Kali Puja 2021: অমাবস্যা পড়তেই পুজো শুরু হল সিঙ্গুরের ডাকাত কালী মন্দিরে, মানা হচ্ছে করোনা বিধিনিষেধ
Kali Puja 2021 Hooghly: হুগলি জেলার বৈদ্যবাটি-তারকেশ্বর রোডের পাশে সিঙ্গুরের পুরুষোত্তমপুর এলাকায় অবস্থিত ডাকাত কালী মন্দির। প্রায় পাঁচশো বছরের পুরনো এই মন্দির ঘিরে রয়েছে নানা জনশ্রুতি।
সোমনাথ মিত্র, সিঙ্গুর (হুগলি): অমাবস্যা পড়তেই চালকড়াই ভাজা দিয়ে পুজো শুরু হল সিঙ্গুরের ডাকাত কালী মন্দিরে। জবার মালা, ফল, মিষ্টি হাতে মা কালীর পুজো দিতে দূর দূর থেকে ভক্তরা ভিড় জমিয়েছেন মন্দিরে। পুজো দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধূপ, বাতি জ্বেলে মনস্কামনা পূরণ করতে মায়ের কাছে প্রার্থনা জানাচ্ছেন ভক্তরা। তবে কোভিড পরিস্থিতিতে করোনা বিধিনিষেধ নিয়ে তৎপর মন্দির কর্তৃপক্ষ। মাস্ক ছাড়া মন্দির চত্বরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না কোনও ভক্তকে। কোর্টের রায়ে গর্ভগৃহে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গর্ভগৃহের বাইরে থেকেই পুজো দিতে হচ্ছে ভক্তদের।
হুগলি জেলার বৈদ্যবাটি-তারকেশ্বর রোডের পাশে সিঙ্গুরের পুরুষোত্তমপুর এলাকায় অবস্থিত ডাকাত কালী মন্দির। প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো এই মন্দির ঘিরে রয়েছে নানা জনশ্রুতি। কয়েক শতক আগে সরস্বতী নদী ছিল এই রাজ্যের প্রধান বানিজ্যিক নদী। সেই নদীর অববাহিকা জুড়ে ঘন বনজঙ্গলের সুযোগে দাপিয়ে বেড়াত ডাকাতের দলবল। তেমনই জানা যায়, সিঙ্গুরের সরস্বতী নদীর অববাহিকা জুড়ে দাপিয়ে বেড়াত গগন সর্দারের দলবল। ঘন জঙ্গলে চলত ভীষণ কালী মায়ের আরাধনা। ডাকাতির আগে সেই কালী মূর্তির পুজো করে তবেই রওনা দিত গগন সর্দারের দল। পরবর্তীকালে সিঙ্গুরের চালকে বাটির মোড়লরা স্বপ্নাদেশ পেয়ে নতুন করে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। টেরাকোটার কারুকার্যে তৈরি দক্ষিণমুখী সেই মন্দির আজও বিরাজমান। গর্ভগৃহের সামনে অর্ধচন্দ্রাকৃতি ত্রিখিলান যুক্ত প্রবেশ পথ। বর্তমান মন্দির থেকে মজে যাওয়া সরস্বতী নদী এখন প্রায় এক কিলোমিটার দূর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। কালের গ্ৰাসে মন্দিরের গায়ে টেরাকোটার কারুকার্য এখন অল্পই অবশিষ্ট আছে। তবুও প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা রীতিনীতির পরিবর্তন হয়নি আজও।
আরও পড়ুন: Kali Puja 2021 Bankura: সোনামুখীর ক্ষ্যাপা-কালীমায়ের পায়ে কেন শিকল বাঁধা ?
কালীপুজোর দিন গঙ্গার ঘাট থেকে এক বিশেষ সম্প্রদায়ের যুবকদের বয়ে নিয়ে আসা গঙ্গাজল দিয়ে পাল্টানো হয় ঘটের জল। সেই সময় বন্ধ থাকে মন্দিরের দরজা। বছরে একবার কালীপুজোর দিনে ঘটের জল পাল্টানোর পরেই রীতি মেনে শুরু হয় মায়ের আরাধনা। ফল, লুচি, সুজি, খিচুরি, তরকারি, বিভিন্ন রকম ভাজা, পায়েস সহ চালকড়াই ভাজা ও কারণ নিবেদন করা হয় কালীপুজোর দিন। ডাকাত কালী থাকার জন্য সিঙ্গুরের পুরুষোত্তমপুর, জামিনবেড়, মল্লিকপুর এই তিনটি গ্ৰামে এখনও হয় না কোনও কালীপুজো। এমনকি কালী মায়ের কোনও ছবি, পট বা ক্যালেন্ডারও ঘরে রাখতে পারেন না এই তিনটি গ্ৰামের বাসিন্দারা।
আরও পড়ুন: Kali Puja 2021: দীপান্বিতা অমাবস্যা উপলক্ষ্যে বিশেষ পুজো, তন্ত্রমতে মাতৃ আরাধনার আয়োজন তারাপীঠে
কালীপুজোর দিন চার প্রহরে চার বার পুজো হয়। ছাগ বলির সঙ্গে ফল বলির প্রথাও চালু আছে। কালীপুজোর পরের দিন গোধুলির সময় ছাগ বলি দিয়ে বন্ধ হয় মন্দিরের দরজা। ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে পরের দিন সন্ধ্যাবেলা খোলা হয় মন্দিরের দরজা। পাঁচ বছর অন্তর তিথি ধরে মায়ের মূর্তি রং করার মাধ্যমে নবকলেবর হয় সিঙ্গুরের ডাকাত কালী মায়ের। তবে করোনা পরিস্থিতিতে সবরকম বিধিনিষেধ মেনেই এবছর পুজোর আয়োজন করা হয়েছে। ডাকাত কালী মন্দির উন্নয়ন কমিটির সম্পাদক মদন মোহন কোলে জানান, কোর্টের রায়কে মান্যতা দিয়ে মন্দিরের গর্ভগৃহে ভক্তদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্যানিটাইজ করার সঙ্গে সঙ্গে করোনা বিধিনিষেধ মেনে চলতে সবাইকে অনুরোধ করা হচ্ছে। দক্ষিণেশ্বর থেকে সিঙ্গুরে ডাকাত কালী মন্দিরে পুজো দিতে আসা নবমীতা ভট্টাচার্য বলেন, 'মা এত জাগ্ৰত যে প্রত্যেক বছর কালীপুজোর দিন এই মন্দিরে পুজো দিয়েই দিনটা শুরু করি। তবে এবছর করোনার জন্য বাইরে থেকেই পুজো দিতে হল, মন্দিরের ভিতর ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। সকাল সকাল পুজো দিলে মনটা খুব ভাল থাকে।'