'সবকা বিমা সবকী রক্ষা' বিল নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানান, আইনের সংশোধন হলে বিমা ক্ষেত্রে বিদেশি সংস্থা থেকে আরও বিনিয়োগ ঢুকবে ভারতের বাজারে। বিমাক্ষেত্রকে উন্মুক্ত ককে দেওয়ায়, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে, বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে বলেও আশাবাদী তিনি। বহু ক্ষেত্রে যুগ্ম অংশীদারিত্বে বিনিয়োগ করতে রাজি হয় না বিদেশি সংস্থাগুলি। এবার আর সেই বাধা থাকবে না বলে দাবি নির্মলার। প্রতিযোগিতা বাড়লে মানুষ সস্তায় বিমা কিনতে পারবেন বলে মনে করছে কেন্দ্র।
তড়িঘড়ি এই বিল পাস করানো হচ্ছে কেন, তা নিয়ে গোড়া থেকেই প্রশ্ন তুলছিলেন বিরোধীরা। কিন্তু এদিন সেই অভিযোগ খারিজ করে দেন নির্মলা। তাঁর দাবি, গত দু'বছর ধরে বিচার-বিবেচনা করে, শলা-পরামর্শ নিয়ে তবেই বিলটি আনা হয়। এই বিল পাস হওয়ার ফলে ১৯৩৮ সালের বিমা আইন, ১৯৫৬ সালের LIC আইন এবং ১৯৯৯ সালের বিমান নিয়ন্ত্রক ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনেও পরিবর্তন ঘটতে চলেছে। বিমা সংস্থার সঙ্গে বিমা বহির্ভূত কোনও সংস্থার মিশে যাওয়াতেও আর বাধা থাকবে না।
কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, 'সবকা বিমা সবকী রক্ষা' সংশোধনী বিলের মাধ্যমে দেশের বিমাক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটতে চলেছে। স্বাধীনতার শতবর্ষ, ২০৪৭ সাল আসতে আসতে প্রত্যেক নাগরিককে বিমার সুরক্ষার আওতায় আনা সম্ভব হবে। এর ফলে ভারতের বিমার বাজারে সরাসরি ১০০ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারবে বিদেশি সংস্থাগুলি। সরকারের অনুমতির অপেক্ষায় আর বসে থাকতে হবে না LIC-কে। বিদেশেও নিজেদের শাখা বিস্তার করতে পারবে তারা। ফলে তহবিলে ঘাটতি থাকবে না।
যদিও বিরোধীরা এই বিলের ঘাটতিগুলি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। প্রথমেই বিলের নামকরণ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। প্রশাসনিক ভাষার পরিবর্তে, আইনের নামকরণেও নরেন্দ্র মোদি সরকার নিজেদের স্লোগানের ছোঁয়া রাখছে বলে অভিযোগ করেন বিরোধীরা। সরকারি পরিষেবাও রাজনৈতিক বার্তাদানের মাধ্যম হয়ে উঠছে বলে দাবি করেন। এমনকি এই ধরনের নামকরণের মধ্যে গোটা দেশের উপর হিন্দি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ ওঠে লোকসভায়। হিন্দি-ইংরেজি মিলিয়ে বিলের নাম রাখা যায় কি না, প্রশ্ন তোলেন RSP সাংসদ এনকে প্রেমচন্দ্রন।
সবদিক পর্যালোচনা করে দেখতে সংসদীয় কমিটিতেও বিলটি পাঠানোর দাবি তোলেন বিরোধীরা। বিশেষ করে বিদেশি বিমা সংস্থার সঙ্গে দেশের নাগরিকদের আধার এবং প্যান নম্বর ভাগ করে নেওয়ায় আপত্তি তোলে কংগ্রেস। এতে অর্থনৈতিক জালিয়াতি, ডিজিটাল অপরাধ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে তারা। কেন্দ্র যেভাবে সবকিছু বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিচ্ছে, বিমাক্ষেত্রকে বিদেশি সংস্থাার হাতে তুলে দিয়েও বিপদ ডেকে আনা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলা হয়।
DMK নেত্রী কানিমোঝিও বিষয়টি নিয়ে সরব হন। তিনি জানান, ২০২৪ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে বিমাক্ষেত্রে ৫৪০০০ কোটি টাকা ঢুকেছে। ১০০ শতাংশ বিনিয়োগের রাস্তা খুলে গেলে ১ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ আসতে পারে আগামী ন'বছরে। সেই নিরিখে ভারতে ১২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে, ভারতের ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বিমার বাজার বিদেশি সংস্থাগুলির দখলে চলে যাবে বলে অভিযোগ করেন কানিমোঝি। তাঁর বক্তব্য ছিল, "এ তো দিনে ডাকাতি? এদে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবেন, দেশী সংস্থাগুলি ডুববে।" কিন্তু বিরোধীদের কোনও আপত্তিই গৃহীত হয়নি।























