সিঙ্গুরে শিল্পের জমিতে মাছের ভেড়ি, বিরোধিতায় আন্দোলনের হুঁশিয়ারি সিপিএমের কৃষক সংগঠনের
সিঙ্গুরের গোপালনগর মৌজায় মোট ১০ বিঘা জমিতে তৈরি হচ্ছে মাছের ভেড়ি।এদিন সেখানকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন সিপিএমের কৃষক সংগঠন সারা ভারত কৃষক সভার সদস্যরা।
সোমনাথ মিত্র, সত্যজিৎ বৈদ্য ও আশাবুল হোসেন, হুগলি ও কলকাতা: সিঙ্গুরে (Singur) শিল্পের জমিতে তৈরি হচ্ছে মাছের ভেড়ি (Fish breeding ponds) । তার বিরোধিতায় আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিল সিপিএমের কৃষক সংগঠন (CPM)।গত ১১ বছরে কোনও রাজ্যে কোনও কারখানা হয়নি। আক্রমণ বিজেপিরও। বিরোধীদের বক্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল।
যেখানে হওয়ার কথা ছিল ছোট গাড়ির কারখানা, সেখানে এখন তৈরি হচ্ছে মাছের ভেড়ি। এই বিতর্কের জেরেই ফের শিরোনামে সিঙ্গুর। সিঙ্গুরে শিল্পের বদলে মাছের ভেড়ি। তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক তরজা।
সিঙ্গুরের গোপালনগর মৌজায় মোট ১০ বিঘা জমিতে তৈরি হচ্ছে মাছের ভেড়ি।সোমবার সেখানকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন সিপিএমের কৃষক সংগঠন সারা ভারত কৃষক সভার সদস্যরা। সংগঠনের হুগলি জেলা সম্পাদক স্নেহাশিস রায় বলেছেন, এই জমিতে কোনও চাষ হচ্ছে না, তলে তলে কায়েমি স্বার্থের লোকদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে চিংড়ি চাষের জন্য। এর প্রতিবাদে আন্দোলনে নামব।
এভাবেই সিঙ্গুরে শিল্পের বদলে মাছের ভেড়ি তৈরির বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সিপিএমের কৃষক সংগঠন।যদিও তৃণমূলের দাবি, ভেড়ি নয়, এটি বহুমুখী প্রকল্প।
সিঙ্গুর আন্দোলনের নেতা ও সিঙ্গুর পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ দুধকুমার ধাড়া সিপিএমকে কটাক্ষ করে বলেছেন, ওদের কাজ নেই, তাই এসব কথা বলছে। এরা একসময় কৃষকের কথা না শুনে জমি কেড়ে নিয়েছিল। মাছের ভেডি বলা হচ্ছে, এটা ঠিক নয়। এটা জল সম্পদ উন্নয়ন ও অনুসন্ধান দফতরের অধীন WDS স্কিম, যেটা বিশ্বব্যাঙ্কের অর্থে কৃষকদের সহায়তা করার জন্য।
সিঙ্গুর আন্দোলন রাজ্য-রাজনীতির মোড় ঘোরানো এক অধ্যায়। যে আন্দোলনের জেরে সিঙ্গুর থেকে ফিরে গিয়েছিল টাটারা। ধুলোয় মিশে গিয়েছিল আস্ত কারখানার একটা কাঠামো। সেই সিঙ্গুরেই এখন তৈরি হচ্ছে মাছের ভেড়ি। তা নিয়েই এখন ফের বিতর্ক...রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব...চাপানউতোর।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, শিল্পও হল না, কৃষিও হল না, এবার মাটি বিক্রি করার জন্য এসব করছে। এত তো বলেছিলেন, তিন ফসলি, পাঁচ ফসলি জমি, কিছুই করতে পারলেন না!
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ সমালোচনার জবাবে বলেছেন, সিঙ্গুরে যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মমতা, সেটাই করে দেখিয়েছেন। যেখানে কৃষিকাজ করা যাচ্ছে, সেখানে কৃষি শুরু হয়েছে, যেখানে কংক্রিটের কারণে কৃষি সম্ভব হয়নি, সেই এলাকায় ভেড়ি হলে, অনেক কর্মসংস্থান হবে, তাতে অসুবিধা কোথায়?
সিঙ্গুর প্রসঙ্গেই রাজ্যে শিল্পায়ন ইস্যুতে তৃণমূলকে তীব্র কটাক্ষ করেছে বিজেপি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কটাক্ষ করে বলেছেন, ওখানে বরঞ্চ আমরা কিছু মাছ দিয়ে আসব। ভালো করে মাছ চাষ করুন। এখন চপ শিল্প পোলট্রি শিল্প, কাশফুল শিল্প, গাছ থেকে ঝরে যাওয়া পাতা শিল্প হয়েছে। এখন লেটেস্ট হল শিল্প-কারখানার জমিতে এখন মাছের ভেড়ি। এই একটা সরকার এগারো বছরে কোনও কলকারখানা করেনি। এদের জমি নীতি হলো নেগেটিভ।
সামনেই রাজ্য সরকারের বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন, তার আগে ফের সরগরম সিঙ্গুর।