![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/Premium-ad-Icon.png)
Siddhartha Lahiri Exclusive: মুস্তাফিজুরকে বদলে দেওয়া কলকাতার কোচ অর্থাভাবে মোবাইল ফোনের ব্য়বসাও করেছেন
বেহালার ভাড়া বাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন। বাইপাসের ধারে রুবি হাসপাতালের কাছে ফ্ল্যাট কিনেছেন। সিএবি যদি ডাকে, বাংলার ক্রিকেটের জন্য কাজ করতে আসবেন? সিদ্ধার্থ বলছেন, 'বাংলা ডাকলে, সিএবি তৃণমূল স্তরে কাজে লাগাতে চাইলে নিশ্চয়ই আসব।'
![Siddhartha Lahiri Exclusive: মুস্তাফিজুরকে বদলে দেওয়া কলকাতার কোচ অর্থাভাবে মোবাইল ফোনের ব্য়বসাও করেছেন ABP Exclusive: Know about Siddhartha Lahiri of Rajasthan Royals plays a major role in Mustafizur Rahman's comeback Siddhartha Lahiri Exclusive: মুস্তাফিজুরকে বদলে দেওয়া কলকাতার কোচ অর্থাভাবে মোবাইল ফোনের ব্য়বসাও করেছেন](https://feeds.abplive.com/onecms/images/uploaded-images/2021/05/11/dbad835058c81b9ed91f0145c47d9aed_original.jpg?impolicy=abp_cdn&imwidth=1200&height=675)
কলকাতা: শুরু করেছিলেন সাড়া জাগিয়ে। তাঁর কাটারকে এক সময় ক্রিকেটবিশ্বের সবচেয়ে ধারাল অস্ত্র মনে করা হতো। তবে চোট আঘাতে জর্জরিত হয়ে ছন্দ হারিয়েছিলেন বাংলাদেশের পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। সদ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছেন। অর্ধসমাপ্ত আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালসের জার্সিতে ফের অপ্রতিরোধ্য দেখাতে শুরু করেছিল মুস্তাফিজুরকে। বাঙালি পেসারের এই প্রত্যাবর্তনের নেপথ্যে রয়েছেন বাংলারই এক কোচ। কলকাতার সিদ্ধার্থ লাহিড়ী। যাঁকে নিয়ে মুস্তাফিজুর বলছেন, 'কলকাতার সিড স্য়ার আমকে প্রচুর সাহায্য করেছেন। দুজনই বাঙালি হওয়ায় রাজস্থান রয়্যালস শিবিরে সহজে মিশে যেতে পেরেছিলাম। ওঁর সঙ্গে নিজের বোলিং নিয়ে অনেক আলোচনা করেছি। পরিশ্রম করেছি। তাতে আমি লাভবান হয়েছি।'
কে এই সিদ্ধার্থ লাহিড়ী? আসুন আলাপ করিয়ে দেওয়া যাক। কলকাতার ক্রিকেটার। এক সময় বেহালার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। ময়দানে চুটিয়ে ক্লাব ক্রিকেট খেলেছেন। দক্ষিণ কলিকাতা সংসদ (ডিকেএস), মিলন সমিতি, আনন্দবাজার স্পোর্টস ক্লাব, কাস্টমসের হয়ে খেলেছেন। আনন্দবাজার স্পোর্টস ক্লাবের হয়ে দুটো ডাবল সেঞ্চুরি ছিল। তবে বাংলা দলে সুযোগ করে নিতে পারেননি। ক্রিকেট খেলে চাকরিও পাননি। শেষে ভাগ্য অণ্বেষণে পাড়ি জমান সুদূর ইংল্যান্ডে। সেখানে কঠিন লড়াইয়ের পর অবশেষে ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে। ইংল্যান্ডের জাতীয় দলের ক্রিকেটার অলি পোপ, ডম সিবলির উত্থান তাঁর হাত ধরেই। পরে রাজস্থান রয়্যালসের কোচিং টিমে অন্তর্ভুক্তি। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
মঙ্গলবার বিকেলে লন্ডন থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কলে এবিপি লাইভ-কে সিদ্ধার্থ বললেন, '২০০৩ সালে ইংল্যান্ডে এসেছিলাম। এত দূর পৌঁছে যাব ভাবিইনি। আমি খুবই সাধারণ ঘরের ছেলে। এই জায়গায় আসতে পেরেছি বলে ভাগ্যের কাছে কৃতজ্ঞ। প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে। তবে ধৈর্য আর মনঃসংযোগ থাকলে সব কিছুই সম্ভব।'
