EBFC vs MSC: ন'জন নিয়ে এক ঘণ্টার অধিক সময় লড়াই, মহামেডানের বিরুদ্ধে ড্রয়ে মরশুম প্রথম পয়েন্ট ইস্টবেঙ্গলের
East Bengal vs Mohammedan Sporting: ম্যাচের ২৯ মিনিটে ইস্টবেঙ্গলের নন্দকুমার ও ৩০ মিনিটে নাওরেম মহেশ সিংহ লাল কার্ড দেখেন।
কলকাতা: এক ঘণ্টারও অধিক সময় বাকি ছিল। মাত্র দুই মিনিটে নন্দকুমার ও নাওরেম মহেশ সিংহ দুই লাল কার্ড দেখায় নয়জনে নেমে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল (East Bengal)। এই পরিস্থিতিতেই চলল দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই। পরবর্তী এক ঘণ্টারও অধিক সময় ফুটবলপ্রেমীরা সাক্ষী থাকল লাল হলুদের লড়াই এবং মহামেডান স্পোর্টিংয়ের (Mohammedan Sporting) চরম হতাশাজনক ফুটবলের। নয়জনের ইস্টবেঙ্গলকেও হারাতে পারল না সাদা কালো ব্রিগেড। অপরদিকে, কলকাতা ডার্বিতে ড্র করেই এ মরশুমের আইএসএলের (ISL 2024-25) প্রথম পয়েন্ট ঘরে তুলল লাল হলুদ।
এই ড্র যদি ইস্টবেঙ্গলের কাছে হয় প্রায় জয়ের সমান, তা হলে মহমেডান এসসি-র কাছে এই ড্র কার্যত হারের মতোই। দুর্বল ইস্টবেঙ্গলকে সামনে পেয়েও তাদের রক্ষণে ফাটল ধরাতে পারলেন না সাদা-কালো ব্রিগেডের ফুটবলাররা। সারা ম্যাচে প্রায় ৭৫ শতাংশ বল দখলে রাখে তারা। ১৬টি গোলের সুযোগ তৈরি করে, বিপক্ষের বক্সের মধ্যে ৫০ বার বল ছোঁয় এবং ফাইনাল থার্ডে ২১০টি পাস খেলে মহমেডান। তা সত্ত্বেও মাত্র পাঁচটি শট লক্ষ্যে ছিল তাদের। কিন্তু একবারের জন্য প্রতিপক্ষের জালে বল জড়াতে পারেনি তারা।
ন’জনে খেলা ইস্টবেঙ্গল এ দিন সারা ম্যাচে একটি মাত্র শট গোলে রাখতে পারে। সব মিলিয়ে চারটির বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি তারা। বিপক্ষের বক্সে মাত্র দশবার বল ছুঁতে পেরেছে। ম্যাচের অধিকাংশ সময় রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলা ছাড়া তাদের কোনও উপায়ও ছিল না। এই ড্রয়ের ফলে লিগ তালিকায় কোনও দলেরই স্থান পরিবর্তন হল না।
এ দিন দলে তিনটি পরিবর্তন করে মাঠে নামে ইস্টবেঙ্গল। লালচুঙনুঙ্গা, শৌভিক চক্রবর্তী ও নাওরেম মহেশ শুরু করেন যথাক্রমে প্রভাত লাকরা, জিকসন সিং ও পিভি বিষ্ণুর জায়গায়। অন্যদিকে মহমেডান এসসি অমরজিৎ সিং ও গোলকিপার ভাস্কর রায়কে এ দিন প্রথম এগারোয় রাখে যথাক্রমে ওয়াহেংবাম লুয়াং ও পদম ছেত্রীর জায়গায়।
