Ali Kamar Exclusive: খোঁজ নেয়নি কেউ, এবিপি লাইভকে বলার পরই লভলিনার কোচ আলি কামারকে সংবর্ধনা
বাঙালি বক্সিং কোচের আক্ষেপ ছিল, টোকিও থেকে ফেরার পর বাংলার কোনও ক্রীড়াকর্তা বা রাজ্য প্রশাসনের কেউ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগও করেননি।
কলকাতা: তাঁর প্রশিক্ষণে প্রস্তুতি নিয়েই টোকিও অলিম্পিক্সে বক্সিংয়ে পদক জিতেছিলেন লভলিনা বরগোহাঁই (Lovlina Borgohain)। টোকিও থেকে ফেরা ইস্তক লভলিনাকে নিয়ে উৎসব চলছে দেশে। অথচ তিনি যেন কিছুটা অন্ধকারেই ছিলেন। অলিম্পিক্সে পদক জয়ী ভারতীয় হকি দলের কোচ গ্রাহাম রিড বা পদক না পেলেও দুরন্ত পারফরম্যান্স উপহার দেওয়া মহিলা হকি দলের কোচ সুর্ড মেরিনকে নিয়ে যেরকম উন্মাদনা, তাঁকে ঘিরে তার ছিটেফোঁটাও নেই।
এমনকী, বাঙালি বক্সিং কোচের আক্ষেপ ছিল, টোকিও থেকে ফেরার পর বাংলার কোনও ক্রীড়াকর্তা বা রাজ্য প্রশাসনের কেউ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগও করেননি। লভলিনার কোচ মহম্মদ আলি কামার (Ali Qamar) এবিপি লাইভকে বলেছিলেন, 'কলকাতায় ফেরার পর কোনও ফোন বা শুভেচ্ছাবার্তা পাইনি।'
আলি কামারের সেই সাক্ষাৎকার প্রকাশ পাওয়ার পরই নড়েচড়ে বসেন বাংলার ক্রীড়া প্রশাসকেরা। রবিবার হকি বেঙ্গলের তরফ থেকে সংবর্ধনে দেওয়া হল আলি কামারকে। সেই সঙ্গে একবালপুরের স্থানীয় একটি ক্লাবও সংবর্ধনা জানাল জাতীয় মহিলা বক্সিং দলের কোচকে। সোমবার বাংলার অ্যামেচার বক্সিং সংস্থা সংবর্ধনা দেবে। সব মিলিয়ে আলি কামারের গলায় যেন কিছুটা অভিমানমুক্তির সুর। বললেন, 'এবিপি লাইভে খবর সম্প্রচারিত হওয়ার পরই বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন পাই। অনেক শুভেচ্ছাবার্তা পেয়েছি। সংবর্ধনাও দেওয়া হল। নিজের রাজ্যে স্বীকৃতি পেয়ে ভাল লাগছে।'
টোকিওয় দেশকে গর্বের মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন তাঁর ছাত্রী লভলিনা বরগোহাঁই। ভারতের মহিলা বক্সার অলিম্পিক্সে জিতে নিয়েছেন ব্রোঞ্জ পদক। অসমের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে টোকিও পর্যন্ত বক্সিং রিংয়ে লভলিনার চমকপ্রদ এই সফরে সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিলেন খিদিরপুরের মহম্মদ আলি কামার। ম্যাঞ্চেস্টার কমনওয়েলথ গেমসে সোনাজয়ী প্রাক্তন বক্সার ভারতের মহিলা দলের কোচ। ছাত্রীর সাফল্যে গর্বিত হলেও নিজের রাজ্যের বক্সিংয়ের করুণ ছবি দেখে বিষণ্ণ বাঙালি কোচ। টোকিও থেকে কলকাতায় ফিরে বাংলার বক্সিংয়ের বেহাল দশা নিয়ে সরব হয়েছিলেন আলি কামার।
এ রাজ্যে প্রায় সব বক্সিং রিংই সিমেন্টের তৈরি। সেখানেই বছরভর প্রস্তুতি নিতে বাধ্য হন বাংলার উদীয়মান বক্সাররা। আন্তর্জাতিক মানের রিং হোক বা আধুনিক পরিকাঠামো, বাংলার বক্সাররা সব কিছু থেকেই বঞ্চিত। যার প্রভাব পড়েছে পারফরম্যান্সে। আন্তর্জাতিক স্তরে তো নয়ই, এমনকী, জাতীয় স্তরেও বাংলা থেকে সেভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেখা যাচ্ছে না কোনও বক্সারকে।
কলকাতায় ফিরে এবিপি লাইভকে আলি কামার বলেছিলেন, 'বাংলায় বক্সার তৈরি হচ্ছে। তবে সেটা আশানুরূপ নয়। আমাদের এখানে সুযোগসুবিধা নেই। বাংলায় সব রিং সিমেন্টের। সবই প্রাইভেট রিং। রাজ্য সরকারের তরফে হোক বা স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (সাই), কেউই এ ব্যাপারে উদ্যোগী নয়। এই ছবিটা বদলাতে হবে। প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে হবে। সকলে বলেন ক্রিকেটের কথা। ক্রিকেটে সারা বছর কত টুর্নামেন্ট হয় দেখুন। লভলিনা অসমের গ্রাম থেকে উঠে এসেছে। আমরা কেন পারব না?'
কামার আরও বলেছিলেন, 'আমরা যখন বক্সিং করতাম, জাতীয় স্তরে কোনও সাহায্য পাইনি। এখন তো সেই সুযোগও রয়েছে। আমি নিজে ২০০৮ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচক ছিলাম। কিন্তু কোনও ভাল ছেলে চোখে পড়েনি বাংলায়। এখন জাতীয় মহিলা বক্সিং দলের কোচ। কিন্তু কোনও প্রতিশ্রুতিমান মহিলা বক্সারকে বাংলা থেকে লড়তে দেখছি না।'
বাংলায় বক্সিংয়ের করুণ ছবিটা পাল্টাবে কী করে? উপায় বলে দিচ্ছেন ২০০২ সালে ম্যাঞ্চেস্টার কমনোয়েলথ গেমসে সোনাজয়ী বক্সার। আলি কামার বলছেন, 'আমরাও ছবিটা বদলাতে পারি। বছরে এক-আধটা টুর্নামেন্ট করলে হবে না। তৃণমূল স্তর থেকে ছেলেমেয়েদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দিতে হবে। তাতেই ওদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে। অভিজ্ঞতা বাড়বে। আমাদের এখানেও রেসিডেন্সিয়াল অ্যাকাডেমি করা উচিত। অনেকে ফোন করে বলে, আমি বক্সিং শিখতে চাই। কিন্তু থাকে অনেক দূরে। আমি তো কলকাতা থেকে সেখানে গিয়ে শেখাতে পারব না। তবে যদি একটা আবাসিক অ্যাকাডেমি তৈরি হয়, তাহলে আমার পক্ষেও উদীয়মান বক্সারদের তালিম দেওয়া সম্ভব। শুধু কলকাতা নয়, জেলা থেকেও বক্সার তুলে আনায় জোর দিতে হবে।'