East Bengal: শেষ ৩ মরশুমে চার কোচ বদল, ডার্বি জিতিয়ে লাল হলুদকে এবার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন কুয়াদ্রাত
Kalinga Super Cup 2024: অসাধারণ, গোছানো ও সঙ্ঘবদ্ধ রক্ষণ, সুযোগসন্ধানী আক্রমণ, মাঝমাঠে নির্দিষ্ট পরিকল্পনামাফিক কার্যকলাপ— এইসব অস্ত্রেই বছরের প্রথম ডার্বিতে বাজিমাত করল কার্লস কুয়াদ্রাতের দল।
কলকাতা: মরশুমের শুরুতেই সমর্থকদের যেমন দারুন এক উপহার দিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল, নতুন বছরের শুরুতেও সে রকমই এক উপহার পেলেন লাল-হলুদ সমর্থকেরা। কলকাতার দুই প্রধানের সমর্থকদের কাছে ডার্বিজয়ের চেয়ে বড় উপহার আর কীই বা হতে পারে?
শুক্রবার সন্ধ্যায় ভুবনেশ্বেরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে যদিও ইস্টবেঙ্গলের এই দুর্দান্ত জয় দেখার জন্য গ্যালারি উপছে পড়া ভিড় ছিল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও ক্লেটন সিলভাদের জয়ের পর যে আবহ তৈরি হয়, তা-ই বা কম কী? অসাধারণ, গোছানো ও সঙ্ঘবদ্ধ রক্ষণ, সুযোগসন্ধানী আক্রমণ, মাঝমাঠে নির্দিষ্ট পরিকল্পনামাফিক কার্যকলাপ— এইসব অস্ত্রেই বছরের প্রথম ডার্বিতে বাজিমাত করল কার্লস কুয়াদ্রাতের লাল-হলুদ বাহিনী।
রিজার্ভ বেঞ্চকে সচল ও তৈরি না রাখার চরম মাশুল এ ভাবেই দিতে হল মোহনবাগানকে। এই টুর্নামেন্টে প্রথম দুই ম্যাচেও রিজার্ভ বেঞ্চের খেলোয়াড়দের নিয়েই খেলতে হয়েছে মোহনবাগানকে। কিন্তু ভাগ্যের জোরে সেই দুই ম্যাচে জয় পেয়েছে তারা। কলিঙ্গ সুপার কাপের আগে সুমিত রাঠি, রাজ বাসফোর, অভিষেক সূর্যবংশী, অর্শ আনোয়ার, সুহেল ভাট, রবি রাণাদের কতটা সময় মাঠে খেলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তা হয়তো হাতে গুণে বলে দেওয়া যাবে। তারই ফল ভুগতে হল মোহনবাগানকে।
কী করেছেন কুয়াদ্রাত?
সে দিক দিয়ে দেখতে গেলে মহম্মদ রকিপ, নিশু কুমার, এডুইন ভন্সপল, বিষ্ণু পুতিয়াদের যে সুমিত, সুহেলদের চেয়ে বেশি ম্যাচটাইম দিয়েছেন ইস্টবেঙ্গলের কোচ কুয়াদ্রাত, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ইন্ডিয়ান সুপার লিগের মরশুম শুরুর আগে শৌভিক চক্রবর্তীকে কলকাতা লিগে খেলার জন্য ছেড়ে দেন কোচ, যাতে তাঁকে মরশুমের আসল সময় কাজে লাগাতে পারেন। কুয়াদ্রাতের এই সিদ্ধান্তগুলো দারুণ কাজে এসেছে। যার ফল তিনি এখন পাচ্ছেন।
যদিও মোহনবাগানের মতো তাঁর দলের সাতজন ভারতীয় শিবিরে চলে যাননি বা তিনজন নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়ের চোটও নেই। হরমনজ্যোৎ সিং খাবরা ছাড়া দলের সবাই মোটামুটি সুস্থ। একটা সময় ধারণা তৈরি হয়েছিল নাওরেম মহেশ সিং না থাকলে ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণে তীব্রতা আসে না। সুপার কাপে কিন্তু সেই ধারনা চুরমার হয়ে গিয়েছে। মহেশকে ছাড়াই তিন ম্যাচে আট গোল করে ফেলেছে ইস্টবেঙ্গল। আসলে তাঁর রিজার্ভ বেঞ্চে এমন কয়েকজন খেলোয়াড় মজুত রেখে দিয়েছেন কুয়াদ্রাত, যাঁরা যে কোনও পরিস্থিতিতে প্রথম এগারোয় থাকার যোগ্য।
