East Bengal FC: ক্লেটন সিলভার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়াল ইস্টবেঙ্গল এফসি
ISL News: কুড়ি ম্যাচে ১২ গোল করে চলতি হিরো আইএসএলের লিগ পর্বে সর্বোচ্চ গোলদাতার সন্মান অর্জন করে নিয়েছেন ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকার ক্লেটন।
কলকাতা: দলের তারকা স্ট্রাইকার ও সর্বোচ্চ গোলদাতা ক্লেটন সিলভার (Clayton Silva) সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়াল ইস্টবেঙ্গল এফসি। বৃহস্পতিবার এই ঘোষণা করে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। এ দিন তাদের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডলেও এই খবর জানানো হয়।
কুড়ি ম্যাচে ১২ গোল করে চলতি হিরো আইএসএলের লিগ পর্বে সর্বোচ্চ গোলদাতার সন্মান অর্জন করে নিয়েছেন ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকার ক্লেটন। লিগ পর্যায়ে এতগুলো গোল ও এতগুলো ম্যাচের নায়কের সন্মান অর্জন করতে পারেননি আর কোনও ফুটবলার। ডুরান্ড কাপে মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে তিনি দুটি গোলও করেছিলেন।
এই মরশুমের আগে বেঙ্গালুরু এফসি থেকে বেঙ্গালুরু এফসি থেকে ৩৬-এর ক্লেটনকে এক বছরের চুক্তিতে নিয়ে আসে ইস্টবেঙ্গল এফসি। নিজের দেশে তো বটেই, ভারতে আসার আগে মেক্সিকো, চিন, তাইল্যান্ডের একাধিক ক্লাবেও খেলেছেন তিনি। তাইল্যান্ডের ফুটবলে তিনিই প্রথম বিদেশি, যিনি একশোর ওপর গোল করেছেন।
বেঙ্গালুরু এফসি-র হয়ে ২০২০-২১-এ হিরো আইএসএলে সাত গোল ও পরের মরশুমে ন’গোল করার পরে লাল-হলুদ শিবিরে যোগ দেন সিলভা। গোলের যে আশা নিয়েই তাঁকে সই করানো হয়, সেই আশা পুরোপুরি ভাবে পূর্ণ করেন তিনি। এই মরশুমই তাঁর সেরা গিয়েছে। কিন্তু তাঁর দল অনেকটা পিছনে রয়ে গিয়েছে। এ বারে যে ভাবে তিনি বহু ম্যাচে গোল করে দলকে সাহায্য করেছেন, আগামী মরশুমেই সেই ফর্মই ধরে রাখতে পারবেন কি না, সেটাই দেখার।
এই চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধিতে ক্লেটন বলেন, “পরের মরসুমেও এখানে থাকতে পারব জেনে খুবই ভাল লাগছে। আমি প্রকল্পয় বিশ্বাস করি। কঠিন সময় কাটিয়েও আমরা কয়েকটি ম্যাচ খুবই উপভোগ করেছি। আশা করি আগামী মরশুমে সবাই মিলে নিজেদের শুধরে ফিরে আসব”।
তিনি নিজে সফল হলেও দলের ব্যর্থতা প্রসঙ্গে সম্প্রতি সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “এ বারের আইএসএলে খুব ভাল ভাল দল রয়েছে। প্রত্যেকেই ভাল খেলছে। আইএসএলে এক একটা ম্যাচ জেতা বেশ কঠিন কাজ। প্রচুর ওঠানামা হচ্ছে। এখানে দু-তিনটে ম্যাচ জেতার পরেও দু-তিনটে ম্যাচে হারতে পারে যে কোনও দল”।
আগের ক্লাবের ভূমিকার সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলে তাঁর ভূমিকার তফাৎ নিয়ে ৩৬ বছর বয়সি ফরোয়ার্ড বলেন, “বেঙ্গালুরু এফসি-তে আমি একজন নিখুঁত নাম্বার নাইনের ভূমিকা পালন করতাম, বিপক্ষের দুই ডিফেন্ডারের মাঝখানে। কিন্তু এখানে আমি অনেকটা জায়গা জুড়ে খেলার স্বাধীনতা পাই। এ ভাবেই খেলা বেশি পছন্দ আমার। বেঙ্গালুরু দলে অনেক ভাল ভাল খেলোয়াড় আমার সঙ্গে খেলত। সেরা চারে পৌঁছনোর মতো দল ছিল আমাদের। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, তা পারিনি”। এ বারেও তাঁর দুর্ভাগ্য যে প্লে অফে খেলার সুযোগ হল না তাঁর।
ভারতে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি বলেন, “ভারতে এসেছিলাম মূলত অর্থের জন্যই। কিন্তু এখানে আসার আগেও কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছিলাম, তারা খুব ভাল ধারণা দিয়েছিল আমাকে। ২০১৮-য় বেঙ্গালুরু থেকে প্রথম প্রস্তাব আসে আমার কাছে, তখন আমি তাইল্যান্ডে খেলছিলাম। ওখানে মরশুম শেষ করার পরে আমার মনে হয়, ওখানে আমার আর কিছু দেওয়ার নেই, এ বার অন্য জায়গায় যাওয়া উচিত। নতুন একটা দেশে যেতে চাইছিলাম। এখানকার ভিডিও দেখে দেশটাকে খুব ভালও লেগে গিয়েছিল আমার। তাই ভারতে আসার সিদ্ধান্ত নিই”।
দেশের ফুটবলে খেলতে না পারলেও আফসোস নেই তাঁর। ফুটবলজীবনে আর দেশে ফিরতেও চান না অভিমানী ক্লেটন। তবে এখানকার লাল-হলুদ সমর্থকদের মধ্যে দেশের ফুটবলপ্রেমীদের ছায়া দেখতে পান তিনি। বলেন, “ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকেরা অনেকটা ব্রাজিলের সমর্থকদের মতো। ওরা সব সময় চায় দল জিতুক। রাস্তায় ধরে সেই আব্দারই করে। দল হারার পরে এক সমর্থক আমাকে বলেছিল, তুমি ব্রাজিলে ফিরে যাও। ওরা এ রকমই আবেগপ্রবণ। চিনের ফুটবলপ্রেমীরা এতটা ছটফটে নয়, শান্তশিষ্ট। তবে এখানকার সমর্থকদের আমার খুব ভাল লাগে। বেঙ্গালুরুর সমর্থকদের চেয়েও ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা বেশি হইচই করতে ভালবাসে”।
ফুটবলের এই আবেগ, ভালবাসা, আন্তরিকতার মধ্যেই যে থাকতে চান তিনি, তাও সে দিন স্পষ্ট জানিয়ে দেন ব্রাজিলের নতুন চিতা। এ বার আরও এক বছরের জন্য তাঁর সেই ভারত-অভিযান অব্যহত থাকতে চলেছে।