Bolpur : 'ডাইনি' অপবাদে ৩ বছর গ্রামছাড়া, বোলপুরে মহকুমা শাসকের কক্ষের বাইরে ধর্নায় ১২জন
Witchcraft Allegation : কুকুরের কামড়ে মৃত্যু হয় এক যুবকের ৷ আক্রান্ত হন আরও কয়েকজন ৷ এরপরেই গ্রামের তিনটি পরিবারের উপর সন্দেহ যায় বাকিদের
ভাস্কর মুখোপাধ্যায় ও আবীর ইসলাম, বোলপুর : এক-আধ দিন নয়, দীর্ঘ তিন বছর গ্রামছাড়া। পড়াশোনা লাটে উঠেছে সন্তানদের, রাস্তায় ভবঘুরেদের মতো দিন কাটাতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে এবার থালা-বাসন নিয়ে বোলপুর (Bolpur) মহকুমা শাসকের ঘরের বাইরে ধর্নায় বসলেন 'ডাইনি' (Witch) অপবাদে গ্রামছাড়া পরিবারের সদস্যরা। তিন বছর ধরে তিনটি পরিবারের ১২ জন সদস্য গ্রামছাড়া।
বোলপুর থানার সিয়ান-মুলুক গ্রাম পঞ্চায়েতের মণিকুণ্ডু পাড়া আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম। ২০২০ সালে ওই গ্রামে কুকুরের কামড়ে মৃত্যু হয় এক যুবকের ৷ আক্রান্ত হন আরও কয়েকজন ৷ এরপরেই গ্রামের তিনটি পরিবারের উপর সন্দেহ যায় বাকিদের ৷ বসে সালিশি সভা ৷ সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তিনটি পরিবারকে গ্রামছাড়া করা হবে। অভিযোগ, এরপরই ডাইনি অপবাদ দিয়ে ওই তিনটি পরিবারকে মারধর করে গ্রামছাড়া করা হয়। এমকি, তাঁদের ব্যবহৃত সামগ্রী-সহ গবাদিপশু লুঠপাট করানো হয় ৷ প্রায় তিন বছর ধরে পুত্র ও কন্যাসন্তানদের নিয়ে গ্রামছাড়া তিনটি আদিবাসী পরিবারের ১২ জন সদস্য ৷ কখনও রাস্তার ফুটপাথে, তো কখনও বাসস্ট্যান্ডে, আবার কখনও কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে ঘুরে ঘুরে দিন কাটাচ্ছেন ৷ স্বাভাবিকভাবেই এইসব পরিবারের সন্তানদের পড়াশোনাও লাঠে উঠেছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বাড়ি ফিরতে চেয়ে বীরভূমের জেলাশাসক থেকে শুরু করে পুলিশ সুপার, বোলপুরের মহকুমা শাসক, বোলপুরের এসডিপিও, বোলপুর থানার আইসিকে লিখিতভাবে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি ৷ এক কথায় গ্রামছাড়াদের ফেরাতে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন ৷ এই পরিস্থিতিতে এদিন, বোলপুর মহকুমা শাসক অয়ন নাথের কক্ষের বাইরে থালা-বাসন নিয়ে ধর্নায় বসে আদিবাসী পরিবারগুলি৷ এক ভুক্তভোগী বলেন, "তিন বছর ধরে গ্রামছাড়া ৷ আমাদের গ্রামে ফেরানো হোক ৷ যতদিন না তা হচ্ছে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিক সরকার। তা না হলে এসডিও অফিসে অনেক জায়গা, এখানেই থাকব আমরা।"
তবে, তাঁদের যাতে দ্রুত বাড়ি ফেরানো যায়, তাই এদিন জেলাশাসক বিধান রায়, রাজ্যের ক্ষুদ্র-মাঝারি ও কুটির শিল্প মন্ত্রী তথা বোলপুরের বিধায়ক চন্দ্রনাথ সিংহ, মহকুমা শাসক অয়ন নাথ, বোলপুরের এসডিপিও নিখিল আগরওয়াল একটি বৈঠক করেন ৷
পরে জেলাশাসক বলেন, "এই ঘটনা খুবই অনভিপ্রেত। আমরা আলোচনা করেছি ৷ আলোচনায় মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহও ছিলেন ৷ আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আপাতত ওঁদের সরকারিভাবে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। তারপর গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে তাঁদের বুঝিয়ে ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হবে ৷ প্রশাসন চেষ্টা করে চলেছে ৷ দ্রুত সমাধান করা হবে এই সমস্যার।"