Bengal Cricket: ক্লাব থেকে ইস্তফা সিএবি কোষাধ্যক্ষের, তদন্ত চলাকালীন পদে থাকা নিয়ে প্রশ্ন আরও জোরাল
Eden Gardens: ম্যাচের একদিকে সিএবির কোষাধ্যক্ষ প্রবীর চক্রবর্তী। অন্যদিকে তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক বেনিয়ম ও স্বার্থের সংঘাতে জড়ানোর মতো গুরুতর অভিযোগের পাহাড় সাজিয়ে রাখা আইনজীবীর দল।

সন্দীপ সরকার, কলকাতা: শনিবার বেঙ্গল প্রো টি-২০ (Bengal Pro T20) লিগের জোড়া ফাইনাল ছিল ইডেন গার্ডেন্সে (Eden Gardens)। দুপুরে মেয়েদের ম্যাচ। রাতে পুরুষ দলের ফাইনাল। দুপুর ১টা থেকে ছিল মহিলাদের ফাইনাল। টস হয় তার ৩০ মিনিট আগে, বেলা সাড়ে ১২টায়।
আর ঠিক সেই সময়ই কি না ইডেন গার্ডেন্সে চলল আর একটা ম্যাচ। তবে ক্রিকেটীয় লড়াই নয়, আইনি যুদ্ধ। যে ম্যাচের একদিকে সিএবির কোষাধ্যক্ষ প্রবীর চক্রবর্তী। অন্যদিকে তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক বেনিয়ম ও স্বার্থের সংঘাতে জড়ানোর মতো গুরুতর অভিযোগের পাহাড় সাজিয়ে রাখা আইনজীবীর দল। আম্পায়ারের মতো যে ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন সিএবি-র এথিক্স অফিসার, প্রাক্তন বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়।
সিএবি-র সচিবের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলে থানা, আদালত ও সিএবি-র দ্বারস্থ হয়েছিলেন উয়াড়ি ক্লাবের একদল সদস্য। অভিযোগ এক, লোঢা কমিটির সুপারিশ মেনে গঠিত সিএবি-র সংশোধিত গঠনতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে একসঙ্গে দুই পদে বিরাজমান প্রবীর চক্রবর্তী। সিএবি-র কোষাধ্যক্ষ হওয়ার পাশাপাশি তিনি উয়াড়ি ক্লাবের সচিবও।
অভিযোগ দুই, ধারে ও ভারে যা আরও মারাত্মক, প্রবীর চক্রবর্তী সিএবি-র উয়াড়ি ক্লাবের জন্য বরাদ্দ অনুদানের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা তিনি নিজের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছেন বলে অভিযোগ। সিএবি-র কোষাধ্যক্ষের বিরুদ্ধেই আর্থিক বেনিয়মের এত বিস্ফোরক অভিযোগ উঠছে, বঙ্গ ক্রিকেটের ইতিহাসে এ ঘটনা আগে ঘটেছে কি না, মনে করতে পারছেন না ময়দানের কেউই।
সিএবি-র এথিক্স অফিসার, প্রাক্তন বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮ জুন গোটা ঘটনার শুনানি করেন। সেদিন অভিযুক্তের তরফে আরও সময় চাওয়া হয়েছিল বলেই খবর। প্রাক্তন বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় ২৮ জুন, শনিবার ফের একটা শুনানি ডেকেছিলেন। যে শুনানিতে প্রবীর চক্রবর্তীর তরফে দাবি করা হল যে, তিনি উয়াড়ি ক্লাবের সচিব পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। ফলে স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ আর খাটে না।
শুনানিতে ছিলেন সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় ও সচিব নরেশ ওঝা। সিএবি-র আইনজীবী সম্রাট সেন এথিক্স অফিসার, প্রাক্তন বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়কে সহায়তা করার (অ্যাসিস্ট) জন্য ছিলেন। প্রবীর চক্রবর্তীর তরফে ছিলেন আইনজীবী দীপকরঞ্জন মুখোপাধ্যায়। উয়াড়ি ক্লাবের অভিযোগকারীদের তরফেও ছিলেন এক ঝাঁক আইনজীবী।
কী হয়েছে শুনানিতে? শোনা গেল, প্রবীর চক্রবর্তীর আইনজীবী এথিক্স অফিসারের হাতে উয়াড়ি ক্লাবের সচিব পদ থেকে অভিযুক্তের ইস্তফাপত্রের কপি দেন। শোনা গেল, এথিক্স অফিসার জানান, ইস্তফা দিয়ে দিলে তো স্বার্থের সংঘাতের প্রশ্নের অবসান। যদিও উয়াড়ি ক্লাবের অভিযোগকারীদের আইনজীবীরা জানান, একসঙ্গে দুই পদে থাকাটাই যেখানে অবৈধ, সেখানে টাকা নয়ছয় করা হয়েছে স্বার্থের সংঘাত থাকাকালীন। সওয়াল করা হয়, কী করে কেউ অন্যায় করার পরে পদ ছেড়ে দাবি করতে পারেন যে, তিনি ইস্তফা দিয়েছেন এবং আর কোনও দায় তাঁর নেই!
প্রবীর চক্রবর্তী ইস্তফাপত্রের যে কপি এথিক্স অফিসারকে দিয়েছেন, সেটি ১৬ জুনের। ঘটনা হচ্ছে, ৩০ মে প্রথম তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা পড়ে। পরে ১৬ জুন আরও কিছু অভিযোগ যুক্ত হয়। প্রবীর চক্রবর্তীর তরফে বলা হচ্ছে, অভিযোগ উঠতেই তিনি ইস্তফা দিয়েছেন। তিনি ক্লাবকে পদের ফায়দা নিয়ে কোনও সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেননি বলেও জানান।
যদিও প্রশ্ন থামছে না। কেন লোঢা কমিটির সুপারিশ জানার পরেও স্বার্থের সংঘাতে জড়িয়েছিলেন প্রবীর চক্রবর্তী? কেন তিনি অভিযোগ ওঠার পর ইস্তফা দিলেন? তিনি কী করে ক্লাবের জন্য বরাদ্দ টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে পাঠাতে পারেন? কেন সিএবি-র কোষাধ্যক্ষের পদে থেকে এতবড় আর্থিক বেনিয়ম করলেন? কেন প্রায় ১০ বছর উয়াড়ি ক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভা হয়নি?
সিএবি-ও নিষ্কণ্টক হতে পারছে না। প্রবীর চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ এবং একাধিক তদন্ত ও মামলা চলছে জেনেও কেন তাঁকে সাময়িকভাবে কোষাধ্যক্ষের পদ থেকে বরখাস্ত করা হচ্ছে না, জোরাল প্রশ্ন উঠছে। বলা হচ্ছে, অতীতে যখন সহকারী সচিব থাকার সময় তাঁর বিরুদ্ধে কোশেন্ট পাল্টে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল, তাঁকে তৎক্ষণাৎ সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেবার সিএবি প্রশাসকেরা স্বচ্ছতা আঁকড়ে ধরলে এবার পারছেন না কেন?
৫ জুলাই পরবর্তী শুনানি ডেকেছেন এথিক্স অফিসার। ১৯ জুলাই রয়েছে ওম্বাডসম্যান, কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্যের শুনানি।
মাইকেল ক্লার্ক, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, ঝুলন গোস্বামীদের উপস্থিতিতে যেদিন গমগম করল সিএবি, সেদিনই বিতর্কের দাগও লেগে রইল বাংলার ক্রিকেটে।




















