Paschim Medinipur: শিকলে বাঁধা মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে, দোরে দোরে ভিক্ষা করে অসহায় মা
কিন্তু পেটের টান বড় বালাই। অগত্যা লোকের দোরে দোরে গিয়ে ভিক্ষে করে ছেলের চিকিৎসায় মা।
সোমনাথ দাস, পশ্চিম মেদিনীপুর: এক-দু'বছর নয় টানা ১০ বছর ধরে লোহার শিকল দিয়ে বাড়ির উঠোনের খুঁটিতে বাঁধা মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে। কিন্তু পেটের টান বড় বালাই। অগত্যা লোকের দোরে দোরে গিয়ে ভিক্ষে করে ছেলের চিকিৎসায় মা।
এমনই করুণ ছবি ধরা পড়লো পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা ২ ব্লকের কুঁয়াপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কুঁয়াপুর গ্রামে। ওই গ্রামের বাসিন্দা বছর পয়তাল্লিশের ছবি পূজারীর জীবন যেমন দুঃখের ছবি বহন করছে। একচিলতে ভাঙাচোরা মাটির বাড়িতে বসবাস। একমাত্র ছেলে বছর সাতাশের প্রশান্ত পূজারীকে নিয়ে জীবন কাটে ছবি দেবীর।
জমি-জায়গা, চাষাবাদ কিছুই নেই। একমাত্র উপার্জনের পথ বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষে করে দিনযাপন। ছবি দেবীর স্বামী মারা গিয়েছেন অনেক আগেই। বর্তমানে মা ও ছেলে মাটির বাড়িতে কোনওক্রমে দিন কাটান। ছেলে প্রশান্ত ছোট থেকেই মানসিক সমস্যায় জর্জরিত। বিগত ১০ বছর ধরে সঠিক চিকিৎসার অভাবে এখন তিনি সম্পূর্ণ মানসিক ভারসাম্যহীন। একদিকে ছেলের এমন অবস্থা তার উপর পেট চালানোর কোনও পোক্ত সংস্থান নেই। তাই ১০ বছর ধরে বাড়ির উঠানে ছেলে প্রশান্তকে লোহার শিকলে দিয়ে বেঁধে তালাচাবি দিয়ে ভিক্ষে করতে চলে যান মা ছবি পূজারী।
সকালে ছেলের খাওয়াদাওয়া সেরে ছেলেকে এভাবে শিকল দিয়ে বেঁধে বাড়ি বাড়ি ভিক্ষে করতে বেরিয়ে পড়ে মা। আর বাড়ির উঠানে দিনভর শিকল বাঁধা অবস্থায় থাকে ছেলে প্রশান্ত। শৌচকর্ম থেকে যাবতীয় উঠানেই বাঁধা অবস্থায়। সেখানেই পড়ে থাকে ছেলে প্রশান্ত। ভিক্ষে সেরে বাড়ি ফিরে তারপর ছেলের দিকে নজর দেওয়ার সময় পান অসহায় মা ছবি পূজারী। ছবি দেবী থেকে তাঁর প্রতিবেশীদের কথায়,মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় প্রশান্তর ধারেকাছে কেউ যায়না। আর তাঁদের সরকারি সাহায্য বলতে রেশনটুকু। ভগ্নপ্রায় বাড়িতে এভাবেই দিন কাটছে মা ছেলের।
রাজনৈতিক নেতা থেকে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও ছেলের চিকিৎসায় সরকারি সহযোগীতার কোনও আশ্বাস মিলেনি বলে অভিযোগ। এখন ভিক্ষের উপার্জন থেকে ছেলের চিকিৎসার ওষুধ থেকে খাবার সবই জোগাড় করতে হয় মা ছবি পূজারীকে। মাথার উপর ভাঙাচোরা একচিলতে বাড়ি তার উপর ছেলের এমন অবস্থা এ বয়সে অদম্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে স্বামী হারা মানসিক ভারসাম্যহীন সন্তানের মা ছবি পূজারী। কষ্ট হলেও এভাবেই শিকল বন্দী করে রাখতে হয় ছেলেকে কারণ কখন কোথায় চলে যাবে বা গ্রামেই কারও সঙ্গে যদি কোনও অঘটন ঘটিয়ে ফেলে এই দুঃশ্চিন্তায় তাড়া করে মা ছবি পূজারীকে।
সরকারি আর্থিক সাহায্য মিললে এখনও ছেলে হয়তো সুস্থ হয়ে উঠতে পারে এমনই আশায় রয়েছে ভিক্ষুক মা ছবিদেবী। দীর্ঘ ১০ বছর শিকলবন্দী বাড়িতে পড়ে ছেলে এবং সহায়সম্বলহীন মা ভিক্ষে করে ছেলের ও নিজের দিন গুজরান করছে আর এই ঘটনা নিয়ে নির্বাক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে প্রশাসন উঠছে প্রশ্ন। যদিও কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে না চাইলেও ঘটনা জানার পরই ওই পরিবারের জন্য সমস্ত রকম সহযোগিতার আশ্বাস স্থানীয় ব্লক আধিকারিকের।