R G Kar News: 'এই কথাগুলো বলার জন্য...', মনোবিদকে কী জানিয়ে দিয়েছিলেন অভয়া ? সামনে এল বিস্ফোরক তথ্য...
R G Kar Case: ২০২৪-এর ৯ অগাস্ট আর জি কর মেডিক্যালে তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়। অভিযোগ, টানা ৩৬ ঘণ্টা ডিউটি করে বিশ্রাম নিতে গেছিলেন অভয়া। তখনই ঘটে যায় সেই বীভৎস ঘটনা!

সন্দীপ সরকার, কলকাতা : আর জি কর মেডিক্যালে অভয়ার ধর্ষণ-খুন নিয়ে সব প্রশ্নের উত্তর কি মিলেছে ? সব রহস্যের কিনারা কি হয়েছে ? সাত মাস পরও এই প্রশ্নটা বিভিন্ন মহলে রয়েই গেছে। তার মধ্য়েই এবার এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কার্যত বোমা ফাটালেন তাঁর মনোবিদ। আরজি কর-কাণ্ডে চিকিৎসক, নার্সরা যখন রাস্তায় নেমে প্রশ্ন তুলছেন, তখন এবিপি আনন্দকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে একের পর এক বিস্ফোরক দাবি করলেন অভয়ার মনোবিদ মোহিত রণদীপ।
২০২৪-এর ৯ অগাস্ট আর জি কর মেডিক্যালে তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়। অভিযোগ, টানা ৩৬ ঘণ্টা ডিউটি করে বিশ্রাম নিতে গেছিলেন অভয়া। তখনই ঘটে যায় সেই বীভৎস ঘটনা! তার কয়েকমাস আগেই পানিহাটিতে মনোবিদ মোহিত রণদীপের চেম্বারে গেছিলেন অভয়া। মনোবিদের কাছেও এই টানা ডিউটি-র কথা জানিয়েছিলেন তিনি।
চিকিৎসক মোহিত রণদীপ বলেন, "জিজ্ঞেস করি কী সমস্যা, কী করেন আপনি ? জানতে পারি, উনি একজন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট মেডিক্যাল সায়েন্সের। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে রয়েছেন উনি। সমস্যা যেটা বলেন উনি মূলত ঘুমের সমস্যা। অর্থাৎ ঘুম রয়েছে প্রবলভাবে। ঘুমোতে চাইছেন তিনি। কিন্তু ঘুমোনোর সুযোগ পাচ্ছেন না। টানা তাঁকে প্রায় ৩৬ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয়। তার মধ্যে খানিকটা সময় উনি ঘুমোন। এটার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে তাঁকে। তার ফলে তাঁর শরীরে মনে একটা প্রভাব পড়ছে।"
মনোবিদের দাবি, টানা ডিউটি, তার ফলে পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব...চূড়ান্ত মানসিক চাপ--সবমিলিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন তরুণী চিকিৎসক। কিন্তু, এত ঘণ্টা ধরে তাঁকে ডিউটি করতে হচ্ছিল কেন ? মনোবিদের কাছে কী জানিয়েছিলেন অভয়া ? এবিপি আনন্দকে দেওয়া EXCLUSIVE সাক্ষাৎকারে তা নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য় সামনে এনেছেন মনোবিদ মোহিত রণদীপ। তিনি বলেন, "জিজ্ঞেস করেছি যে টানা ৩৬ ঘণ্টা, এটা কেন? এটা কি শুধুই আপনার সঙ্গেই, না ওখানে যাঁরা রয়েছেন সবার সঙ্গেই। তার উত্তরে তিনি বলেছিলেন, আমার মতো যাঁরা রয়েছেন তাঁদের সবাইকে নয়। কিন্তু কাউকে কাউকে এটার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। আমি বললাম কেন, এটা কী কারণ ? তখন উনি বলেছিলেন যে কারও কারওকে কর্তৃপক্ষের পছন্দ নয়। অপছন্দের। সেকারণে। কী কারণে সেটা, অপছন্দের কারণটাই বা কী ? তখন ওঁর বক্তব্য ছিল, আমরা অনেক কথা বলে ফেলি। যেগুলো বলে না অনেকে। কী বলে ফেলেন ? তখন উনি বলেছিলেন, ওখানে অনেক রকমের সমস্যা আছে। যেগুলো অভ্যন্তরীণ সমস্যা। ভিতরের সমস্যা। সেটা চিকিৎসা সংক্রান্ত, ওষুধ নিয়ে। ওষুধের জন্য। ওষুধ যাঁরা অন্যান্য যে চিকিৎসা সামগ্রী ব্যবহার হয়, সেগুলোর মান নিয়ে আমাদের প্রশ্ন থাকে। তার ফলে আমরা খারাপ হয়ে যাই। এই কথাগুলো বলার জন্য আমাদের অনেক রকম সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।"