সিদ্ধার্থের বেহালা থেকে লন্ডন পাড়ি জমানোর গল্পটিও বেশ নাটকীয়। বলছিলেন, '১৯৯৬ সালে ক্যালকাটা ব্লুজ ক্লাবের হয়ে ইংল্যান্ডে যাই। রাজর্ষি চৌধুরী ইংল্যান্ডের সেরা কয়েকটা ক্লাবের বিরুদ্ধে ক্যালকাটা ব্লুজ-এর খেলার ব্যবস্থা করেছিলেন। আমাদের সেই দলে ছিল শিবসাগর সিংহ, সত্রাজিৎ লাহিড়ী, অরিজিৎ বসুরা। গোপাল বসু ছিলেন কোচ। সেই সময় স্থানীয় একটি ক্লাবের হয়ে ইংল্য়ান্ডে খেলেওছিলাম। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল।'
ভারতে ফেরার পর সিদ্ধার্থের ব্য়ক্তিগত জীবনে বিপর্যয় নামে। ১৯ বছর বয়সে মাকে হারান। আর বাবা যখন মারা যান, ডানহাতি ওপেনারের বয়স মাত্র ২৫ বছর। 'ক্রিকেট খেলে চাকরি পাইনি। ক্লাব ক্রিকেট খেলেছি, বাংলা দলে সুযোগ পাইনি। রুজিরুটির টানে বাধ্য হয়ে মোবাইল ফোনের ব্যবসা করেছি। ইনসিওরেন্সের ব্যবসা করেছি। দাঁড় করাতে পারিনি। এর মধ্যেই বিয়ে। ইংল্যান্ডে একটি ক্লাবের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। ২০০৩ সালে স্ত্রী স্মিতার কথায় ইংল্যান্ডে গেলাম কোচিং কোর্স করতে। যে ক্লাবের হয়ে ১৯৯৭ সালে খেলেছিলাম, তারা খেলার প্রস্তাব দেয়। কিছুদিন থেকে যাই। এরপর মিডলসেক্সের ক্রিকেট ডেভেলপমেন্ট অফিসার ফিল ন্যাপেট লেভেল থ্রি কোচিং কোর্স করার প্রস্তাব দেন,' বলছিলেন সিদ্ধার্থ।
কোচিং কোর্স তো হল। কিন্তু চাকরি? ২০০৪ সালের নভেম্বর থেকে প্রায় ১ বছর পার্ক সাইড স্কুলে চাকরি করেন সিদ্ধার্থ। তবে ক্রিকেট কোচের চাকরি নয়। মাঠকর্মী হিসাবে। সিদ্ধার্থ বলছেন, 'পার্ক সাইড স্কুলের হেডমাস্টার ডেভিড এলওয়ার্ড গ্রাউন্ডসম্যানের চাকরি দেন। বলেন, তুমি যদি বাড়তি পরিশ্রম করে কোচিং করাও তো আমাদের আপত্তি নেই। আমার দায়িত্ব ছিল ক্রিকেট, ফুটবল ও রাগবি মাঠ তৈরি করা। মাঠ তৈরির কিছুই জানতাম না। লাইন সোজা হতো না। স্ত্রীকে সঙ্গে নিতাম। ভোরে উঠে পৌঁছে যেতাম মাঠে। তারপর সারাদিন কাজ। তারপরে কোচিং করাতাম। ছাত্র? মোটে একজন!'
স্থানীয় স্টোক ডি’অ্যাবর্নন ক্লাবে প্রত্যেক শনিবার খেলতেন। তবে অ্যাকাডেমিতে ছাত্রের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সিদ্ধার্থ বলছেন, 'ধীরে ধীরে ছাত্রের সংখ্যা বেড়ে ১৫ হয়। স্কুলকে তখন অ্যাকাডেমি গড়ার প্রস্তাব দিই। বলি, ক্রিকেট অ্যাকাডেমি চালু হলে সমস্ত খরচ উঠে আসবে। এক বছর সময় দেন হেডমাস্টার। বলেছিলেন, তুমি অর্ধেক খরচ তুলে দাও, তোমাকেই ক্রিকেট কোচ হিসাবে নিয়োগ করব। আমি সেই লক্ষ্য ছাপিয়ে আরও ভাল করি। স্কুল প্রভাবিত হয়ে আমায় চাকরিতে রাখে। একশো ছাত্র নিয়ে শুরু হয় পার্কসাইড ক্রিকেট অ্যাকাডেমি। ২০০৫ সালে। পরে ২০১১ সালে নাম হয় স্টার ক্রিকেট অ্যাকাডেমি। ইংল্যান্ডের টেস্ট দলের ক্রিকেটার অলি পোপ, ডোম সিবলিরা প্র্যাক্টিস করতে আসত আমার কাছে।'
