Filmstar: ঘরে থেকেই লড়তে হবে করোনার বিরুদ্ধে, গানের মাধ্যমে বার্তা রূপঙ্কর, লগ্নজিতার
রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইলেন অনুপম রায়। প্রকাশ্যে এল ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান সিজন টু’-র মেকিং ভিডিও। গুলজারের লেখায়, এ আর রহমানের সুরে নতুন মিউজিক ভিডিও মুক্তি পেল। বিনোদন দুনিয়ার নানা খবর দেখে নেওয়া যাক ফিল্মি ফটাফটে।
ঘরে থেকেই লড়তে হবে করোনার বিরুদ্ধে। কার্যত লকডাউন ধীরে ধীরে শিথিল হলেও অপ্রয়োজনে রাস্তায় বেড়িয়ে পড়া নয়। অযথা ভিড় করা নয়। কোভিড বিধি মেনে চলাই বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। গান গেয়ে ঘরে থেকে লড়াইয়ের এই বার্তাই দিলেন রূপঙ্কর বাগচী ও লগ্নজিতা চক্রবর্তী। গানটি লিখেছেন অভিজিৎ সরকার, উৎপল এবং প্রাঞ্জল। প্রাঞ্জল সুরও দিয়েছেন গানটিতে।
সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নেটফ্লিক্সের অ্যান্থোলজি সিরিজ ‘রে’। শুক্রবার মুক্তি পেল এই সিরিজটির প্রথম সিজন। সত্যজিতের লেখা মোট চারটি গল্প নিয়ে চারটি ছোট ছবি রয়েছে প্রথম সিজনে। পরিচালকদের তালিকায় রয়েছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়, অভিষেক চৌবে এবং ভাসান বালা। সত্যজিত রায়ের লেখার মুনশিয়ানাই এমন যে, গল্প পড়তে পড়তে চোখ বন্ধ করলেই তা যে মানসপটে সিনেমা হয়ে ওঠে। প্রতিটি দৃশ্য জীবন্ত হয়, প্রতিটি সংলাপ যেন কানে বাজে। তাই তাঁর সৃষ্টিকে নিজেদের মতো করে বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে পরিবেশন করাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ‘রে’-র চারটি কাহিনিতে গল্পের বাঁধনে দর্শকদের ধরে রাখার প্রয়াস সবসময় একসুরে বাজেনি। চড়াই-উতরাই রয়েছে। চিত্রনাট্য, সংলাপ থেকে অভিনয় - সমান তালে দৌড়োয়নি। আর সত্যজিত রায়ের গল্প অবলম্বনে যখন সিরিজ হচ্ছে, তখন নেপথ্যে সত্যজিতেরই সিগনেচার মিউজিকের একটু ছোঁয়ার প্রত্যাশাও জন্মায়, যা এই সিরিজে নেই।
সিরিজের প্রথমেই যে ছবিটি রয়েছে, সেটি ‘বিপিন চৌধুরীর স্মৃতিভ্রম’ অবলম্বনে ‘ফরগেট মি নট।’ সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় এই ছবিটিতে অভিনয় করেছেন আলি ফজল, অনিন্দিতা বসু, শ্বেতা বসু প্রসাদ। শুরুতে চিত্রনাট্য এগিয়েছে সত্যজিতের লেখার গতি অনুসরণ করেই। প্রেক্ষাপট অবশ্যই বদলেছে। বদলেছে ক্লাইম্যাক্সও। মূলগল্পে বিপিন চৌধুরীর শাস্তি ততটা গভীর হয়নি, যতটা এই ছবিতে আলি ফজলের চরিত্রটিকে ভোগ করতে হয়েছে। অভিনয়ের দিক থেকে আলি ফজল, শ্বেতা, অনিন্দিতা সহ সকলেই সেরা পারফরম্যান্স দিয়েছেন। ছবিটির পরিবেশনাও নজরকাড়া।
সিরিজের দ্বিতীয় ছবি ‘বহুরূপীয়া’। সত্যজিত রায় তাঁর ছোটগল্প বহুরূপীতে লিখেছিলেন ছা-পোষা মধ্যবিত্ত নিকুঞ্জ সাহার এক অদ্ভুত শখের কথা। চেনা মানুষের চোখে ধুলো দেওয়াই ছিল তাঁর নেশা। আর এই কাজে তাঁর অস্ত্র ছিল মেকআপ। মেকআপের সাহায্যে ভোল বদলই ‘বহুরূপী’-র কাহিনিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘বহুরূপীয়া’-তে অভিনয় করেছেন কে কে মেনন, দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য, বিদিতা