Harbhajan Singh: তাঁকে ছাড়া মাঠেই নামতে চাননি সৌরভ, হ্যাটট্রিক করেই যোগ্য প্রতিদান দিয়েছিলেন ভাজ্জি
IND vs AUS: এক তরুণের পারফরম্যান্স গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল। যিনি পরবর্তী সময়ে ভারতীয় ক্রিকেটে সর্বকালের সেরা অফস্পিনার হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। টেস্টে প্রথম ভারতীয় হিসেবে হ্যাটট্রিক।
মুম্বই: ভারতীয় ক্রিকেটের কালজয়ী অধ্যায় লিখতে বসলে সেই ম্যাচের কথা নিঃসন্দেহে উঠে আসবে। সালটা ২০০১, স্টিভ ওয়ার অশ্বমেধের ঘোড়া থামিয়ে দিয়ে ইতিহাস রচনা করেছিল সৌরভের (Sourav Ganguly) টিম ইন্ডিয়া (India Cricket Team)। একেবারে তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়ে তোলা একটা দল চূর্ণ করেছিল অজি দম্ভ। সেই সিরিজেই জলন্ধরের এক তরুণের পারফরম্যান্স গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল। যিনি পরবর্তী সময়ে ভারতীয় ক্রিকেটে সর্বকালের সেরা অফস্পিনার হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। টেস্টে প্রথম ভারতীয় হিসেবে হ্যাটট্রিক। ইডেন গার্ডেন্সে সেই ঐতিহাসিক দিনটির কথা আজও প্রত্যেক ক্রিকেটপ্রেমী ভারতীয়র হৃদয় গাঁথা। কিন্তু স্বয়ং সৌরভ সেদিন না থাকলে হয়ত সেই সিরিজটিই খেলা হত না হরভজনের। নেপথ্যের কারণ কী? আমাদের আজকের ওস্তাদের মার সিরিজে হরভজনের সেই হ্যাটট্রিকের ইতিহাস নিয়েই প্রতিবেদন -
ঠিক কী হয়েছিল?
সৌরভের নেতৃত্বে ভারতীয় দল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজ খেলবে। সেই সময় ক্য়াঙ্গারু ব্রিগেডকে হারানো একপ্রকার অসম্ভব ছিল। এত গুরুত্বপূর্ণ সিরিজের আগে অনিল কুম্বলে চোট পেয়ে যান। নির্বাচকরা চেয়েছিলেন যাতে শরনদীপ সিংহ দলে সুযোগ পান। কিন্তু সৌরভ চেয়েছিলেন হরভজনকে দলে খেলাতে। শোনা যায় যে, নির্বাচকরদের সঙ্গে নাকি একপ্রকার তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে গিয়েছিলেন সৌরভ। সেখানে তিনি বলেছিলেন যে যদি হরভজনকে দলে না নেওয়া হয়, তবে তিনি টেস্টে সিরিজে খেলবেন না। একপ্রকার বাধ্য হয়েই দলে নেওয়া হয়েছিল সেই সময় আনকোরা হরভজনকে। যদিও পরবর্তীতে ভাজ্জি ফাঁস করেছিলেন যে, নির্বাচকদের তরফেও না কি শর্ত দেওয়া হয়েছিল যে যদি ভারত সিরিজ হারে, তবে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হত সৌরভকে।
সেই সিরিজে নায়ক হয়ে গেলেন ভাজ্জি
তাঁকে হিসেবের খাতাতেই ধরতে চাননি নির্বাচকরা, অথচ সিরিজ শেষে ৩ টেস্টে ৩১ উইকেট নিয়ে হরভজনই নায়ক হয়ে গিয়েছিলেন। প্রথম টেস্টে ১০ উইকেট জেতা অস্ট্রেলিয়া কলকাতায় এসেছিল দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে। সৌরভের ঘরের মাঠ। ইডেনের গ্যালারিতে যে মাছি গলার জায়গা থাকবে না, তার আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল ম্যাচের আগে থেকেই। প্রথম টেস্টে ৪ উইকেট নেওয়া হরভজনের কাছেও চ্যালেঞ্জ ছিল নিজেকে প্রমাণ করার। এরপরই সেই সিরিজে রূপকথার প্রত্যাবর্তন হরভজনের। ইডেনে হ্যাটট্রিক। কার্যত একা হাতে ধ্বংস করে দিলেন অজি ব্যাটিং। একে একে ফিরিয়ে দিলেন রিকি পন্টিং, অ্য়াডাম গিলক্রিস্ট ও শেন ওয়ার্নকে ফিরিয়ে হরভজন হয়ে উঠেছিলেন টার্বুনেটর। অস্ট্রেলীয় ব্যাটারদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক। সেই ইনিংসে এর আগে ব্যক্তিগত ৯৭ রানের মাথায় ম্যাথু হেডেন ফিরে গিয়েছিলেন হরভজনের শিকার হয়ে। এছাড়াও মার্ক ওয়া, স্টিভ ওয়া ও জেসন গিলেসপির উইকেট তুলে নিয়েছিলেন ভাজ্জি।
সেই ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ভাজ্জি ৭ উইকেট তুলে নেন। অস্ট্রেলিয়া ৪৪৫ রানে অল আউট হয়ে যায়। জবাবে ব্য়াট করতে নেমে ১৭১ রানে অল আউট হয়ে গিয়েছিল ভারতীয় দল। প্রথম ইনিংসে ২৭৪ রানে পিছিয়ে থাকা ভারতকে দ্বিতীয় ইনিংসে ফলো অন বা ফের ব্যাট করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ভারতের শুরুটা বেশ ভালো হলেও ২৩২ রানে ওপেনার শিবসুন্দর দাস, সদাগোপান রমেশ, সচিন তেন্ডুলকর ও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে হারিয়ে চাপেও পড়ে গিয়েছিল ভারত। এরপরই পঞ্চম উইকেটে সেই ঐতিহাসিক ৩৭৬ রানের পার্টনারশিপ গড়েছিলেন ভিভিএস লক্ষ্মণ ও রাহুল দ্রাবিড়। প্রথম জন ২৮১ ও দ্বিতীয় জন ১৮০ রান করেছিলেন। ৬৫৭ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ডিক্লিয়ার করেছিলেন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ৩৮২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ২১২ রানে অল আউট হয়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ১৭১ রানে ম্যাচ জিতে যায় ভারত। সেই ইনিংসেও ৬ উইকেট নিয়েছিলেন হরভজন।
এরপর চেন্নাই টেস্টেও জিতে ঐতিহাসিক সিরিজ জিতল টিম ইন্ডিয়া। যার নেপথ্যে হরভজনের বিষাক্ত অফস্পিন। সেই সিরিজে মোট ৩২ উইকেট নিয়ে নতুন ইতিহাস তৈরি করেছিলেন হরভজন।