শনিবার গুয়াহাটির ইন্দিরা গাঁধী অ্যাথলেটিক স্টেডিয়ামে চলতি আইএসএলের দ্বিতীয় মোহন-ইস্ট ডার্বিতে যে যুবভারতীর অসাধারণ পরিবেশকে মিস করবেন, তাও জানিয়েছেন অস্কার, যিনি ইস্টবেঙ্গলের দায়িত্ব নেওয়ার পর কলকাতায় প্রথম পা রাখেন প্রথম ডার্বির সকালেই। তার পরে খাদের কিনারা থেকে দলকে টেনে নিয়ে এলেও যে জায়গায় তাদের তুলে আনতে পারবেন বলে আশা করেছিলেন, তা পারেননি। কিন্তু দলের পারফরম্যান্স ও আত্মবিশ্বাসের স্তর যে আগের চেয়ে অনেক উন্নতি করেছ, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই তাঁর।
এখন তাঁর দলের নতুন সমস্যা চোট-আঘাত। দলের নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়রা অনেকেই চোট পেয়ে মাঠের বাইরে। ফলে মাঠে দলটাও মনের মতো করে সাজাতে পারছেন না তিনি। এই অবস্থায় শনিবারের ডার্বি। কতটা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, জানতে চাইলে অস্কার বলেন, 'আমার কোচিং জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ এসেছে। শনিবারের ম্যাচটা তার মধ্যে অবশ্যই অন্যতম। তবে কঠিনতম নয়। এটা ঠিকই যে, মোহনবাগান অনেক ভাল ফর্মে থাকা দল। হয়তো এই ম্যাচে তাদের সফল হওয়ার সুযোগই বেশি। তবে ওদের থামানোর জন্য যা যা করা দরকার, সবই করব আমরা'।
কী কী করবেন বলে ঠিক করেছেন, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি। সাংবাদিক বৈঠকে লাল-হলুদ কোচ বলেন, 'ভাল পরিকল্পনা ও কৌশল তৈরি করছি আমরা। আবেগ ঝেড়ে ফেলে আমাদের ফুটবলে মনোনিবেশ করতে হবে। আত্মবিশ্বাস ও নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া এখানে বেশি জরুরি। সবচেয়ে জরুরি ছোটখাটো ভুল না করা'।
গত ম্যাচের পরে বলেছিলেন, চাপে পড়লে তবেই তাঁর দল ভাল খেলছে। ডার্বির প্রেশার কুকারে ঢুকে পড়লেও নিশ্চয়ই ভাল খেলবে তারা? কোচের উত্তর, 'চাপ থাকাটা আমাদের পক্ষে ভাল। এই চাপটাই আমরা উপভোগ করি এবং শনিবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। গত কয়েক দিন ধরে চলা ডার্বি নিয়ে নানা হইচইয়ের কথাও আর মনে রাখতে চান না তিনি। বলেন, ডার্বির মতো বিশাল ম্যাচকে ঘিরে হইচই থাকবেই। কিন্তু আমরা আমাদের মতোই চলব। মাঠের বাইরের ব্যাপার নিয়ে বেশি মাথা না ঘামিয়ে ফুটবল নিয়ে, দলের পারফরম্যান্স নিয়ে বেশি ভাবতে চাই। আমরা পুরোপুরি ফোকাসড রয়েছি। প্রস্তুতিতে ডুবে রয়েছি। খেলা যেখানেই হোক, আমাদের নিজেদের উজাড় করে দিয়ে ম্যাচটা জিততে হবে। এটা আমাদের কর্তব্য'।
মোহনবাগানের ফর্ম তাদের চেয়ে ভাল, এ কথা স্বীকার করলেও নিজেদের এই ম্যাচে পিছিয়ে রাখতে চান না ইস্টবেঙ্গলের স্প্যানিশ কোচ। বলেন, 'এই ধরনের ম্যাচে ‘আন্ডারডগ’ বলে কিছু হয় নাকি? মনে হয় না। আসলে আপনারা বোধহয় আমাকে দিয়ে কিছু কড়া কথা বলাতে চান। তাই এ কথা জিজ্ঞেস করছেন। আমি বলব, এই ম্যাচে দুই দলেরই জেতার সুযোগ ৫০ শতাংশ করে। দুই দলেরই সমস্যা আছে। মোহনবাগানও কয়েকটা ম্যাচে অনেক কষ্ট করে শেষ মুহূর্তে গোল দিয়ে জিতেছে। তাই এই ম্যাচে কেউই এগিয়ে বা পিছিয়ে আছে বলে মনে হয় না'।