প্রথম ১৫ মিনিটে মহমেডান এসসি-র আধিপত্যই বেশি ছিল। প্রায় ৬৭ শতাংশ বল ছিল তাদের দখলে। দু’টি গোলের সুযোগও পায় তারা। পেনাল্টি বক্সের ঠিক সামনে থেকে ফ্রি কিকও পায় সাদা-কালো বাহিনী। কিন্তু কোনও সুযোগই কাজে লাগাতে পারেনি তারা। এই সময়ে ইস্টবেঙ্গলের চেয়ে তাদের আক্রমণেই বেশি তীব্রতা ও গতি দেখা যায়।
দ্বিতীয় কোয়ার্টার থেকেই ক্রমশ খেলায় ফেরার চেষ্টা শুরু করে ইস্টবেঙ্গল ও কুড়ি মিনিটের মাথায় বক্সের ঠিক বাইরেই ফ্রি কিক আদায় করে নেন দিয়ামান্তাকস। মাদি তালালের সরাসরি ফ্রিকিক বাঁ দিকে ডাইভ দিয়ে অসাধারণ দক্ষতায় বাঁচান মহমেডানের তরুণ গোলকিপার ভাস্কর রায়।
কিন্তু ম্যাচের ২৮ মিনিটের মাথায় যে ঘটনা ঘটে, তা ইস্টবেঙ্গলের কাছে এক বড়সড় ধাক্কা। অমরজিৎ সিং কিয়ামের মুখে হাত চালানোয় প্রথমে লাল কার্ড দেখেন নন্দকুমার শেকর। এই ঘটনা নিয়ে মেজাজ হারানোয় ও রেফারির সঙ্গে তর্ক করায় মহেশ সিং নাওরেমকেও দ্বিতীয় হলুদ তথা লাল কার্ড দেখানো হয়। আইএসএলের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও দলকে প্রথমার্ধেই জোড়া লাল কার্ড দেখতে হল।
দুই নির্ভরযোগ্য উইঙ্গারকে হারিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই দুর্বল হয়ে পড়ে লাল-হলুদ বাহিনী। এই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন গোমেজ-ফ্রাঙ্কারা। রক্ষণে মনোনিবেশ করা ছাড়া তখন আর কোনও রাস্তা ছিল না ইস্টবেঙ্গলের সামনে।
এ দিন ইস্টবেঙ্গল রক্ষণে হিজাজি মাহের যথেষ্ট তৎপর ছিলেন। জোড়া লাল কার্ড হওয়ার পর মিডফিল্ডাররাও বেশিরভাগই রক্ষণে নেমে আসেন। ফলে জোড়া লাল কার্ডের পরই আসা ধাক্কা সামলে নেয় তারা। তবে বিরতির আগে সল ক্রেসপোকেও হলুদ কার্ড দেখতে হয়। তবে ন’জনে খেলার ঘটনা এর আগে আরও আটবার ঘটেছে এই লিগে।
গোলের গন্ধ পেয়ে বারবার আক্রমণে ওঠে মহমেডান। প্রথমার্ধের শেষ কোয়ার্টারে ৮৫ শতাংশ বল ছিল মহমেডানের দখলে। সাত-সাতটি কর্নার আদায় করলেও একটিও কাজে লাগাতে পারেনি তারা। চারটি শট গোলেও রাখেন ফ্রাঙ্কারা। কিন্তু কোনওটিই জালে জড়াতে পারেননি।
বিপর্যস্ত প্রতিপক্ষকে আরও চাপে ফেলতে বিরতির পর গোমেজের জায়গায় সিজার মানজোকিকে নামায় মহমেডান। অমরজিতের জায়গায় নামানো হয় লালরিনফেলাকে। ৫১ মিনিটের মাথায় বাঁ দিক থেকে আদিঙ্গার ক্রস পেয়ে হেডে গোল করার সুবর্ণ সুযোগ পান বিকাশ সিং। কিন্তু ছ’গজের বক্সের সামনে থেকে হেড করে গোলের বাইরে বল পাঠিয়ে দেন তিনি। দু’মিনিট পরেই বক্সের মধ্যে বাঁ দিক থেকে নেওয়া শট বারের ওপর দিয়ে উড়িয়ে দেন ফ্রাঙ্কা। তার আগে তাঁর গোলমুখী শট সেভও করেন গিল।