জাতীয় শিবিরে কখন, কতদিনের জন্য খেলোয়াড় ছাড়তে হতে পারে, কাদের ছাড়তে হতে পারে এই ধারণা মরশুমের শুরু থেকেই ছিল দুই শিবিরে। সেই ধারণা অনুযায়ী রিজার্ভ বেঞ্চ তৈরি রাখাটাও কোচেদের অন্যতম প্রধান কাজ। চোট-আঘাত যে যে কোনও সময় হতে পারে, তাও কোচেদের অজানা নয়। এ সব ভেবেই যে পরিবর্ত খেলোয়াড়দের ৯০ মিনিট খেলার জন্য তৈরি রাখা প্রয়োজন, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন কুয়াদ্রাত।
আইএসএলে যোগ দেওয়ার পর থেকে রবি ফাউলার, মানোলো দিয়াজ, মারিও রিভেরা ও স্টিফেন কনস্টানটাইনরা যে কাজটা ঠিক ভাবে করে উঠতে পারেননি, একা কুয়াদ্রাত দায়িত্ব নিয়ে সেই কাজটা করে ফেলেছেন এবং তাঁর পূর্বসূরীদের দ্বারা যা সম্ভব হয়নি এ বার সেই অসাধ্য সাধনের ইঙ্গিতও দিয়ে রাখলেন অতীতে আইএসএল জয়ী কোচ।
কী করেছে ইস্টবেঙ্গল?
দ্রুত একবার পিছন ফিরে দেখে নেওয়া যাক এ বারের আইএসএলে এখন পর্যন্ত কী করেছে ইস্টবেঙ্গল। জামশেদপুরের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্রয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচেই ক্লেটন সিলভা ফর্মে ফিরে দললেও জয়ে ফেরান। ব্রাজিলীয় তারকার জোড়া গোলে এ বারের লিগের প্রথম জয় পায় তারা। বেঙ্গালুরুতে ফের ছন্দপতন হয় তাদের। ২-১-এ তাদের হারিয়ে লিগের প্রথম জয় পায় সুনীল ছেত্রীর দল। সে দিন হারার মতো না খেলেও হারতে হয় ইস্টবেঙ্গলকে। এর পরে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে ৭৩ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থাকার পরে দু’মিনিটের মধ্যে পরপর দু’টি গোল খেয়ে ১-২-এ হেরে মাঠ ছাড়তে হয় তাদের।
কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ফের ১-২-এ হারে লাল-হলুদ বাহিনী। এক গোলে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় ৮৫ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন ক্লেটন সিলভা। চেন্নাইনের বিরুদ্ধেও ৮৫ মিনিট পর্যন্ত এক গোলে এগিয়ে থাকার পর গোল খেয়ে জেতা ম্যাচ ১-১ ড্র করে লাল-হলুদ বাহিনী। কিন্তু নর্থইস্টের বিরুদ্ধে তাদের ৫-০-য় জয় আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দেয় তাদের। তবে পাঞ্জাব, মুম্বই সিটি এফসি ও ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধে তাদের পরপর তিন ম্যাচ গোলশূন্য করে বছরের শেষে লিগের আট নম্বরে রয়ে যায় লাল-হলুদ বাহিনী। আগামী মাসে এই জায়গা থেকেই ফের শুরু করবে তারা। তার আগে সুপার কাপের এই পারফরম্যান্স যে কতটা চাঙ্গা করে তুলবে, সেটাই দেখার। ---- তথ্য সংগ্রহ: আইএসএল মিডিয়া