মোহনবাগানকে আটকাতে কী কী করবেন, 'জানতে চাইলে অস্কার বলেন, ওদেরও তো কাজ আমাদের আটকানো। দুই দলেরই রক্ষণ, আক্রমণ আছে। তবে আমাদের আরও প্রতিক্রিয়াশীল হতে হবে। এমনিতেই ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করতে আমাদের সমস্যা হচ্ছে, ঠিকমতো মাঝমাঠ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না আমরা। এই সমস্যাগুলো সত্ত্বেও কী ভাবে টেকনিকে নিজেদের আরও শক্তিশালী করে তোলা যায়, সেই চেষ্টাই করছি। দেখা যাক, ওরা আমাদের আটকাতে পারে কি না'।
দলের চোট-আঘাত সমস্যা নিয়ে তিনি বলেন, 'আনোয়ার আলি খেলতে পারবে কি না, তা বোঝা যাবে আগামী ৪৮ ঘণ্টায়। শেষ পর্যন্ত ওকে যদি নাও পাওয়া যায়, তা হলে আমাদের বিকল্প ব্যবস্থা আছে। তবে সউলের (ক্রেসপো) খেলা কঠিন। ওর ফিটনেস এখনও সেই জায়গায় আসেনি। কাল কোন দল ভাল খেলবে , তা প্রমাণ করার দায়িত্ব আমাদের দুই দলেরই। এই সময়ে চোট-আঘাত হওয়াই স্বাভাবিক। দুই দলেই অনেকে নেই। কিন্তু এই সমস্যা নিয়ে আমাদের অনেক দিন ধরেই চলতে হচ্ছে। এর মধ্যে থেকেই সম্ভাব্য সেরা দলটা তৈরি করে ডার্বিতে দল নামানোই আমার কাজ। সেই চেষ্টাই করব'।
প্রথম ডার্বিতে তাঁর দল দু’গোলে হেরেছিল। সেই ম্যাচের দিনই সকালে কলকাতায় এসে পৌঁছন অস্কার। তার প্রায় আড়াই মাস পরে আর একটা ডার্বি। সেই ডার্বির তুলনায় এই ডার্বিতে তাঁর দল অনেক ভাল অবস্থায় রয়েছে বলে মনে করেন ক্লেটন সিলভাদের কোচ।
দুই সময়ে দলের অবস্থার তুলনা টেনে মশাল-বাহিনীর কোচ বলেন, 'প্রথম ডার্বিতে দলের অবস্থা যে রকম ছিল, তাতে আমাদের জেতার সম্ভাবনাও কম ছিল। এখন অবস্থা অনেক ভাল। ডিসেম্বর মাসটা আমাদের ভাল কেটেছে। দলের ছেলেদের আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে। তবে চোট-আঘাতের জন্য কয়েকজন নির্ভরযোগ্য ফুটবলারের অভাব বোধ করছি। আমরা যেহেতু পয়েন্ট টেবলের নীচের দিকে আছি, তাই মোহনবাগান হয়তো আমাদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলবে। কিন্তু গত চার-পাঁচটা ম্যাচের ফল যদি দেখেন, তা হলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারবেন যে, সেরা ছয়ে পৌঁছতে কতটা মরিয়া আমরা'।
সাম্প্রতিক এই উন্নতির কথা মনে করিয়ে দিয়ে অস্কার ব্রুজোন বলেন, 'হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ম্যাচে আমরা যথেষ্ট ভাল খেলেছি। তবে শেষ দিকের ভুলে আমাদের সেই ম্যাচে জয় হাতছাড়া হয়েছে। বুধবার এফসি গোয়ারও ঠিক আমাদের মতোই হয়েছে। ওরাও হায়দরাবাদের শেষ মুহূর্তের গোলের জন্য জিততে পারেনি। তবে মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে দলের পারফরম্যান্সে আমি খুশি হতে পারিনি। আসলে দলটাই ঠিকমতো দাঁড় করানো যায়নি সে দিন। শেষ মুহূর্তের ভুলে পয়েন্ট হাতছাড়া হয়েছে ঠিকই। তবে ওই ম্যাচের জন্য আমাদের মানসিক শক্তিতে কোনও ঘাটতি হয়নি'।
নিজেদের চেনা মাঠ ও পরিবেশ ছেড়ে ইন্দিরা গান্ধী অ্যাথলেটিক স্টেডিয়ামে খেলতে হচ্ছে বলে যে উদ্বিগ্ন তিনি, তা নয়। বরং বলেন, 'এশিয়ার অন্যতম সেরা লিগ আইএসএলে প্রত্যেক মাঠের মানই যথেষ্ট ভাল। এমনকী প্র্যাকটিসের মাঠও যথেষ্ট ভাল পাওয়া যায়। গুয়াহাটিতেও ভাল মাঠ পাব, এই আশাই করি। তাই মাঠের জন্য কেউ বাড়তি সুবিধা পাবে বলে আমার মনে হয় না। যুবভারতীর মতো অসাধারণ পরিবেশ হয়তো গুয়াহাটিতে পাব না। এখানকার মতো এত লোক, এমন হইচই ওখানে পাব বলে মনে হয় না। তবে দুই দলই তা মিস করব। সমর্থকেরা নিশ্চয়ই উপভোগ করবেন ম্যাচটা। আশা করি, সবাই সংযত থাকবেন এবং সবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন'।