Vijay Hazare Trophy: নবীন-প্রবীণের জুটিতে গুজরাত-বধ বাংলার, নতুন শপথ নিয়ে হরিয়ানা ম্য়াচের প্রস্তুতি শুরু
Bengal vs Gujarat: রাজকোটে গুজরাতকে ৮ উইকেটে হেলায় হারিয়ে বিজয় হাজারে ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গেল বাংলা।
সন্দীপ সরকার, কলকাতা: প্লেয়ার ক্রিকেট বানায় না, ক্রিকেট প্লেয়ার তৈরি করে...
আইপিএল (IPL) কখনও সাফল্যের মাপকাঠি হতে পারে না, গোটা দেশ ক্রিকেট মুন্সিয়ানাকে কুর্নিশ করলে সেটাই প্রকৃত প্রাপ্তি...
প্রথম বাক্যটি বিজয় হাজারে (Vijay Hazare Trophy) ট্রফি চলাকালীন বাংলার ড্রেসিংরুমে ক্রমাগত আওড়ে চলেছেন হেড কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্ল। ক্রিকেট ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু বাইশ গজেই যেন মুক্তির আস্বাদন তাঁর কাছে। জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনের ভাষা ধার করে বলতে হয়, লক্ষ্মীর কাছে যেন সেই স্বাদের ভাগ হবে না। জয় যাঁর কাছে শুধু কোনও ফলাফল নয়, একটা অভ্যাস। বাংলার দায়িত্ব নিয়ে আসার পর থেকে যে অভ্যাস ছেলেদের আয়ত্ত করানোর চেষ্টা করে চলেছেন।
দ্বিতীয় আপ্তবাক্যটি বাংলার কোচ সৌরাশিস লাহিড়ীর মন্ত্র। তিন ধরনের ফর্ম্যাটে ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলে চলেছে বাংলা। ট্রফি হয়তো অধরা থাকছে। কিন্তু বাংলাকে সমীহ করছে না, গত দু-তিন মরশুমে এমন দল ভূ ভারতে নেই। অথচ আইপিএলের দলে বাংলার ক্রিকেটারেরা ব্রাত্যই থাকছেন। হাতে গোনা দু-একজন ছাড়া, আইপিএলের মঞ্চে বঙ্গ ক্রিকেটারদের নিয়ে আলোচনাই বা হয় কই! যা দেখে চোয়াল আরও শক্ত হচ্ছে সৌরাশিসের। ছেলেদের দিচ্ছেন আরও সংকল্পবদ্ধ হয়ে এগিয়ে চলার দীক্ষা।
দুই মন্ত্রগুপ্তির প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে মাঠে। দেখা গেল শনিবারও। রাজকোটে গুজরাতকে ৮ উইকেটে হেলায় হারিয়ে বিজয় হাজারে ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গেল বাংলা। তাও কোন গুজরাত? যে দলের হয়ে শনিবার খেলেছেন জাতীয় দলের তারকা অক্ষর পটেল। যিনি বাংলার বিরুদ্ধে ম্য়াচ খেলেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিমান ধরবেন। প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজের দলে আছেন যে! বাংলার দাপুটে জয় দেখে অবশ্য দিনের শেষে গুজরাতকে দরের প্রতিপক্ষ বলে মনেই হবে না অনেকের।
ম্যাচের প্রথমার্ধ দেখে অবশ্য বাংলার এই কর্তৃত্ব নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন না অনেকেই। উর্বিল পটেল শুরুতে ফিরলেও গুজরাতের অপর ওপেনার প্রিয়ঙ্ক পাঞ্চালের ব্যাট যেন কথা বলছিল। ঝকঝকে সেঞ্চুরি (১১৪ বলে ১০১ রান) পাঞ্চালের। সঙ্গে সৌরভ চৌহান (৫৩ বলে ৫৩), উমঙ্গ কুমারদের (৪৭ বলে ৬৫) ঝোড়ো হাফসেঞ্চুরি। ৫০ ওভারের শেষে স্কোরবোর্ডে গুজরাতের পাশে জ্বলজ্বল করছিল ২৮৩/৯। বাংলার বোলারদের মধ্যে এই ম্যাচেই অভিষেক হওয়া সুমন দাসের ২ উইকেট। ২ উইকেট প্রদীপ্ত প্রামাণিকেরও। ঈশান পোড়েল, মহম্মদ কাইফ ও কর্ণ লালের ঝুলিতে একটি করে উইকেট।
রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বিপাকে পড়ে বাংলা। শাকির হাবিব গাঁধী ফেরেন কোনও রান না করে। ১/১ হয়ে যাওয়া বাংলাকে টেনে তোলেন অভিষেক পোড়েল ও অধিনায়ক সুদীপ কুমার ঘরামি। কিন্তু ৪৭ রান করে অভিষেক ফেরেন। ৭৭/২ হয়ে যাওয়া বাংলাকে অবশ্য বেগ পেতে হয়নি দুই যোদ্ধার জন্য। একজন, তরুণ সুদীপ। যিনি এই মরসুমে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বাংলাকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অন্যজন, অভিজ্ঞ অনুষ্টুপ মজুমজদার। যাঁকে অনেকে মজা করে বলেন, বাংলার ক্রাইসিস ম্যান। দল বিপদে পড়লেই চওড়া হয়ে উঠছে রুকুর ব্যাট। দুজনে মিলে অবিচ্ছেদ্য তৃতীয় উইকেটে ১৭৯ বলে ২০৯ রান যোগ করেন। ১৩২ বলে ১১৭ রানে অপরাজিত ছিলেন সুদীপ। অনুষ্টুপ ছিলেন আরও আগ্রাসী মেজাজে। ৮৮ বলে ১০২ রানে ক্রিজে ছিলেন তিনি। ২৪ বল বাকি থাকতে ৮ উইকেটে ম্যাচ জেতে বাংলা। গুজরাতের সেরা তারকা অক্ষর ১০ ওভার বল করেও উইকেট-হীন। কোয়ার্টার ফাইনালে সামনে এবার হরিয়ানা।
ম্যাচের পর রাজকোট থেকে মোবাইল ফোনে বাংলার হেড কোচ লক্ষ্মীরতন বলছিলেন, 'আমি খুব বেশি খুশি হচ্ছি না। আনন্দ করার সময় এটা নয়। দল শেষ আটে পৌঁছেছে। সামনে লম্বা রাস্তা বাকি। আমি শুধু ছেলেদের বলছি, প্লেয়ার ক্রিকেট তৈরি করে না, ক্রিকেট প্লেয়ার তৈরি করে। ক্রিকেটই সবার ওপরে। ক্রিকেটকে নিজেদের সবটা দাও। তাহলেও তোমরাও রিটার্ন গিফট পাবে ক্রিকেটের থেকেই।' ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ কয়েকটি টুর্নামেন্টে বারবার ফাইনালে বা সেমিফাইনালে হারতে হচ্ছে বাংলাকে। বিজয় হাজারেতে ট্রফিজয় কি দেখতে পাচ্ছেন? আর তো মাত্র তিনটি ম্যাচ, কাটবে ট্রফি খরা?
লক্ষ্মী সতর্ক। বলছেন, 'আমি একটা একটা করে ম্যাচ ধরে এগোতে চাই। খেলোয়াড় জীবনেও তাই করেছি। কোচ হিসাবেও।' যোগ করলেন, 'একটা নতুন দল তৈরি হচ্ছে। সুদীপ অধিনায়ক হয়েছে। কর্ণ লাল ভাল বল করছে। তারকেশ্বরের ছেলে সুমন দাস ও মহম্মদ শামির ভাই মহম্মদ কাইফ আমার সঙ্গে অনূর্ধ্ব ২৩ দল থেকে রয়েছে। ঈশান পোড়েলের ফিটনেস নিয়ে পরিকল্পনা করে এগনো হচ্ছে। রুকুর মতো অভিজ্ঞ পারফর্ম করছে। দল হিসাবে ভাল খেলাটাই জরুরি।'
বোলিং কোচ শিবশঙ্কর পালের কথায়, 'বোলাররা চাপের মুখে পারফর্ম করছে। সুমন তো বুঝতেই দেয়নি যে, ও অভিষেক ম্যাচে খেলছে। চাপমুক্ত হয়ে বোলিং করেছে।'
বাংলার কোচ সৌরাশিসও ইতিবাচক ছবিই খুঁজছেন। বলছেন, 'গত কয়েক মরশুমে আমরা হয়তো ট্রফি জিতিনি। কিন্তু সাদা বল ও লাল বল, সব ফর্ম্য়াটে এত ধারাবাহিক ক্রিকেট দেশের আর কোনও দল খেলছে না। তারপরেও আইপিএলের সাফল্যই কোথাও মাপকাঠি হয়ে দাঁড়ায়।' শনিবার বাংলার ম্য়াচ দেখতে হাজির ছিলেন জাতীয় নির্বাচক সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। সৌরাশিস বলছেন, 'জাতীয় নির্বাচকদের সামনে ভাল পারফর্ম করতে চায় সকলেই। বাংলার ছেলেরা ভীষণ পরিশ্রম করছে। দেখা যাক এবার কী হয়...'
বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীরা ট্রফির স্বপ্ন দেখা শুরু করে দিয়েছেন...
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।