![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/Premium-ad-Icon.png)
Tokyo Olympic Exclusive: ফেল্পসের ভক্ত, কেরিয়ার শেষ হয়ে যাওয়ার ভয় পেয়েছিলেন ইতিহাস গড়া সাঁতারু সজন
একেবারে শেষ মুহূর্তে অলিম্পিক্সের যোগ্যতা অর্জন করেছেন। প্রস্তুতির জন্য হাতে বেশি সময় নেই। সেই সময়কে কাজে লাগাচ্ছেন সজন। দুবাইয়ে দু'বেলা চলছে অনুশীলন।
![Tokyo Olympic Exclusive: ফেল্পসের ভক্ত, কেরিয়ার শেষ হয়ে যাওয়ার ভয় পেয়েছিলেন ইতিহাস গড়া সাঁতারু সজন Sajan Prakash Exclusive Interview qualified Tokyo Olympics Big Fan of Michael Phelps swimmer Tokyo Olympic Exclusive: ফেল্পসের ভক্ত, কেরিয়ার শেষ হয়ে যাওয়ার ভয় পেয়েছিলেন ইতিহাস গড়া সাঁতারু সজন](https://feeds.abplive.com/onecms/images/uploaded-images/2021/07/04/7e341c9490e8cada1990fa82db034427_original.jpg?impolicy=abp_cdn&imwidth=1200&height=675)
কলকাতা: সারাদিন ধরে তাঁর ফোন বেজেই চলেছে। হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ এত জমে রয়েছে যে, সকলকে উত্তর দিতে গেলে গোটা একটা দিন চলে যাবে। হাতে মাত্র দিন কুড়ি সময়। প্রস্তুতি নেবেন কী, শুভেচ্ছাবার্তা সামলাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে সজন প্রকাশকে (Sajan Prakash)।
সংবাদমাধ্যম আর সোশ্যাল মিডিয়ার সুবাদে এতদিনে দেশের সকলে যে নামের সঙ্গে পরিচিত হয়ে গিয়েছেন। ভারতীয় সাঁতারু ইতিহাস তৈরি করেছেন। দেশের প্রথম সাঁতারু হিসাবে সরাসরি অলিম্পিক্সের যোগ্যতা অর্জন (ডাইরেক্ট কোয়ালিফিকেশন, 'এ' কাট) করেছেন সজন। ইতালির রোমে সেত্তি কোল্লি ট্রফিতে ১:৫৬:৩৮ সেকেন্ডে দুশো মিটার বাটারফ্লাই সম্পূর্ণ করেছেন ২৭ বছরের সাঁতারু। আর তারপর থেকেই তাঁকে ঘিরে শুভেচ্ছাবার্তার প্লাবন। শনিবার আবার অর্জুন পুরস্কারের জন্য তাঁর নাম মনোনীত করেছে জাতীয় সাঁতার সংস্থা। টোকিও অলিম্পিক্সে তাঁকে ঘিরে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন দেশের ক্রীড়াপ্রেমীরা।
এই ক'দিনে জীবন কতটা পাল্টেছে? হোয়াটসঅ্যাপ কলে প্রশ্নটা শুনে হাসলেন কৃতী সাঁতারু। 'জীবন একই আছে। তবে ফোনের ব্যাটারির অবস্থা ভাল নয়। সারাদিনে অজস্র ফোন ধরতে হচ্ছে। মোবাইল ফোনে চার্জই থাকছে না,' রবিবার দুবাই থেকে এবিপি লাইভকে বললেন সজন। যোগ করলেন, 'অনেককেই উত্তর দিতে পারছি না। আপনাদের সময় দিতেও দেরি হল।'
সজনের পাখির চোখ এখন শুধু টোকিও অলিম্পিক্স। প্রস্তুতিতে কোনও খামতি রাখতে চান না। 'রোম থেকে দুবাই ফিরে জোরকদমে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি। যে ক'দিন সময় পাচ্ছি, মনপ্রাণ সঁপে দিয়ে প্র্যাক্টিস করছি,' বললেন সজন। তাঁর সাঁতারে আসাটাও অলিম্পিক্সে শেষ মুহূর্তে যোগ্যতা অর্জনের মতোই নাটকীয়। সজনের জন্ম কেরলে। তবে পড়াশোনা-খেলাধুলো সবই এগিয়েছে তামিলনাড়ুতে। মা শান্তি মোল কেরলের নামি অ্যাথলিট ছিলেন। সজন বলছেন, 'মায়ের উৎসাহেই খেলাধুলো শুরু। ছোটবেলা সবরকম খেলাতেই অংশ নিতাম। তবে সাঁতারে জেলা স্তরে ও রাজ্য স্তরে ভাল পারফর্ম করায় এটাকেই প্রাধান্য দিই।'
কেরলের ইড়ুক্কুতে জন্ম সজনের। তবে খুব ছোটবেলা তামিলনাড়ুর মেরিলে চলে আসেন। সেখানেই চলতে থাকে তাঁর সাঁতার। পরে ২০১১ সালে বেঙ্গালুরুতে যান সজন। তিনি বলছিলেন, 'বেঙ্গালুরুতে কোচ প্রদীপ কুমারের কাছে সাঁতারের প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করি। তখন আমার মাত্র ১৭ বছর বয়স। তবে মাঝে ২০১৫-১৬ সালে স্যারের কাছে নিয়মিতভাবে প্র্যাক্টিস করতে পারিনি।' ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিক্সে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন সজন। কেরল পুলিশে ইন্সপেক্টর পদে চাকরিও পান। সাঁতার আর চাকরি, জীবন বইতে শুরু করে নতুন খাতে।
