Durga Puja 2022 : নকশাল আন্দোলনের সময় থেকে বন্ধ শূন্যে গুলি করার রীতি ! ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ ধনেখালির চৌধুরী বাড়ির পুজো
Dhanekhali Chowdhury Family's Puja : বাড়ির নাট্যমঞ্চে একাধিকবার সমসাময়িক শিল্পীদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন ছবি বিশ্বাস।
কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, ধনেখালি : এখানে মায়ের ভোগে থাকে ভাত, মাছের ঝোল, খিচুড়ি। নবমীতেই হয় সিঁদুর খেলা। কালের নিয়মে বলিদানের সময় শূন্যে গুলি ছোড়ার রীতি বন্ধ হলেও হুগলির ধনেখালির (Dhanekhali) চৌধুরী বাড়ির পুজো (Chowdhury Family Puja) আজও বহন করে আসছে নানা ঐতিহ্য।
কেমন ছিল আজ থেকে ২০০ কিংবা ৫০০ বছর আগে বাংলার দুর্গাপুজো ? ইতিহাস এবং পুজো প্রকরণ কীভাবে মিশেছে বাঙালির প্রাণের উত্সবে ? হুগলির ধনেখালির ভান্ডারহাটিতে চৌধুরী বাড়ির প্রাচীন পারিবারিক পুজোর আনাচে কানাচে সেই ইতিহাসেরই সাক্ষ্য।
আনাচে কানাচে ইতিহাস-
এই বাড়িরই পারিবারিক বন্ধু ছিলেন শিল্পী হেমেন মজুমদার। শিল্পীর সিক্ত বসনার আঁতুরঘর ইট রঙের এই বনেদি বাড়ি। বাড়ির নাট্যমঞ্চে একাধিকবার সমসাময়িক শিল্পীদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন ছবি বিশ্বাস। এহেন বাড়ির পুজো তো ইতিহাস বহন করবেই। একদিকে প্রায় ১১০০ বছরের পুরোনো রাধাগোবিন্দ মন্দির। উল্টোদিকের ঠাকুরদালানে পূজিতা হন দেবী দুর্গা। এই পুজোর বয়সও প্রায় ৭০০।
এই বাড়ির দেবীর অবয়ব পরিবর্তনের নেপথ্যে রয়েছে এক কাহিনী। চৌধুরী বংশের সদস্য কল্যাণ চৌধুরী জানান, এই দেবী আগে দশভূজা ছিলেন। বলিদানের সময় একটি মেয়ে উধাও হয়ে যায়। তার আঁচল মায়ের মুখে দেখা যায়। সেই থেকে এই মূর্তি অভয়া।
কথিত আছে, এই বাড়ির রাধা গোবিন্দ মন্দিরে এসেছিলেন শ্রী চৈতন্যদেব। রীতি অনুযায়ী এখানে, ছাগ থেকে বাতাবি লেবু, ছাঁচি কুমড়ো, আখ, বলি হয়। বলিদানের পর হয় কীর্তন। বলিদান শুরুর আগে রাধাগোবিন্দ শয়নে যান। বলিদানকে আড়াল করতে রাধাগোবিন্দর কানে তুলো দিয়ে রাখা হয়। মায়ের ভোগ থেকে পুজো প্রকরণ সবেতেই স্বতন্ত্র রীতি। মায়ের ভোগ রান্না করেন মহিলারা। নিবেদন করেন পুরুষেরা। এখানে নবমীর দিন সন্ধ্যারতির পর সিঁদুর খেলা হয়।
চৌধুরী পরিবারের গৃহবধূ নন্দিতা চৌধুরী বলেন, সাদা ভাত, খিচুড়ি, মাছের ঝোল রান্না করে মেয়েরা। ছেলেরা পৌঁছে দেয় মায়ের কাছে।
চৌধুরী পরিবারের অপর এক গৃহবধূ অদিতি চৌধুরী জানান, নবমীর দিন সিঁদুর খেলা হয়, কুমারী পুজো নেই। গোল হয়ে মেয়েরা দাঁড়ায়, তারপর পায়ে জল দেয়, আঁচলে ধান সুপারি দেয়। এটাই এখানের রীতি।
পলাশির যুদ্ধ থেকে সিপাহী বিদ্রোহ কখনও বন্ধ হয়নি এই পুজো। নকশাল আন্দোলনের সময় থেকে শুধু বন্ধ হয়ে গেছে বলিদানের সময় শূন্যে গুলি করার রীতি। কলকাতা থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে ধনেখালির এই পারিবারিক পুজো শুধু সর্বজনীন উত্সব নয়, দেশ বিদেশে ছড়িয়ে থাকা পারিবারের সদস্যদের পুর্নমিলনের মঞ্চও।
আরও পড়ুন ; পুজোর আমেজে পুরোদমে ভাসছে বাংলা, মহাসপ্তমীতে কোন পুজো মিস করবেন না?