Jhulan Goswami Exclusive: ছেড়েছেন চিনি-রুটি-বিস্কুট, ঊনচল্লিশেও সুপারফিট, বাংলার কিংবদন্তির প্রেরণা অ্যান্ডারসন
Jhulan Goswami Interview: তিনি কিংবদন্তি। মহিলাদের ওয়ান ডে ক্রিকেটে বিশ্বের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। আসন্ন বিশ্বকাপেও টিম ইন্ডিয়ার সম্পদ। অথচ ঝুলন গোস্বামীর সাফল্যের জন্য ছটফটানিটা একইরকম।
কলকাতা: তিনি বাইশ গজের কিংবদন্তি। মহিলাদের ওয়ান ডে ক্রিকেটে বিশ্বের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। আসন্ন বিশ্বকাপেও তাঁর অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা টিম ইন্ডিয়ার সম্পদ। অথচ ঝুলন গোস্বামীর (Jhulan Goswami) সাফল্যের জন্য ছটফটানিটা একইরকম। বিশ্বকাপের আগে নিজেকে নিংড়ে দিচ্ছেন প্র্যাক্টিসে। ট্রেনিং, জিম, বোলিং - সারাদিন সাধনায় নিজেকে মগ্ন রেখেছেন। দেখে কে বলবে যে, বয়স প্রায় চল্লিশ ছুঁই ছুঁই!
ঊনচল্লিশেও সুপারফিট বাংলার পেসার। যাঁর জীবন নিয়ে তৈরি হচ্ছে বায়োপিক। চাকদহ এক্সপ্রেস (Chakdah Express)। নাম ভূমিকায় অনুষ্কা শর্মা (Anushka Sharma)। পুরুষ ক্রিকেটারদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই, নদিয়া থেকে ভোরবেলা লোকাল ট্রেনে চড়ে কলকাতা ময়দানে এসে প্র্যাক্টিস, জাতীয় দলে সুযোগ, বল হাতে বিশ্বের তাবড় ব্যাটারদের ত্রাস হয়ে ওঠা, ঝুলনের উত্থান যেন সিনেমার চিত্রনাট্যের মতোই নাটকীয়।
সামনেই মহিলাদের ওয়ান ডে বিশ্বকাপ। যে দলে রয়েছেন ঝুলন। ভারতীয় বোলিংকে নেতৃত্ব দেবেন বিশ্বকাপে। ঊনচল্লিশেও এই অবিশ্বাস্য ফিটনেসের রহস্য কী? এবিপি লাইভের প্রশ্ন শুনে হাসলেন ঝুলন। বললেন, 'আমি ভাগ্যবান যে, খুব দক্ষ ট্রেনার ও ফিজিও পেয়েছি। ওরা আমাকে আগে থেকে বলে দিয়েছিল ফিট থাকতে গেলে আগামী তিন বছর কী করতে হবে। আমার ব্যক্তিগত ডায়েটিশিয়ান রয়েছেন। কোচ রয়েছেন। লোড ম্যানেজমেন্ট করা হয়। সব মিলিয়ে এটা একটা দলগত ব্যাপার।'
ফিট থাকার জন্য কী খান? বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যতালিকা থেকে বাদ পড়েছে কিছু? 'অনেক জিনিসই খাই না। বাইরের খাবার খাই না। বাড়ির তৈরি খাবারে জোর দিই। ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার সঠিক সময়ে খাই। সহজ নয়। সংযম দেখানোটা ভীষণ কঠিন। রাতারাতি কোনও জিনিস ছেড়ে দেওয়া চ্যালেঞ্জ,' বলছিলেন ঝুলন। যোগ করলেন, 'রুটি, লুচি, পরোটা খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। বাঙালিরা চায়ের সঙ্গে বিস্কিট বা কফির সঙ্গে কুকিজ খেতে ভালবাসে। সেসব ছেড়ে দিয়েছি। চিনি খাই না। মিষ্টি তো আমাদের সকলের ভীষণ পছন্দের। মিষ্টিকে এড়িয়ে যাওয়া কঠিন। শীতকালে গুড়ের মিষ্টি সকলেই পছন্দ করে। আমি খাই না। হয়তো ১৫-২০ দিন ডায়েটের বাইরে কিছু খাইনি। তারপর একটা চিট ডে-তে কিছু একটা খেলাম। তারপর আবার কড়া ট্রেনিং করলাম।'
রুটি-বিস্কুট ছাড়লেন কেন? ঝুলন বলছেন, 'গ্লুটেন ইনটলারেন্স ছিল আমার। সেটার কারণে গ্লুটেন মুক্ত খাবার খাই। রুটি খেলেও সেটা বাজরা বা এরকম উপকরণের তৈরি হলে খাই।' যোগ করলেন, 'মেনে চলা কঠিন। মাঝে মধ্যে খুব খেতে ইচ্ছে করবে। সেখানেই সংযম দরকার। একটা অভ্যাস বর্জন করা ভীষণ কঠিন।'
বয়স তাহলে আপনার কাছে নেহাত একটা সংখ্যা? ঝুলন বলছেন, ':বয়স কত হল, সংখ্যা নিয়ে ভাবিনি। ঘনঘন চোট পাচ্ছিলাম বলে টি-টোয়েন্টি ছেড়ে দিয়েছিলাম। তারপরই সিদ্ধান্ত নিই একটা ফর্ম্যাটে খেলার। তাই এখন শুধু ওয়ান ডে খেলছি।' কিন্তু পেসারদের তো সারা কেরিয়ার চোটের সঙ্গে যুঝতে হয়। সেই দ্বৈরথে জিতে ঊনচল্লিশেও বল হাতে দাপট দেখাচ্ছেন কীভাবে? উত্তর দিতে গিয়ে ঝুলন বিনয়ী। বলছেন, 'আমি একা নই। অনেকেই অনেক বছর ধরে খেলেছে। জেমস অ্যান্ডারসনকে দেখো। সারা দিনে ২০-২৫ ওভার বল করছে। স্লিপে বা গালিতে ফিল্ডিং করছে। বোলার হিসাবে চোট লাগবেই। সেটা খেলার অঙ্গ। কত তাড়াতাড়ি সেরে উঠব, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। একটা বয়সের পর বুঝতে হবে আমার কাছে অগ্রাধিকার কোনটা। কোনটা ঠিক আর কোনটা এড়িয়ে চলব, সেটা ঠিক করে নিতে হয়। অনেকদিন আগে থেকেই সতর্ক ছিলাম। জানতাম একটা বয়সের পর ফিটনেস ধরে রাখা কঠিন। ছোট ছোট লক্ষ্য সাজিয়ে এগোতে হয়। তাতেই চোটমুক্ত থেকে খেলা যায়।'
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় দু'দশক কাটিয়ে ফেলেছেন। ঝুলন বলছেন, 'চোট-আঘাত না থাকলে খুব ভালভাবে সব কিছু করা যায়। খেলাটা উপভোগ করেছি। কড়া ট্রেনিং করেছি। একটা বয়সের পর ট্রেনিংটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। পঞ্চমবার বিশ্বকাপে খেলব। প্রত্যেকবার যেভাবে খেলে এসেছি সেই একই ভাবে খেলব। চেষ্টা করব নিজের সেরাটা দিতে।
আরও পড়ুন: দ্বিশতরানের পথে ল্যাথাম, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টেই দাপট কিউয়িদের