বাগ, রাজেশ শর্মা, খরাজ মুখোপাধ্যায়। এই ছবির প্লটও সৃজিত সাজিয়েছেন মূল কাহিনি অনুসরণ করেই। অফিসে চাকরি নিয়ে টানাটানি, বাড়িওয়ালার গঞ্জনা, মৃত ঠাকুমার শোক, ভালবাসার মানুষের কাছে প্রত্যাখ্যান ... সব কিছু মিলিয়ে ইন্দ্রাশিস বিভ্রান্ত ঠিকই। কিন্তু দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য যে পন্থায় যে প্রতিশোধ স্পৃহা মেটাতে চায়, সেই সমীকরণ যেন ঠিক মেলে না। ক্লাইম্যাক্সেও বদল রয়েছে। মূল কাহিনিতে নিকুঞ্জ নিজের কৃতকর্মের জন্য অল্পের উপর দিয়েই পার পেলেও এই ছবিতে ইন্দ্রাশিস নিয়তির এক ভয়ানক প্রতিশোধের মুখোমুখি গিয়ে দাঁড়ায়। অভিনয়ের দিক থেকে কে কে মেনন, দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য, রাজেশ শর্মা এবং বিদিতা বাগ প্রশংসনীয়।
সিরিজের তৃতীয় ছবি ‘হাঙ্গামা হ্যায় কিঁউ বরপা’। সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘বারিন ভৌমিকের ব্যারাম’ গল্পটি অবলম্বনে এই ছবি বানিয়েছেন অভিষেক চৌবে। প্রধান দুই চরিত্রে মনোজ বাজপেয়ী এবং গজরাজ রাও। বারিন ভৌমিকের ব্যারাম গল্পটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল ক্লেপটোম্যানিয়া। প্রয়োজন ছাড়াই অন্যের কোনও জিনিস লুকিয়ে চুরি করার অদ্ভুত এক রোগ ক্লেপটোম্যানিয়া। বারিন ভৌমিকের সেই ব্যারামটিই ছিল। মূলগল্পে সারাক্ষণ বারিনের বুকে চলতে থাকা হাতুড়ি পেটার যে শব্দ কানে বাজে, ‘হাঙ্গামা হ্যায় কিঁউ বরপা’-য় তা যেন কিছুটা অনুপস্থিত। বহুকাল আগে ট্রেনের কামরায় ঘটে যাওয়া একটা ঘটনার স্মৃতি আবার ফিরে এসেছে, মুখোমুখি বসে পড়েছেন সেই সহযাত্রী, যাঁর ব্যাগ থেকে হাওয়া হয়ে গিয়েছিল এক স্মৃতিবিজড়িত ঘড়ি। মনোজ এবং গজরাজ দু’জনেই অভিনয়ের মুনশিয়ানায় দুরন্ত ভাবে নজর কেড়েছেন এই ছবিতে। কিন্তু ট্রেনের কামরা থেকে কাহিনিটি বেরোতে পারেনি। গজলের সঙ্গে ক্লেপটোম্যানিয়া মিশে গিয়ে একটা ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে ছবিটিতে।
এই সিরিজের চতুর্থ ছবি ‘স্পটলাইট।’ পরিচালনায় ভাসান বালা। সত্যজিতের কাহিনি থেকে মূল বিষয়টি নিয়ে নিজের মতো করে আলদা, স্বতন্ত্র একটা গল্প বুনেছেন ভাসান। তবে যে বিষয়টি লক্ষ্যনীয়, তা হল এই ছবির পরতে পরতে সত্যজিতের আরও বহু সৃষ্টির ছায়া ধরা পড়েছে। নতুন ট্রিটমেন্টে কাহিনি বলার যে প্রয়াস করেছেন ভাসান, তা সাফল্যের স্বাদ পেয়েছে। সত্যজিত রায়ের কলমে স্পটলাইটের কাহিনি আবর্তিত হয়েছে একজন চিত্রতারকা, বাইরে ছুটি কাটাতে যাওয়া এক পরিবার এবং সেই চিত্রতারকার উপর থেকে লাইম লাইট কেড়ে নেওয়া এক বৃদ্ধকে কেন্দ্র করে। ভাসান এই প্রেক্ষাপট থেকে সরে এসেছেন। কাহিনি এগিয়েছে দুরন্ত গতিতে। কিন্তু বিরিয়ানির মধ্যে কাঁকড়ের মতো হঠাৎ ছন্দপতন ঘটেছে হর্ষবর্ধন কপূরের দুর্বল অভিনয়ে। তবে অন্যদিকে চন্দন রায় সান্যাল এবং রাধিকা মদনের অভিনয় নজর কেড়েছে।
তবে সব মিলিয়ে বলতে হলে, সত্যজিৎ রায় নামটিকে ঘিরে বাঙালি দর্শকের প্রত্যাশা যে উচ্চতায় বিরাজ করে, তা পূরণ না হলেও প্যান-ইন্ডিয়ার দর্শকদের কাছে এই সিরিজ নতুন ভাবে, নতুন আঙ্গিকে পৌঁছে দেবে সত্যজিতের কাহিনিকে।