Rabi Hasda Exclusive: সংসারের হাল ধরতে টোটো চালানোর কথা ভেবেছিলেন, সেই রবির দাপটেই বাংলা ফুটবলে নতুন ভোর
Santosh Trophy Exclusive: বাংলার আট থেকে আশি জেনে গিয়েছেন, রবি হাঁসদার গোলেই ফের ফুটবলে দেশের সেরা হয়েছে বাংলা। সন্তোষ ট্রফিতে বাংলাকে চ্যাম্পিয়ন করার কারিগর।
কলকাতা: তাঁকে ফোন করলেই কলার টিউনে বেজে ওঠে লোকসঙ্গীত। মুঠোফোনেই যেন পাওয়া যায় গ্রাম বাংলার স্নিগ্ধতা। যদিও তাঁকে ফোনে পাওয়াই এখন দুষ্কর। হায়দরাবাদ থেকে কলকাতায় ফেরা ইস্তক তাঁর মোবাইল ফোন বেজেই চলেছে। সংবর্ধনার জোয়ারে ভাসছেন। সঙ্গে আবার নতুন দায়বদ্ধতা। মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাব আইএসএলের জন্য সই করিয়েছে তাঁকে। দুদিন জিরনো তো দূর অস্ত, রবি হাঁসদাকে ফের নেমে পড়তে হয়েছে মাঠে। প্র্যাক্টিসে। আরও বড় সংকল্প নিয়ে।
সপ্তাহ দুয়েক আগে হলেও রবি হাঁসদা (Rabi Hasda) কে, কী করেন, পরিচয় করানোর দরকার পড়ত। এখন আর পড়ছে না। বাংলার আট থেকে আশি জেনে গিয়েছেন, রবি হাঁসদার গোলেই ফের ফুটবলে দেশের সেরা হয়েছে বাংলা। সন্তোষ ট্রফিতে বাংলাকে চ্যাম্পিয়ন করার কারিগর। ১৩ গোল করে যিনি ভেঙে দিয়েছেন ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তি মহম্মদ হাবিবের রেকর্ড। এর আগে সন্তোষ ট্রফিতে ১১ গোল করার নজির ছিল হাবিবের। সেটাই এতদিন টুর্নামেন্টের ইতিহাসে কোনও এক মরশুমে সবচেয়ে বেশি গোলের নজির ছিল। সেই কীর্তি ভেঙে নতুন মাইলফলক গড়েছেন রবি।
পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট থানার মুশারু গ্রামের আদিবাসী পাড়ায় বাড়ি রবির। দারিদ্র নিত্য সঙ্গী। বাবা ভাগচাষী হিসাবে কাজ করতেন। মাও চাষের কাজই করতেন। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরনোর দশা। রবির বাবা সুলতান হাঁসদার স্বপ্ন ছিল যে, ছেলে একদিন অনেক বড় ফুটবলার হয়ে পরিবারকে গর্বিত করবে। রবি বাবার সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন।
ছোট থেকেই রবির চোখে ছিল রঙিন স্বপ্ন। ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন। জনাইয়ের পরিচিত ফুটবল কর্তা অসিত রায়ের চোখে পড়ে গিয়েছিলেন রবি। তারপরই কাশীপুর সরস্বতী ক্লাবে খেলার সুযোগ পান তিনি। সেখান থেকেই শুরু হয় রবির পেশাদার ফুটবলের সফর। পরে রেনবো ক্লাব এবং তারপর কাস্টমসের হয়ে ভাল খেলার সুবাদে জাতীয় গেমসে বাংলার প্রতিনিধিত্বের সুযোগ পেয়েছিলেন।
যদিও সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হতে বসেছিল ২০২৩ সালে। হাঁটুতে গুরুতর চোট পান রবি। মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছিল দীর্ঘদিন। সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে মাঝে মধ্যে 'খেপ' খেলতেন। চোটের কারণে সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বাবার আকস্মিক মৃত্যু। হাঁসদা পরিবার তখন যেন বিপর্যস্ত। রবি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন, ফুটবল ছেড়ে টোটো চালাবেন। কিংবা চাষের কাজ করবেন।
তবে জেদ যাঁর রক্তে, তাঁকে ভেসে যেতে দেননি কাস্টমস ক্লাবের কর্তারা। রবির পাশে দাঁড়ান। তাঁকে আর্থিকভাবে সহায়তা করেন। রবি বলছিলেন, 'খুব কঠিন সময় ছিল সেটা। মানসিকভাবেও চাপে ছিলাম। তবে ক্লাব পাশে থাকায় ভরসা পাই। কলকাতা লিগে সেবার ৯ গোল করে ঘুরে দাঁড়াই।'
সন্তোষ ট্রফি জিতে নিজের একটি স্বপ্ন পূরণ করেছেন রবি। বলছিলেন, 'বাংলার হয়ে দেশের সেরা টুর্নামেন্টে খেলা, বাংলাকে চ্যাম্পিয়ন করার স্বপ্ন দেখতাম। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে আমার।' আইএসএলে এবার দেশ-বিদেশের সেরা স্ট্রাইকারদের সঙ্গে লড়াই করার সুযোগ রবিবার সামনে। ২৭ বছরের স্ট্রাইকার বলছিলেন, 'কোচ সঞ্জয় সেন স্যরের পরামর্শেই মহমেডান স্পোর্টিংয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলাম। আমাকে নতুন করে গড়ে তুলতে সঞ্জয় স্যরের ভূমিকা অনেকটাই।' বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যর কাছেও তালিম নিয়েছেন। রবির নির্মাণের নেপথ্যে রয়েছে তাঁরও অবদান।
আরও পড়ুন: বাংলা থেকে যোগাসনে প্রতিভার খোঁজে বড় উদ্যোগ হাওড়ার সোনার মেয়ে সুস্মিতার
তবে ছেলের সাফল্য দেখে যাওয়া হয়নি সুলতান হাঁসদার। রবি বলছিলেন, '২০২৪ সালের জুন মাসে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন বাবা। এই দিনটি দেখে যেতে পারলে ভীষণ খুশি হতেন বাবা।' সন্তোষ জয়ের পুরস্কার হিসাবে পুলিশে চাকরি পেয়েছেন। আপাতত মা, স্ত্রী ও কন্যা রিমির জন্য ফুটবল মাঠে ধারাবাহিকতা দেখাতে চান রবি।
আরও পড়ুন: সন্তোষ চ্যাম্পিয়নদের নিয়োগপত্র দিলেন মুখ্যমন্ত্রী, পুলিশের কোন কোন পদে হল চাকরি?