তবে তারপরই কেরিয়ারের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খান সজন। ঘাড়ে গুরুতর চোট লাগে তাঁর। স্লিপ ডিস্ক হয়। সাঁতার তো দূর অস্ত, ঘাড় ঘোরাতে পারতেন না। রাতের পর রাত ঘুমোতে পারেননি। যন্ত্রণায় ছটফট করেছেন। সজন ধরেই নিয়েছিলেন, তাঁর কেরিয়ার শেষ! 'নেপালে সাফ গেমসে অংশ নিতে গিয়েছিলাম। সেখানেই ঘাড়ে যন্ত্রণা শুরু হয়। দেশে ফিরে এমআরআই করাই। ঘাড়ের সি ফোর, সি ফাইভ ও সি সিক্সে স্লিপ ডিস্ক ধরা পড়ে। অতিরিক্ত পরিশ্রম করায় যা হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। ব্যথায় সারাদিন ছটফট করতাম। সবচেয়ে কষ্ট হতো রাতে। কারণ, বিছানায় মাথা রেখে ঘুমোতে পারতাম না। প্রবল যন্ত্রণা হতো। রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েছিলাম। আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিলাম। ধরেই নিয়েছিলাম যে, কেরিয়ার এখানেই শেষ,' বলছিলেন সজন।
রিহ্যাবিলিটেশনের পর অবশেষে যন্ত্রণামুক্তি। ফিট হয়ে ওঠেন সজন। কিন্তু তখন শুরু নতুন লড়াই। কেন? সজন বলছেন, 'আট মাস সুইমিং পুলের বাইরে ছিলাম। ফিরে আসাটা ভীষণ কঠিন ছিল। প্র্যাক্টিস করতে তাইল্যান্ডে গিয়েছিলাম। সেখানে থাকতে থাকতেই আচমকা লকডাউন শুরু হয়। অগাস্টে দুবাইয়ে আসি। কোচ প্রদীপ কুমারের কাছে প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। উনি এখন দুবাইয়েই থাকেন। স্যারের বাড়িতেই আশ্রয় নিই। প্রদীপ স্যারের স্ত্রী মাতৃসমা। আমাকে নিজের ছেলের মতো আগলে রাখেন।' সজন হাসতে হাসতে যোগ করলেন, 'স্যার দিনভর আমার সাঁতার নিয়ে পড়ে থাকেন। মাঝে মধ্যে এত পরিশ্রম করান যে মনে হয় মরেই যাব।'
দুবাইয়ে প্রদীপ কুমারের তত্ত্বাবধানে শুরু হয়ে সজনের প্রত্যাবর্তনের লড়াই। 'শূন্য থেকে নতুন করে শুরু করতে হয়েছিল। নতুন জায়গায় আমার চারপাশে যাঁরা ছিলেন বা আছেন, সকলেই ভীষণ ইতিবাচক মানসিকতার। তাতে ফেরার লড়াইয়ে কিছুটা সুবিধা হয়। পরিশ্রম করে নিজের হারানো দক্ষতা ফিরে পেয়েছি। সর্বস্ব দিয়ে প্র্যাক্টিস করি। রোজই ছোটখাট কিছু না কিছু পরিবর্তন চলছে। অলিম্পিক্সের আগে ইতিবাচক থাকছি,' বললেন ২৭ বছরের সজন।
আদর্শ কে? সজন বলছেন, 'মা ও আমার কোচ। তাছাড়া সাঁতারের দুনিয়ায় মাইকেল ফেল্পসের বড় ভক্ত আমি। ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিক্সে ওঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। ফেল্পসকে দেখে ভাল কিছু করার বাড়তি তাগিদ পাই।'
একেবারে শেষ মুহূর্তে অলিম্পিক্সের যোগ্যতা অর্জন করেছেন। প্রস্তুতির জন্য হাতে বেশি সময় নেই। সেই সময়কে কাজে লাগাচ্ছেন সজন। দুবাইয়ে দু'বেলা চলছে অনুশীলন। তবে সাফল্যের জন্য অস্থির হচ্ছেন না। সজন বলছেন, 'সব কাজই হয়ে গিয়েছে। ভালই প্রস্তুতি নিয়েছি। অলিম্পিক্সের জন্য দক্ষতা আর গতি বাড়াতে পরিশ্রম করছি। তবে আমি ভাল ফলের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।'
করোনা পরিস্থিতিতে এমনিতেই চারপাশে প্রচুর নেতিবাচক খবর। তার ওপর চোট সারিয়ে ফেরা। কখনও হতাশা গ্রাস করেনি? সজন বলছেন, 'করেছে। তবে সেসব কাটিয়ে উঠেছি। অলিম্পিক্সের আগে শান্ত থাকার চেষ্টা করছি।' টোকিওয় নিজের সামনে কী লক্ষ্য রাখছেন? সজন বলছেন, 'প্রথম লক্ষ্য হল সেমিফাইনালের যোগ্যতা অর্জন করা। সেটা হলে তারপর পদক নিয়ে ভাবব। আমার ইভেন্ট দুশো মিটার বাটারফ্লাই। সেটা বেশ কঠিন। আমি ইতিবাচক থাকছি।'
সজন জানালেন, এই নিয়ে তৃতীয়বার তিনি অর্জুন পুরস্কারের জন্য মনোনীত হলেন। আগের দুবার স্বীকৃতি পাননি। এবার কী হবে, জানেন না। তবে বিশ্বমঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারাটাই তাঁর কাছে সেরা সম্মান। আর সেই লক্ষ্যে দুবাই থেকেই টোকিও রওনা হয়ে যাবেন ভারতীয় সাঁতারু। গোটা দেশ তাঁর সাফল্য কামনায় বুঁদ।
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/metaverse-mid.png)