Sonali Bibi Case: দিল্লি থেকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার পর ৫ মাসের বেশি জেলে কাটিয়েছেন, অবশেষে ভারতে ফিরলেন ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা সোনালি বিবি
Sonali Bibi Retuned In India: মালদার কনকনে ঠাণ্ডায়, গায়ে বেগুনি শাল জড়িয়ে ছোট্ট ছেলের হাত ধরে দেশের মাটিতে পা রাখলেন ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা সোনালি বিবি।

অভিজিৎ চৌধুরী, ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: ৫ মাসেরও বেশি সময় পর শাপমোচন হল সোনালির। অবশেষে ভারতে ফিরলেন সোনালি বিবি। মালদার মেহদিপুর সীমান্ত দিয়ে ফিরিয়ে আনা হল সোনালি বিবি ও তাঁর ছেলেকে। বীরভূমের বাড়িতে বসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন সোনালির বাবা।
আরও পড়ুন, "কোনও মুসলমান এই কথা বলতে পারে না, যে বেআইনিভাবে মসজিদ তোলো..", মন্তব্য অধীর চৌধুরীর
SIR আবহে যখন অনেকের পরিচয় নিয়েই টানাটানি চলছে, তখন নিজের মাটি, নিজের ভিটেতে নতুন করে পরিচয় খুঁজে পেলেন সোনালি বিবি। দিল্লি থেকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার পর ৫ মাসের বেশি জেলে কাটিয়েছেন বীরভূমের মেয়ে সোনালী! অবশেষে দীর্ঘ টালবাহানার পর দেশে ফিরলেন তিনি। সঙ্গে ফিরল তাঁর ৮ বছরের ছেলেও। সোনালিদের জন্য খুলে দেওয়া হল সীমান্তের লোহার গেট। শুক্রবার সন্ধে ৬.৫০ মিনিটে, মালদায় ভারত-বাংলাদেশের মেহদিপুর সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনা হল সোনালিদের।
মালদার কনকনে ঠাণ্ডায়, গায়ে বেগুনি শাল জড়িয়ে ছোট্ট ছেলের হাত ধরে দেশের মাটিতে পা রাখলেন ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। শাপমুক্তি হল সোনালির। সোনালি বিবি ও তাঁর ছেলেকে BSF-এর হাতে তুলে দিল বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। তবে সোনালি বিবি ও তাঁর ছেলে এদেশে এলেও, এপারে ফেরানো হয়নি বাকি ৪ জনকে। সোনালি বিবির সঙ্গে বাংলাদেশের জেলে বন্দি ছিলেন ওই ৪ জনও। এই নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।
মালদা জেলা পরিষদ তৃণমূল নেত্রী ও সভাধিপতি লিপিকা বর্মন ঘোষ বলেন, আরও ৪ জন ছিলেন। ৪ জন ব্যক্তিকে ছাড়া হয়নি। এই দু'জনকে ছাড়া হয়েছে। এরা যদি পশ্চিমবঙ্গবাসী হয়ে থাকে, বীরভূম জেলাবাসী হয়ে থাকে, তাহলে ওই ৪ জন, ওর ফ্যামিলি থাকা সত্ত্বেও কেন ছাড়া হল না? এই প্রশ্নের উত্তর উনি না দিয়ে পালিয়ে গেলেন।
প্রশ্ন: উনি কে ছিলেন?
মালদা জেলা পরিষদ তৃণমূল নেত্রী ও সভাধিপতি লিপিকা বর্মন ঘোষ: ইন্ডিয়ার ডেপুটি হাই কমিশনার।
বুধবার সুপ্রিম কোর্টে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান,মানবিকতার খাতিরে সোনালি বিবি ও তাঁর ছেলেকে ভারতে ফিরিয়ে আনা হবে। তার আগে ১ লা ডিসেম্বর, বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুখ্য বিচার বিভাগীয় আদালতে জামিন পান অন্তঃসত্ত্বা সোনালি বিবি-সহ ৬ জন। সেদিনই ফের সোনালি বিবিদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সূর্যকান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ।এরপর থেকেই সোনালির অপেক্ষায় দিন গুনছিল তাঁর পরিবার।
সোনালি বিবির বাবা ভাদু শেখ বলেন, খুব আনন্দ লাগছে। খুশি লাগছে। দেখলে আনন্দ লাগবে। অন্যায় কাজ করেছে। না জাজ করে পাঠিয়ে দিয়েছে। তার ছেলেপিলের পড়াশুনা সেগুলো বেকার হল। আমার মেয়ের ডাক্তারও করা হয়নি, জেলে ভরা ছিল। সেগুলোও ওখানে হয়না। বহুত অসুস্থ ও। এর দায় কে নেবে এখন? আমার তো ক্ষমতাও নেই দায় নেওয়ার। কারণ আমার কাছে টাকা পয়সা নেই।'কাজের সূত্রে স্বামী দানিশ শেখের সঙ্গে ৮ বছরের ছেলেকে নিয়ে দিল্লির রোহিণীর ২৬ নম্বর সেক্টরে থাকতেন।গত ১৭ জুন তাঁদের গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশ।
অভিযোগ, বাংলা ভাষায় কথা বলায় তাঁদের বাংলাদেশি তমকা দেওয়া হয়।এরপর ২৬ তারিখ অন্তঃসত্ত্বা সোনালি সহ ৩ জনকে বাংলাদেশে 'পুশব্যাক' করা হয়।একইভাবে, বীরভূমেরই মুরারইয়ের ধিতোড়া গ্রামের বাসিন্দা সুইটি বিবি এবং তার ২ নাবালক ছেলেকেও গ্রেফতার করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয় দিল্লি পুলিশ। এনিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জল গড়ালে,২৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রর ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়,৪ সপ্তাহের মধ্যে সোনালি বিবি-সহ ৬ জনকে ফিরিয়ে আনতে হবে এবং তা করতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকেই।
তারপর দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও বাংলাদেশেই আটকে থাকতে হয় সোনালিদের। উল্টে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় কেন্দ্রীয় সরকার। সেই মামলার শুনানিতে সময় চায় মোদি সরকার। তারই প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্তর বেঞ্চ পর্যবেক্ষণে বলে, যদি তারা অনুপ্রবেশকারী হিসাবে প্রমাণিত হন, তাহলে এখানে থাকতে দেওয়া হবে না। কিন্তু এখন প্রমাণ হিসেবে বার্থ সার্টিফিকেট-সহ নানা নথি সামনে এসেছে। এই প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে তাদের ফেরানো হোক। তারপর সবকিছু দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এরপর আদালতে চলেছে দীর্ঘ আইনি লড়াই। দিন-রাত এক করে দাঁতে দাঁত চেপে মেয়েকে ফেরাতে লড়াই চালিয়ে গেছেন সোনালির বাবা। বারবার অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের ভারতে ফেরাতে টালবাহানা করছে! অবশেষে দেশে ফিরে আসার সৌভাগ্য হল সোনালির।






