এরপরই রাজস্থান রয়্যালসের সঙ্গে যোগাযোগ। নাগপুরের তালেগাঁও গ্রামে রাজস্থান রয়্যালসের অ্যাকাডেমি রয়েছে। সেখানে সিদ্ধার্থর ছাত্ররা প্র্যাক্টিস করতে আসত ২০১৮ সাল থেকে। সিদ্ধার্থ বলছেন, '২০১৯ সালে আচমকাই রাজস্থান রয়্যালস আমার অ্যাকাডেমির সঙ্গে পার্টনারশিপ করতে চায়। নাম হয় রাজস্থান রয়্যালস অ্যাকাডেমি। সেই শুরু। ২০১৯ সালে দুবাই ও আবু ধাবিতে আইপিএল হল। রাজস্থান রয়্যালসের সহকারী কোচ হিসাবে আইপিএলে ছিলাম। ২০২০ সালে অ্যাকাডেমির প্রধান হলাম। দুবাইয়েও আমাদের অ্যাকাডেমি খুলে গিয়েছে। অসমে অ্যাকাডেমি খুলছি।' কোচ হিসাবে সিদ্ধার্থর মুন্সিয়ানা দেখে প্রশংসায় পঞ্চমুখ ইংল্যান্ডের জাতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক অ্যালেক স্টুয়ার্টও।
নিজে কোচ হিসাবে যা শিখেছেন, তার নেপথ্যে গোপাল বসু, অশোক মুস্তাফি ও সঞ্জীবন আচার্যকে কৃতিত্ব দিচ্ছেন সিদ্ধার্থ। সঙ্গে বলছেন, 'কুণাল বসুও সব সময় উৎসাহ দিতেন।' তিনি মনে করেন, আইপিএল শুধু ভারতের নয়, গোটা বিশ্বের তরুণ ক্রিকেটারদের চারিত্রিক দৃঢ়তা তৈরি করে দিচ্ছে। 'ইংল্যান্ডের ওয়ান ডে ও টি-টোয়েন্টি দলটি দুর্দান্ত। এর নেপথ্যে আইপিএলের বিরাট অবদান। আইপিএল খেলতে খেলতে চাপ নিতে শিখে গিয়েছে সকলে। নেটে প্যাট কামিন্স বল করছে শুভমন গিলকে। এতে মানসিকভাবে একজন তরুণ ক্রিকেটার পোক্ত তো হবেই। রাজস্থান রয়্যালসে যশস্বী জয়সবাল, রিয়ান পরাগ, চেতন সাকারিয়ার মতো তরুণদের দেখছি। কাউকে ভয় পায় না। সামনে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি হোক বা বিরাট কোহলি,' বলছেন সিদ্ধার্থ।
আর মুস্তাফিজুরের প্রত্যাবর্তন কোন মন্ত্রে? সিদ্ধার্থ বলছেন, 'নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে সামান্য চোট পেয়েছিল ফিজ (মুস্তাফিজুরের ডাকনাম)। ওর হাতে বল এলে আত্মবিশ্বাস ঠিকরে বেরোয়। কে প্রতিপক্ষ ভাবে না। ফিজ জানে ওর প্রস্তুতি কীরকম, কোথায় শক্তি, কোথায় দুর্বলতা, পরিষ্কার ধারণা রয়েছে। বলত, দাদা আমি আজ এতগুলো বল করব, আজ বল করব না, বা আজ শুধু ক্যাচ প্র্যাক্টিস করব। ও জানে ওর শরীর কী চায়। পেশাদার ক্রিকেটার। আমি শুধু ওকে সাপোর্ট করে গিয়েছি। ফিজ হয়তো আমাকে এসে বলেছে, পিচে জুতো রেখে ইয়র্কার প্র্যাক্টিস করব, ব্যাটসম্যানকে বল করব না, তুমি দাঁড়িয়ে দেখো। মতামত দিও। আমি পর্যবেক্ষণ করে নিজের বিশ্লেষণটা ওকে বলেছি। তাতেই হয়তো ও উপকৃত হয়েছে।'যোগ করছেন, 'আমাদের ডিরেক্টর অফ ক্রিকেট কুমার সঙ্গকারা বলেন, প্রস্তুতিই আসল। ফলাফল আমাদের হাতে নেই। সেই তত্ত্ব মেনে চলি। কোচের কাজ হল শুধু মানসিক সমর্থনটা দেওয়া। একজন বোলার যদি নেটে ডানহাতি ব্যাটসম্যানকে বল করতে চায় আর আমি ওকে বাঁহাতিকে বল করাই, তাহলে হতাশা আসবেই। আমি শুধু সকলকে কমফর্ট জোনটা দিতে চাই।'
বেহালার ভাড়া বাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন। বাইপাসের ধারে রুবি হাসপাতালের কাছে ফ্ল্যাট কিনেছেন। সিএবি যদি ডাকে, বাংলার ক্রিকেটের জন্য কাজ করতে আসবেন? সিদ্ধার্থ বলছেন, 'বাংলা ডাকলে, সিএবি তৃণমূল স্তরে কাজে লাগাতে চাইলে নিশ্চয়ই আসব।'
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/metaverse-mid.png)