South Dinajpur Visiting Places: কান পাতলে উঠে আসে পুরাণ-ইতিহাস, শহর থেকে কিছু দূরে, দঃ দিনাজপুরের এই জায়গাগুলি না দেখলেই নয়
Dakshin Dinajpur: জেলার কোন জায়গাগুলি একবার হলেও ঘুরে দেখা উচিত, কেন বেড়ানোর তালিকায় সেগুলি রাখবেন, জেনে নিন বিশদে।
সেন এবং পাল বংশের রাজত্বকাল তো বটেই পৌরাণিক কাহিনীতেও রয়েছে উল্লেখ। স্বতন্ত্র পরিচয় লাভ ১৯৯২ সালে। বঙ্গভঙ্গের পর প্রথম পশ্চিম দিনাজপুর হিসেবে ছিল অস্তিত্ব। পূর্ব দিনাজপুর (অধুনা দিনাজপুর বাংলাদেশের অন্তর্গত)। ১৯৯২ সালের ১ এপ্রিল পশ্চিম দিনাজপুরের বিভাজন ঘটে উৎপত্তি হয় দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার। বিহারের কিছু অংশ জুড়ে গড়ে ওঠে উত্তর দিনাজপুর। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার সদর দফতর বালুরঘাট। দুই মহকুমা, বালুরঘাট এবং গঙ্গারামপুর।
বাংলার সব জেলার মধ্যে দক্ষিণ দিনাজপুরের জনসংখ্যাই সবচেয়ে কম। কিন্তু এই জেলার ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্তিক গুরুত্ব অসীম। সেই নিরিখে ভ্রমণপিপাসু বাঙালির কাছে জনপ্রিয়তায় খানিকটা পিছনের সারিতেই। তবে ইতিহাস সন্ধিৎসু মানুষের কাছে দক্ষিণ দিনাজপুর বাংলার বুকে আদর্শ বেড়ানোর জায়গা বললে অত্যূক্তি করা হয় না। জেলার কোন জায়গাগুলি একবার হলেও ঘুরে দেখা উচিত, কেন বেড়ানোর তালিকায় সেগুলি রাখবেন, জেনে নিন বিশদে।
বানগড় খননস্থল, গঙ্গারামপুর
প্রাচীন কালে নাম ছিল দেবীকোট এবং কোটিভার্ষা, যা আদতে পুণ্ড্রবর্ধনভুক্তি প্রশাসনের অংশ ছিল। চন্দ্র, বর্মন এবং সেন বংশের শাসনকালে এর রাজধানী ছিল মহাস্থানগড়। তিবব্ত অভিয়ান বিফল হলে দেবকোটেই ফিরে আসেন বখতিয়ার খিলজি। খিলজির মৃত্যুর পর তাঁরা সৈনিকরা দেবকোটেই বসবাস শুরু করেন।
আবার মহাভারতে নিঃসন্তান রাজা বলির স্ত্রী সুদেষ্ণার সঙ্গে এক ঋষির মিলনে অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, সূক্ষ্ম এবং পুণ্ড্রের জন্মের কথা রয়েছে। পুণ্ড্রের রাজ্যের অংশ ছিল দক্ষিণ দিনাজপুর। পুরাণ অনুযায়ী আবার, রাজা বাণের নাম অনুসারে বাণরাজ্যের রাজধানীর নাম হয় বাণনগর,কালক্রমে যা বাণগড় হয়ে ওঠে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় ১৯৩৮ থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত বানগড়ের ধ্বংসাবশেষে খননকার্য চলে। সেখান থেকে মৌর্য থেকে কুষাণ যুগের নগর সভ্যতার নিদর্শনও পাওয়া যায়। মাটির বিভিন্ন স্তর খুঁড়ে দেখা গিয়েছে, একসময় রীতিমতো নগর সভ্যতা ছিল সেখানে। ইঁট দিয়ে বাঁধানো উঠোন, প্রাচীর, পাকা নর্দমা, তামার মুদ্রা ষোড়শ পদ্মবিশিষ্ট জলাধার, পাকা বাড়ি, মন্দিরের ধ্বংসাবশেষও মেলে। এ ছাড়াও উদ্ধার হয় টেরাকোটার কাজ করা ফলক, কেল্লা এবং দুর্গের ধ্বংসাবশেষ, ব্যাসল্ট শিলা দিয়ে তৈরি গৌতম বুদ্ধের মূর্তি। পুনর্ভবা নদীর তীরে ওই খননস্থলটি দুর্গের আকারে ঘেরা রয়েছে।
শাহ আতার দরগা, গঙ্গারামপুর
ঢলদিঘির উত্তর পাড়ে অবস্থিত শাহ আতার দরগা। ছাদ না থাকলেও, ইঁটের দেওয়ালে ঘেরা মোল্লা আতার-উদ্দিন ওরফে শাহ আতারের সমাধিস্থলটি অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আতা-উদ্দিন ছিলেন সুফিবাদের প্রচারক। পারস্পরিক সহাবস্থান, সহমর্মিতা, মানবতা, সহিষ্ণুতার প্রচারক ছিলেন। এই দরগার দেওয়ালে কুলুঙ্গি রয়েছে, ইঁটের গায়ে খোদাই করা লিপিও রয়েছে। দরগার মেঝে পাথরের তৈরি। দেওয়ালের গায়ে পদ্মফুলের নকশাও রয়েছে। এককালে সেটি বৌদ্ধমঠ ছিল বলেও মনে করেন কেউ কেউ।
আঙিনা পক্ষী অভয়ারণ্য, কুমারগঞ্জ
পক্ষীপ্রেমীদের জন্য আদর্শ জায়গা। শীতকালে দেশ-বিদেশের নানা প্রজাতির পাখির সমাগম ঘটে আঙিনা পক্ষী অভয়ারণ্যতে। তার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে জায়গাটিকে পর্যটন কেন্দ্র করে তোলার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি,এ ই তিন মাস এখানে পর্যটকদের আনাগোনা লেগে থাকে। পিকনিক করতেও ভিড় করেন বহু মানুষ।
কালদিঘি পার্ক, গঙ্গারামপুর
সবুজে ঘেরা চারিদিক। তার মধ্যে একটুকরো জলাধার। মনোরম, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। তাই কালদিঘি পার্কে ছুটে আসেন বহু মানুষ। প্রশাসনের তরফে রক্ষণাবেক্ষণ চলে। তাই কংক্রিটের শহর থেকে দূরে, সবুজের মধ্যে প্রকৃতির কোলে কিছুটা সময় কাটাতে অনেকেই ছুটে আসেন। ঝিলের পাড়ে বসার জায়গা রয়েছে। ছোটদের জন্য রয়েছে দোলনা এবং বিনোদনের ব্যবস্থাও।
দোগাছি বন, বালুরঘাট
মিশমিশে কালো রাস্তা, দুই দিক থেকে নুয়ে পড়া লম্বা গাছ। পাতার ফাঁক দিয়ে রোদ এসে গায়ে পড়ে আলগোছে। আনমনে হেঁটেই কেটে যায় সময়। হাঁটতে হাঁটতে কখন যে মেঠো রাস্তার পাড়ে গজিয়ে ওঠা গ্রামে এসে পড়ে পা, খেয়াল থাকে না। তার উপর পাখির কিচির মিচির তো রয়েইছে। ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করার ছবিও জুটেযায় অনায়াসে। শহর থেকে অনেকটা না হলেও, কিছুটা দূরে দোগাছি বন একবার ঘুরে আসা যায় বইকি।