এই সমস্যা যখন চলছে, তখন কর্তৃপক্ষকে কেন জানালেন না তরুণী চিকিৎসক ? মনোবিদ জানিয়েছেন, এই প্রশ্নের উত্তরেই তিনি অভয়ার মুখে প্রথমবার শোনেন সন্দীপ ঘোষের কথা। মনোবিদ বলেন, "জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, এটা আপনারা যাঁরা ওপরতলায় রয়েছেন, যেমন ধরুন সুপার, তাঁদের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন? তখন উনি বললেন যে, আমাদের সুপারিনটেনডেন্ট নয়। আমাদের প্রিন্সিপাল। তখন জিজ্ঞেস করেছি, কী নাম প্রিন্সিপালের ? তখন উনি বলেছিলেন সন্দীপ ঘোষ। আমি বললাম তাঁকে বলেন না কেন ? তো তাঁর বক্তব্য হচ্ছে তিনিও তো এই...পুরো বিষয়টা তিনি জানেন এবং তিনিও রয়েছেন বলেই আমার মনে হয়।"
মনোবিদের এই বিস্ফোরক দাবির প্রেক্ষিতে, চাঞ্চল্য়কর অভিযোগ করেছেন অভয়ার বাবাও। নিহত চিকিৎসকের বাবা বলেন, "দিন ১৫ আগে একটা রোগী ওষুধের রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ায় একটা রোগী মারা গেছিল। সেটা নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ড হয়েছিল। আমার মেয়ে ওই মেডিসিনটা দিতে বারণ করেছিল। কিন্তু সুমিত রায় তপাদার বারবার ওই রোগীকে ওই ওষুধ ব্যবহার করতে বাধ্য করে। ওই রোগী মারা যায়। সেই দায়টা আমার মেয়ের ওপরে এসে বর্তায়। মেডিক্যাল বোর্ডের সামনে আমার মেয়েকে ওই ওষুধ সম্পর্কে বলতে হয়। এটাই একটা মেন কারণ আমার মেয়েকে হত্যা করার। সিবিআইকে বহুবার বলেছি। ওরা দেখার চেষ্টা করছে না।"
জুন বা জুলাই মাসে মনোবিদের কাছে গেছিলেন নিহত চিকিৎসক। তারপর ৯ অগাস্ট সামনে আসে আর জি কর-কাণ্ড। প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে এই মনোবিদ বুঝতে পারেন, অভয়াই সেই চিকিৎসক, যিনি তাঁর কাছে এসেছিলেন। মনোবিদ বলেন, খুব চেনা লাগছে। হাসিটা বিশেষ করে। কিন্তু গায়ের যে রং, সেটা মিলছে না। তা একটা সংশয়ের। কোথায় দেখেছি সেটা মেলাতে পারিনি। পরে এই ঘটনাগুলো যখন আমি পড়ছি, তখন আমার মনে পড়ছে এটা হতেই পারে যে ছবি তোলার সময় হয়ত এডিট করা হয়েছে। গায়ের রং হয়তো বদলে গেছে। এটা হতে পারে। আমি পুরোপুরি নিশ্চিত হই। ঘটনা পরম্পরা সব আমার মনে পড়তে থাকে। আমি নিশ্চিত হই যে ইনি তিনিই।"
এ প্রসঙ্গে নিহত চিকিৎসকের বাবা বলেন, "এটা আমাদের সঙ্গে একদিন দেখা হয়েছিল এর মধ্যে। কাউন্সেলিংয়ের ব্যাপারটা মেয়ে আমাদের কোনওদিনও বলেনি। কিন্তু আমরা মেয়ের যে ডিপার্টমেন্টে সমস্যাটা জানতাম আমরা"
এই পরিস্থিতিতে যদি তদন্তের প্রয়োজনে তাঁকে দরকার হয়? যদি সিবিআই তাঁকে ডাকে ? তিনি কী যাবেন? মোহিত রণদীপের উত্তর, তিনি (নিহত চিকিৎসকের বাবা) আমাকে অনুরোধ করেন, যদি আপনাকে অনুরোধ করি, আদালতে বলার জন্য, যদি মনে করেন আমাদের আইনজীবী, আপনি আসবেন? আমি বলি যে আমি যাব।"
এবিপি আনন্দর প্রতিনিধির তরফে প্রশ্ন করা হয়, যদি আপনার এই বক্তব্য আদালতের সামনে রাখা বা তদন্তের সামনে রাখা হয় কী করবেন?
উত্তরে মনোবিদ জানিয়ে দেন, "আমি যাব। যদি প্রয়োজন হয় নিশ্চয় যাব। যদি আমার এই অভিজ্ঞতা এই কেসের ক্ষেত্রে কোনওভাবে সুরাহা করতে সাহায্য করে আমি নিশ্চয়ই যাব। "
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