এ দিন পরপর সুযোগ তৈরি করেও তা কাজে লাগাতে না পারার নজির গড়ে মহমেডান এসসি-র ফুটবলাররা। ৬৪ মিনিটে বাঁ দিক থেকে যে লো ক্রস দেন ফ্রাঙ্কা, তাতে গোলের সামনে গিয়ে টোকা মারলেই হয়তো গোল পেতেন মানজোকি। কিন্তু তিনি বলে পৌঁছতেই পারেননি। আক্রমণে ইস্টবেঙ্গলের লোক কমে যাওয়ায় এ দিন গোল না খাওয়ার দিকেই মনোনিবেশ করে ইস্টবেঙ্গল এবং সেই লক্ষ্যে তারা সফলও হয়। দুর্দান্ত রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলেন মহম্মদ রকিপ, আনোয়ার আলিরা। তবে ফাইনাল থার্ডে গিয়ে মহমেডানের খেই হারিয়ে ফেলার রোগও তাদের যথেষ্ট সাহায্য করে।
রেমসাঙ্গাকে তুলে ৬৫ মিনিটের মাথায় মকান চোঠেকে নামানোর পরেও আক্রমণের এই ব্যর্থতা বিন্দুমাত্র কমেনি। ম্যাচের বয়স যখন ৭০ মিনিট পেরিয়েছে, তখন দেখা যায় ইস্টবেঙ্গলের বক্সে সাতজন লাল-হলুদ জার্সির খেলোয়াড় রয়েছেন। ৭৩ মিনিটে চোট পাওয়া শৌভিকের বদলে নামেন জিকসন সিং। এই ম্যাচের আগে অনুশীলনে জিকসনকে রক্ষণাত্মক ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল। এ দিন মাঠে নেমেও তাঁকে সেই ভূমিকাতেই দেখা যায়।
ম্যাচের শেষ দিকে, ৮২ মিনিটের মাথায় গোলের যে সুযোগ পায় মহমেডান, সেটি ছিল সহজতম। ছগজের বক্সের সামনে থেকে গোলে শট নেওয়ার সুযোগ পান মকান চোঠে। কিন্তু তাঁর শট লাগে লালচুঙনুঙ্গার পিঠে। ছিটকে আসা বল ঝাঁপিয়ে পড়ে দখলে নিতে যান গিল। কিন্তু সেই বল গোলের দিকে পাঠাতে চান জুডিকা এবং তাঁর পা লাগে গোলকিপারের গায়ে। তবে রেফারি কোনও কড়া পদক্ষেপ নেননি।
এর পরেই মাদি তালালের জায়গায় নামেন ক্লেটন সিলভা। ওই সময়ে আকস্মিক আক্রমণে উঠে একটি গোল করে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েই মাঠে নামেন তিনি। কিন্তু তাঁকে সাহায্য করার মতো তখন কেউ ছিলেন না। টানা ৭০ মিনিট ধরে নিজেদের দূর্গরক্ষা করতে করতে হতোদ্যম হয়ে পড়েন দিয়ামান্তাকসরা। ফলে দশ মিনিটের বাড়তি সময় পেয়েও এই লক্ষ্যপূরণ করতে পারেনি তারা। নাগাড়ে গোলের সুযোগ তৈরি করেও ব্যর্থ হয়ে ক্লান্ত মহমেডানকেও শেষ দিকে হাল ছেড়ে দিতে দেখা যায়।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।
আরও পড়ুন: একের পর এক চোটে নাজেহাল নেমার, তাঁকে ছেঁটে ফেলে রোনাল্ডোকে দলে নিতে আগ্রহী আল হিলাল!