর্যন্ত পর্যাপ্ত তথ্য নেই তাঁদের হাতে। তবে চুম্বনের স্রষ্টা কে, তা যেমন প্রশ্ন, তেমনই চুম্বনের সূচনা হল কেন, তাও বড় প্রশ্ন। আগামী দিনে সেই তথ্যও হাতে আসবে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।


















